Samakal:
2025-04-29@09:31:28 GMT

মোহামেডান আজ ‘হৃদয়’হীন

Published: 29th, April 2025 GMT

মোহামেডান আজ ‘হৃদয়’হীন

কত নাটক, কূটকৌশল, এমনকি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এক বছরের জন্য শাস্তি স্থগিত করে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন তাওহিদ হৃদয়। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! যে ম্যাচে তাঁকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, সেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আজ হৃদয়কে পাচ্ছে না মোহামেডান। স্বাভাবিকভাবে তাঁর অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে আবাহনী শিবিরে। আজ সকাল ৯টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।

১৫ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে আবাহনী। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পেছনে মোহামেডান। আজ জিতলে ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে আবাহনী। আর মোহামেডান জিতলে সমান হবে দুই দলের পয়েন্ট। লিগের বাইলজ অনুযায়ী তখন মুখোমুখি লড়াইয়ের (হেড টু হেড) ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিরোপা জিতবে মোহামেডান। 

প্রথম পর্বে মোহামেডান ৩৯ রানে জিতেছিল। কাজেই আজ যে দল জিতবে, তারাই লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে। অলিখিত এই ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আবাহনীর কোচ হান্নান সরকার। গতকাল মিরপুরে প্রস্তুতির ফাঁকে জাতীয় দলের সাবেক এ নির্বাচক বলেন, ‘শেষ ম্যাচ ঘিরে আলাদা একটা সিনারিও তৈরি হয়েছে, অনেকটা ফাইনালে পরিণত হয়েছে। অবশ্যই আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লিগ শুরু করেছিলাম, এখন সেই লক্ষ্যের শেষ ধাপে। খেলোয়াড়রাও রোমাঞ্চিত কালকের দিনটা কখন আসবে, কখন খেলা শুরু হবে এবং দিনের শেষে সাড়ে ৪টা-৫টার দিকে ট্রফিটা হাতে নেবে।’

মোহামেডান অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়ের ইস্যু নিয়েও কথা বলেছেন হান্নান সরকার, ‘হৃদয় একজন আগ্রাসী ক্রিকেটার। সে সবসময় জিততে চায়, চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। তাঁর মানসিকতা অনেক আগে থেকেই আমি জানি। আমার সঙ্গে হৃদয়ের একটা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।’ 

তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথম নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তবে পরের ঘটনায় আমি আপসেট হয়েছি।’ 

হৃদয় না থাকায় ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, রনি তালুকদার, আনিসুল ইসলাম ইমনকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। মোহামেডানের বোলিং বেশ শক্তিশালী। এবাদত ও সাইফউদ্দিনের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান যোগ দেওয়ার পর মোহামেডানের পেস আক্রমণ লিগের অন্যতম সেরা হয়ে গেছে। নাসুম আহমেদ ও নাবিল সামাদের স্পিন আক্রমণও মন্দ হয়। ব্যাটিংয়ে আবাহনী কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে। দুই তরুণ টপ অর্ডার পারভেজ হোসেন ইমন ও জিশান আলমের সঙ্গে আছেন দুই অভিজ্ঞ মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন। সে তুলনায় আবাহনীর বোলিং কিছুটা গড়পড়তা।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা

চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।

জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।

কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।

জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।

চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ