চিকিৎসক মাত্র ৩ জন, অন্তঃসত্ত্বাদের সেবায় নার্স, দাঁতের চিকিৎসায় টেকনোলজিস্ট
Published: 29th, April 2025 GMT
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের কিশোরী ইয়াসমিন আখতার (১৫) পেটে ব্যথা নিয়ে রোববার দুপুরে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারীরা রোগীর শয্যায় তাঁকে শুইয়ে রাখেন। কিছু সময় পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এভাবে প্রতিদিন তিনজন চিকিৎসক, চার থেকে পাঁচজন স্বাস্থ্য সহকারী ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে। এ উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস।
হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া গেল চিকিৎসক আলমগীর হোসেনকে। তিনি হাসপাতালের ১০ নম্বর কক্ষে বসেন। এ কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা গেল বেশি। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীর চাপ একটু বেশি। এত সব রোগী সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া বাহুবল দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা। হঠাৎ ঝগড়া করে একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে লোকজন চলে আসেন। যতটুকু সম্ভব এর মধ্যেই রোগীদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’ তিনি জানান, জরুরি বিভাগের দায়িত্ব, বহির্বিভাগের দায়িত্ব, আবাসিক বিভাগের দায়িত্বসহ মোট ৫টি পদে তাঁকে একাই কাজ করতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেষণে তাঁকে এখানে পাঠানো হয়েছে।
শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় রোববার অন্যান্য দিনের তুলনায় বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ অনেক বেশি ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের দীর্ঘ সারি। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা রোগের ধরন অনুযায়ী রোগীদের বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
জরুরি বিভাগ সামলাচ্ছেন একজন চিকিৎসক এবং দুই থেকে তিনজন স্বাস্থ্য সহকারী। তাঁরা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসকের সংকটের কারণে কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ১৭টি পদের মধ্যে ১৪টিই শূন্য। শিশুদের জন্য জুনিয়র কনসালট্যান্ট আছেন মাত্র একজন। গাইনি বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় একজন জ্যেষ্ঠ নার্স দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে রাবি শিক্ষকের মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার লঙ্ঘন: আসক
বাঙালি মুসলমান নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের ফেসবুক পোস্টের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
আজ বৃহস্পতিবার আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজসংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দিয়েছেন। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলা ও বাঙালি নারীজাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি; তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, বেগম রোকেয়ার শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলন ধর্ম, বর্ণ, জাতিনির্বিশেষে বাঙালি নারীদের পরাধীনতা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে।
বিবৃতিতে আসক বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা ও প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়, যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে বলতে চায়, বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে আমাদের সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।
আরও পড়ুনবেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক০৯ ডিসেম্বর ২০২৫