চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ইলেকট্রনিক খাতের দেশীয় জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ওয়ালটনের ব্যবসা বেড়েছে ৩১২ কোটি টাকা বা সোয়া ৭ শতাংশের বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।

ব্যবসা বাড়লেও ওয়ালটনের মুনাফা কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ওয়ালটনের মুনাফা কমেছে ৬৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি।

গত রোববার ওয়ালটনের পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোম্পানিটির মুনাফার তথ্য গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের বছরের চেয়ে ব্যবসা বা আয় বৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে মূলত দুই কারণে। প্রথমত, কোম্পানিটির উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকঋণের সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়মূল্যের কারণে আর্থিক খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ১১৪ কোটি টাকা বা ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ালটনের ব্যাংক সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত আর্থিক খরচের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এই খাতে খরচ বেড়েছে ৫৮ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশের বেশি।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বা আয় ৩১২ কোটি টাকা বাড়লেও তার বিপরীতে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে এই খরচ বেড়েছে ২১৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে ওয়ালটনের উৎপাদন খরচ ছিল ২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছর ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।

এদিকে ৯ মাসের সমন্বিত আয়-ব্যয়ের হিসাবের পাশাপাশি সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে ওয়ালটন। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি ২ হাজার ৫১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তার বিপরীতে মুনাফা করেছে ৩৯২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। তার বিপরীতে মুনাফা করেছিল ৪২২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩০ কোটি টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র একই সময় ট ক র ব যবস র ব পর ত খরচ ব ড় পর ম ণ উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থবছরের আট মাসে অর্ধেক বাজেটও বাস্তবায়ন হয়নি

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে বাজেটের অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অর্থবছরের মূল বাজেট বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, সংশোধিত বাজেটও অর্ধেক বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার কিছুটা বেড়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই ’২৪-ফেব্রুয়ারি ’২৫) বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের চেয়ে কম। আলোচ্য সময়ে মূল বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রায় ৪৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল মূল বাজেটের প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রয় ৪০ শতাংশ। সে হিসাবে উভয় ক্ষেত্রেই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হার প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, আট মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ২ কোটি টাকা। এর আগে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

এদিকে, গত অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ও সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ৭৮৫ কোটি টাকা এবং মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়ায় ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরের ৮ মাসে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, অর্থবছরের ৮ মাসে মোট পরিচালন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ২ কোটি টাকা। মূল বাজেটে এর আকার ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

এদিকে, আলোচ্য সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে সংশোধিত বাজেটের ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি অর্থছরের মূল বাজেটে এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করে এর আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আট মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি-তে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরর আট মাসে এনবিআর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতি এক ধরনের স্থবিরতা চলে এসেছিল। এটি নভেম্বর মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যার জন্য এডিপি বাস্তবায়নসহ বাজেট বাস্তবায়নে একটি নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বছর শেষে সংশোধিত বাজেটের বড়জোর ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, “রাজস্ব আদায়ের হারও ভালো না, অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে।”

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ
  • ৩ মাসে ১৪৫ কোটি টাকা মুনাফা পদ্মা অয়েলের
  • প্রথম প্রান্তিকে লোকসানের ধারায় সিঙ্গার, বেড়েছে অনেকটা
  • অর্থবছরের আট মাসে অর্ধেক বাজেটও বাস্তবায়ন হয়নি
  • শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে
  • ৯ মাসে রপ্তানি শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২০০০০%