‘নতুন শুরুর আশায়’ মাগুরা টেক্সটাইল মিলসের পুরোনা মেশিন বিক্রি
Published: 29th, April 2025 GMT
মাগুরা টেক্সটাইল মিলসের পুরোনো মেশিনপত্র দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়া মাগুরা টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এটি করা হচ্ছে বলে দাবি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি)। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি) মাধ্যমে কারখানাটি পুনরায় চালুর চেষ্টা করছে বিটিএমসি।
বিটিএমসির কর্মকর্তা ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বর্তমানে মিলে যেসব সরঞ্জাম আছে, সেগুলো অনেক পুরোনো মডেলের। প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো। এতে উৎপাদিত সুতার বাজারে চাহিদা কম। পুরোনো মেশিনের বিদ্যুৎ খরচও বেশি। এ কারণে মিলটি বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে তাই পুরোনো মেশিন ও সরঞ্জাম দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার মাগুরা টেক্সটাইল মিলসে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো সরঞ্জাম ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বিটিএমসি ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের স্ক্র্যাপ মেশিনারিজ বিক্রির জন্য গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় দরপত্র ডাকা হয়। ভ্যাট, আয়করসহ ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘মেক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সুযোগটি পায়। সে অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে মেশিনারিজ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কারখানাটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ বছরের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে চায় সরকার। কারখানা স্থাপন ও সংস্কারের জন্য সময় পাবেন বিনিয়োগকারী।মাগুরা জেলার একমাত্র এই ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় মাগুরা-যশোর সড়কের পাশে ১৬ দশমিক ১৭ একর জায়গার ওপর কারখানাটি স্থাপিত হয়। কারখানাটি করতে ব্যয় হয়েছিল ৫১ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। শুরুতে কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলে জনবল ছিলেন ৯৮৩। কারখানাটি ১৯৮৫ সালে উৎপাদনে যায়। বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন সুতা তৈরির কারখানাটি শুরুতে ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে সরকারি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে মিলটি লোকসানে পড়ে। অব্যাহত লোকসানের মুখে ১৯৯৯ সালে কারখানাটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তখন শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হয়। এরপরও ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে কোনোরকমে কারখানাটি চালু ছিল।
সেটাও সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৯ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালে কারখানাটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয় বিটিএমসি। তারা দরপত্র ডাকে। দরপত্রে অংশ নিয়ে মেসার্স আলী ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। তবে দুই বছরের চুক্তি শেষের আগেই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় ১৬ দশমিক ১৭ একর জায়গার ওপর কারখানাটি স্থাপিত হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ট এমস দরপত র বছর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যালয়ের ভবন বানাতে পাহাড়ে কোপ, দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে নগরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় চত্বরে নতুন ভবন নির্মাণের নামে প্রায় দেড় মাস ধরে পাহাড় কাটা হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। এগুলো পরিষ্কার করে জমি সমতল করার কাজও চলছে।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল আমিন ভবন নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা লিখিতভাবে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুসারে পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। তবু বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজের আড়ালে পাহাড় কাটা চলতে থাকে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামী পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে, তাই ভবন নির্মাণ করা দরকার। পাহাড়টি সামান্য কাটার কথা ছিল। কিন্তু বেশি কাটা হয়েছে। তবে তিন সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।মো. কামরুল আহসান, নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরপরিবেশ অধিদপ্তর ২ ডিসেম্বর গিয়ে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর কার্যালয়ের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় ও গাছ কেটে ভবন তৈরির কোনো সুযোগ নেই। আইন অমান্য করে পাহাড় কাটা হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে তিনি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এ এস এম এমদাদুল কবীরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ এস এম এমদাদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি ঘটে থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। শিগগিরই বিদ্যালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন। কতটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে, কেন কাটা হয়েছে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।
দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত
মহসিন স্কুলের ভবন নির্মাণ চলছে ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পে সারা দেশে ৩২৩টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের আরও চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু মহসিন স্কুলে অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠায় এ প্রকল্পের দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি বলছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৮০টি। কিন্তু অধিকাংশ মামলাই অর্থদণ্ডে নিষ্পত্তি হয়েছে।পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২ ডিসেম্বর দুপুরে পাঁচ পরিবেশকর্মী ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামীর কাছে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চান। তাঁরা প্রধান শিক্ষককে বলেন, পাহাড় কেটে ভবন হতে পারে না।
পরিবেশকর্মী রিতু পারভী বলেন, ‘গাছ কাটার খবর শুনে গিয়ে দেখি পাহাড়ও কাটা হচ্ছে। আরও কাটার প্রস্তুতি ছিল। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের আর কোনো উদাহরণ তৈরি হতে দেব না।’
পাহাড়ের সঙ্গে কাটা হয়েছে কয়েকটি গাছ। সম্প্রতি তোলা