পরিচয় দেন ব্যবসায়ী বলে। আয়কর নথিতে প্রতি অর্থবছরে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয়ের হিসাব পাওয়া যায়। অথচ তাঁর ২৯টি ব্যাংক হিসাবে সোয়া ২৩ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য সামনে এসেছে। তাঁর গৃহিণী স্ত্রীর ১৬ ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে বড় অঙ্কের টাকা, প্রায় ১১ কোটি। ঢাকায় পাঁচতলা একটি বাড়ি রয়েছে এই দম্পতির, আছে ফ্ল্যাট।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে বিদেশ থেকে মাদকের কাঁচামাল এনে বিক্রি করেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার জুনায়েদ ইবনে সিদ্দিকী। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরার ব্যাংক হিসাবে মাদক বেচার টাকার বড় একটি অংশ ঢুকেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় জুনায়েদের সহযোগী হিসেবে আবুল কালাম আজাদ, ফারহানা আফ্রিন, দীন ইসলাম, কুদ্দুস মিয়া, মামুন, রতন কুমার মজুমদার ও নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ফারহানা, দীন ইসলাম ও নজরুল—এই তিনজন জুনায়েদের আত্মীয়।

জুনায়েদের আয়কর নথির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫–১৬, ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০ অর্থবছরে তাঁর আয় ছিল ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ অনুসন্ধানে তাঁর ২৩টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য সামনে এসেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

চার বছরের অনুসন্ধান শেষে জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীদের মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ অর্জনের তথ্য সামনে এসেছে। শুরুটা হয়েছিল ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন (ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল) জব্দ করার ঘটনায়। ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুরুতে এজাহারে জুনায়েদের নাম ছিল না। পরে পিবিআইয়ের তদন্তে তাঁর নাম উঠে আসে। সেই সূত্র ধরে বিস্তারিত তদন্তে জুনায়েদের বিপুল অর্থসম্পদের তথ্য পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

জুনায়েদের স্ত্রী জোহরার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য জানা গেছে। ওই সব ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে ৪ কোটি টাকার।

সম্প্রতি বিমানবন্দর থানার ওই মামলায় জুনায়েদ, আজাদ, নজরুলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। এ মামলায় জুনায়েদ ও আজাদসহ সাতজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। জুনায়েদের স্ত্রীসহ তিনজন পলাতক।

জুনায়েদদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো.

আলী আসলাম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমদানি–রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীরা মাদক কেনাবেচায় জড়িত। চার বছর অনুসন্ধান শেষে জুনায়েদ, তাঁর স্ত্রী ও সহযোগীদের বাড়ি, ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর মামলা করা হয়েছে।

শুরুটা হয়েছিল ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন (ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল) জব্দ করার ঘটনায়। ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুরুতে এজাহারে জুনায়েদের নাম ছিল না। পরে পিবিআইয়ের তদন্তে তাঁর নাম উঠে আসে।ব্যাংকে ২৩ কোটি টাকা, পাঁচতলা বাড়ি

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীরা অবৈধ পথে মাদকদ্রব্যের কাঁচামাল বিদেশ থেকে দেশে এনে বিক্রি করার পাশাপাশি মাদকদ্রব্য বিদেশে পাচার করেন।

জুনায়েদের দাবি, তিনি টেক্সটাইল ও রাসায়নিক আমদানি-রপ্তানি করেন। তবে অধিদপ্তরের অনুসন্ধান বলছে, পুরান ঢাকায় থাকা তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আইডিএস ট্রেডার্সের মাধ্যমে বিদেশ থেকে গোপনে মাদকদ্রব্যের কাঁচামাল আনেন তিনি।

জুনায়েদের আয়কর নথির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫–১৬, ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০ অর্থবছরে তাঁর আয় ছিল ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ অনুসন্ধানে তাঁর ২৩টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য সামনে এসেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করেছেন।

মামলার এজাহারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলেছে, মাদক ব্যবসার মাধ্যমে আয় করা টাকা দিয়ে জুনায়েদ নামে–বেনামে বাড়ি–গাড়ি কিনেছেন। এর মধ্যে পাঁচতলা বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী এলাকা। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জুনায়েদের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল একজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

অবশ্য আদালতে জমা দেওয়া পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জুনায়েদ দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত।

দীর্ঘদিন থেকে আমদানি–রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীরা মাদক কেনাবেচায় জড়িত। মো. আলী আসলাম হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গৃহিণী স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি টাকা

জুনায়েদের স্ত্রী জোহরার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য জানা গেছে। ওই সব ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে ৪ কোটি টাকার। এ ছাড়া জুনায়েদের আত্মীয় ফারহানার ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে অধিদপ্তর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, জুনায়েদের অন্যতম সহযোগী আবুল কালাম আজাদ। তাঁর ছয়টি ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া সাভারে তাঁর একটি বাড়ির খোঁজ পেয়েছে অধিদপ্তর।

জুনায়েদের স্ত্রী জোহরার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য জানা গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই জুনায়েদসহ অন্যদের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ২৩ ক ট তদন ত আমদ ন ঘটন য় সহয গ অথচ ত র সহয

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা পলিটেকনিকে তালা ঝুলিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা

ছয় দফা দাবি আদায়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তালা ঝুলিয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এ কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তালা ঝোলানোর পর ক্যাম্পাসের মেধা শহীদ চত্বরে ব্রিফ করেন আন্দোলনকারীদের নেতা মাশফিক ইসলাম দেওয়ান।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি করে দিলেও কমিটির একটিমাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে; আমরা কোনো প্রকার সফলতা দেখছি না। আমরা কোনো প্রকার তথ্য পাচ্ছি না, ভবিষ্যতে আমাদের দাবিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে- সে বিষয়ে। দ্রুত থেকে দ্রুত সময়ে কমিটি কাজ করছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আমরা একযোগে সাবধান কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাটডাউন থাকবে। প্রশাসনিক ভবন একাডেমিক ভবন তালাবদ্ধ থাকবে, ক্যাম্পাসে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

এর আগে রোববার ও সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সব জেলার ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশ (আইডিইবি) কার্যালয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষার্থীদের ৬ দাবি হলো–
১। জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

২। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।

৩। উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।

৪। কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব/নিয়োগ দেওয়া।

৫। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।

৬। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ