বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে দেশ। বৃষ্টিশূন্যতা ও বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় অধিক গরম লাগছে। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলেও ভারী বর্ষণের দেখা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ভারী বর্ষণ ছাড়া উত্তপ্ত ধরণি শীতল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তীব্র গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনভর সূর্যের প্রখর তাপ আর রাতে গুমোট গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সবার। এক পশলা বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো আকাশে চেয়ে আছে প্রাণিকুল। তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস থাকলেও থেমে নেই যাপিত জীবনের কর্মতৎপরতা।
কঠিন খরতাপের পাশাপাশি বাঙালির জীবনে আনন্দের সূচনা হয় এ বৈশাখে। প্রকৃতি সঞ্চারিত হয় জীববৈচিত্র্যের সমাহারে। জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো রূপ কাব্যময় হয়ে ওঠে। শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে। জোয়ার আসে। শুধু নদীতে নয়, আসে মানুষের মনেও। প্রেমিক মন ধাবিত হয় মন হরণের আঙিনায়। কাঁচা আমের ঘ্রাণে মাতায় মন। দুরন্ত কিশোর দলের ছুটে বেড়ানো যেন প্রকৃতির আবাহন। বৈশাখ তাই কবিতার অসীম ক্ষেত্র। কখনও খরতাপ, কখনও বৃষ্টির হুংকার, আকাশজুড়ে মেঘের আনাগোনা আর বাতাসের খেলা প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্য সবই সাহিত্যের অনুষঙ্গ। প্রকৃতির সূচনা, প্রকৃতির রোষ এবং প্রকৃতির দান কাব্যের ক্যানভাস।
জীবনে নতুন দিনের গল্পের সূচনা করে বৈশাখ। প্রাণের স্পন্দন জাগায়। বর্ণিল আয়োজনে কবিতায় ঠাঁই পায় প্রেম, গান, সুর, উদ্দামতা আর ধেয়ে আসা কালবৈশাখী। কালবৈশাখী মানে কেবল ধ্বংস নয়, জীর্ণতার অবসান, দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্তির গান। ঝড়ের প্রলয়ংকরী রূপ, অশুভ বিনাশ। বসন্ত বিদায়ে প্রকৃতি রাজ করে বৈশাখে। কবিতায় ফুটে ওঠে বৈশাখের নান্দনিক রূপ ও প্রকৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতোই যেন বৈশাখ আসে– ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে/পার হয়ে যায় গোরু/পার হয় গাড়ি/দুই ধার উঁচু তার/ঢালু তার পাড়ি।’
রৌদ্রের খরতাপ, ঝড় আবার প্রশান্তির বৃষ্টি। মাঠে মাঠে ফসল, প্রকৃতির রুদ্ররূপ এবং ভয়ংকরের বন্দনা চলে। কাজী নজরুল ইসলাম তাই বলেছেন– ‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ কালবৈশাখী কবিতায় লিখেছেন, ‘বারেবারে যথা কালবৈশাখী ব্যর্থ হল রে পুব-হাওয়ায়/দধীচি-হাড়ের বজ্র-বহ্নি বারেবারে যথা নিভিয়া যায়/কে পাগল সেথা যাস হাঁকি/বৈশাখী কালবৈশাখী!’ বৈশাখ মানে বাংলায় বিভেদ ভুলে একত্র হওয়ার মাস। বৈশাখ মাস ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে এক হয়ে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার মাস।
কবি আল মাহমুদ ‘বোশেখ’ কবিতায় লিখেছেন, সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি/তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহা প্রতাপশালী/গরীব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কি লাভ?/কি সুখ বলো গুঁড়িয়ে দিয়ে চাষির ভিটে? কবিতায় বৈশাখী ঝড়ের যে রুদ্ররূপ সেই রূপের কাছেই মিনতি করা হয়েছে যেন তার প্রতাপের কোপে অসহায়ের ক্ষতি না হয়। কালবৈশাখীর এ তীব্র ভয়ংকর রূপ ছাপিয়ে সমাজকে আলোর পথ ধরে সবাই এগিয়ে যাবে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে– এটাই প্রত্যাশা।
সুহৃদ ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা ছাড়া কাজে সাফল্য আসে না’
রজার হ্যারপ। আমেরিকান সিইও এক্সপার্ট ও আন্তর্জাতিক এই বক্তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
অন্যের দিকে নজর না দিয়ে সবার আগে নিজের ছবি দেখুন আয়নায়। নিজেকে দেখে নিজের দুর্বলতা আগে খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, নিজের ভালো দিকটা সবাই জানে। তাই ভালো দিক এড়িয়ে মন্দে যান। কারণ, মন্দ দিকটা খুঁজে বের করা কঠিন। এটি বের করার পর আপনার কাজের সঙ্গে এমন কাউকে জড়ান, যিনি শুধু আপনার ভালোটা দেখবেন না, আপনার মন্দ দিকটাও আপনার সামনে তুলে ধরবেন সুন্দর করে। শৈল্পিকভাবে!
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন
মন্দ বা খারাপটা বের করার পর এবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে নিন। মানে আপনি কী করতে চাচ্ছেন, কেন করতে চাচ্ছেন? এই কাজ থেকে আপনার আদৌ কোনো লাভ হবে কিনা? হলে সেটির পরিমাণ কত? এর নেতিবাচকতা কী হতে পারে। ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রথমে ছক কেটে সাজিয়ে নিন।
রাখুন অটুট আস্থা
লক্ষ্য স্থিরের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি যে কাজটা করতে যাচ্ছেন সে কাজের প্রতি আপনার আস্থা অটুট রাখা। মানে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা। আপনি যদি আপনার কাজের প্রতি বিশ্বাসভাজন না হন তাহলে আপনার সহকর্মীরা কীভাবে রাখবেন? সুতরাং নিজের কাজের প্রতি নিজে সবার আগে বিশ্বাসী হোন এবং এ কাজটার মাধ্যমে যে সাফল্য আসবে তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এগিয়ে যান। সেই সঙ্গে আপনার কাজের প্রতি মমতা রাখুন, ভালোবাসা রাখুন, শ্রদ্ধা রাখুন। আপনার সহকর্মীরা তাহলে সে কাজে গুরুত্ব দেবে। আপনি হেলাফেলা করার অর্থ হচ্ছে আপনার সহকর্মীরা ধরে নেবেন এ কাজ ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। সুতরাং সাবধান!
ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা
ঝুঁকিহীন কোনো কাজ ভালো হয় না। ঝুঁকি নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা আপনার থাকতে হবে। বুকে রাখতে হবে সাহস। সাহস নিয়ে আস্থার সঙ্গে এগোলে সাফল্য আপনার আসবেই। আর যা করছেন সেটি থেকে সাফল্য আসবে এমন ভাববেন না। যদি না আসে সফলতা তাহলে কী করবেন? সবকিছু গোছগাছ করে থেমে যাবেন? কখনও সেটি করবেন না। বরং বিকল্প একটি রাস্তা খোঁজে ঠিক করে রাখুন। যদি আশানুরূপ না হয় তাহলে যেন চটজলদি সেই বিকল্প রাস্তায় মুভ করতে পারেন। বিখ্যাত মারফির তত্ত্ব। কখনও ভুলে যাবেন না- ‘যদি কোনো কাজে কোনো ভুল ধরা পড়ে, তাহলে বিকল্প রাস্তা অনুসরণ করাই শ্রেয়।’
মাথা খাটান; জোর নয়
কাজ করবেন মাথা খাটিয়ে; জোর করে নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো– সবসময় আনন্দ এবং উপভোগের সঙ্গে কাজ করবেন। কখনও কাজকে বোঝা মনে করবেন না। তাহলে কাজ হয়ে পড়বে কঠিন থেকে কঠিনতর। একটা কথা ভুলে যাবেন না, কাজ করছেন নিজের স্বাচ্ছন্দ্য এবং আনন্দে থাকার জন্য। সুতরাং এমন কিছু কেন করবেন, যেটি করতে অনেক কষ্ট হবে।