গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য: আলী রীয়াজ
Published: 29th, April 2025 GMT
গণতান্ত্রিক দলগুলোর ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য। এ মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, অনেক বিষয়ে ঐকমত্য আছে। বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন মত দেখতে পাই, সেগুলো আলোচনার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হব। গণতান্ত্রিক সমাজ অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন মতের সমাজ। আমরা সকলেই এক ভাষায় কথা বলব না। তবে আমাদের লক্ষ্য এক। সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে আমরা কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পারব।
সংলাপের অংশ নেওয়া সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের কাছে আমাদের অঙ্গীকার ও দায় হচ্ছে, যেন সুযোগকে হাতছাড়া না করি। আমরা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্যের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যে গণতন্ত্রের সংগ্রাম, বিশেষ করে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সমস্ত রকম সম্ভাবনাকে প্রায় তিরোহিত করে দিয়েছিল। যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো লড়াই করেছে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি অন্যতম অংশীদার থেকেছে। সেই প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া কমিশনের লক্ষ্য।
আলী রীয়াজ বলেন, সকলে মিলে আমরা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই। এটা কেবল ঐকমত্য কমিশনের আকাঙ্খার বিষয় নয়, এটি কেবল সরকারের বিষয় নয়। আজকে আমরা যে কথা বলতে পারছি, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র বিনির্মাণে সকলে মিলে, সকলে একত্রে বসে কথা বলতে পারছি। পথ খুঁজবার চেষ্টা করছি। সেটা সম্ভব হয়েছে কমপক্ষে ১৪ শ’ মানুষের রক্তপাত ও প্রাণনাশের মধ্য দিয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল র য় জ গণত ন ত র ক র লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত হলেও শর্ত নিয়ে চলছে আলোচনা
সংঘাতপূর্ণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল। জাতিসংঘের অনুরোধে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কোন শর্তে রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর দেবে বাংলাদেশ, তা নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরের পর সরকার রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন জাতিসংঘের সঙ্গে শর্ত চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা রাখাইনের জন্য করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এমন করিডর চালুর সিদ্ধান্তের আগে এ বিষয়ে রাখাইনের বিবদমান পক্ষগুলোর ঐকমত্য থাকা জরুরি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য না হলে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তাঝুঁকি। ফলে এমন একটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলসহ দেশের অভ্যন্তরে আলোচনা অপরিহার্য।
প্রসঙ্গত, মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে গত রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে জানায়, রাখাইনের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে রাজ্যটিতে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা না গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত বাকি জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় করিডর করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে জাতিসংঘ।
আরও পড়ুনদেশের স্বার্থেই আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না: তৌহিদ হোসেন২৭ এপ্রিল ২০২৫গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, রাখাইনে পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের আয়ের কোনো উৎস নেই, ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি হয়েছে, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ অথবা এপ্রিল মাসের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ করিডরটিকে মানবিক ক্ষেত্রে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করলেও করিডরটি ঝুঁকিপূর্ণ। আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে সব সরবরাহ আটকে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এখন বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলোকে দখলে নেবে, তার নিশ্চয়তা ঢাকার কাছে নেই।
আরও পড়ুনরাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের২২ ঘণ্টা আগেএ অঞ্চল বিশ্বে মাদক, অবৈধ অস্ত্র পাচারসহ নানা আন্তসীমান্ত অপরাধের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। করিডর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার ‘অস্বীকৃত’ কারও সঙ্গে কোনো ধরনের দর-কষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে । সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তাঝুঁকি তো রয়েছেই। মানবিক করিডর পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশেও সম্ভাবনা খোঁজা উচিত জাতিসংঘের।
আরও পড়ুনরাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা: মির্জা ফখরুল২ ঘণ্টা আগে