বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডায় উৎসবে ভিড়ের ওপর গাড়ি তুলে দিলেন চালক, বহু হতাহতের শঙ্কা
কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ফিলিপিনো উৎসবে জনতার ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময়ে শনিবার রাত ৮টার দিকে ইস্ট ৪১তম অ্যাভিনিউ ও ফ্রেসার স্ট্রিটে এ ঘটনা ঘটে।
ভ্যাঙ্কুভার পুলিশের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ঘাতক চালককে আটক করা হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাঙ্কুভারের মেয়র কেন সিম বলেছেন, ‘লাপু লাপু উৎসবের এ ঘটনায় আমি গভীর মর্মাহত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত আরও তথ্য জানাতে চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ নিশ্চিত করেছে—এই ঘটনায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। এই কঠিন সময়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সবার পাশে আছি। বিশেষ করে ভ্যাঙ্কুভারের ফিলিপিনো সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।’
ঘটনাস্থলের বেশ কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে কানাডার নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংসদ সদস্য ডন ডেভিস ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ হামলা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি টুইটে বলেন, ‘আমি সব ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।’
কী এই লাপু লাপু উৎসব?
লাপু লাপু ডে ব্লক পার্টি একটি স্ট্রিট ফেস্টিভাল। এটি ফিলিপিনো সংস্কৃতি উদযাপন ও লাপু লাপু নামে পরিচিত দাতু লাপু লাপুর স্মরণে আয়োজিত হয়।
দাতু লাপু লাপু ছিলেন ফিলিপাইনের প্রথম জাতীয় বীর। ১৫২১ সালে স্প্যানিশ উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে ম্যাকটান যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
২০২৩ সাল থেকে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ২৭ এপ্রিল দিনটি ‘লাপু লাপু ডে’ হিসেবে স্বীকৃত। উৎসবটি আয়োজিত হয় দক্ষিণ ভ্যাঙ্কুভারের সানসেট এলাকায়।
মূলত জন অলিভার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ইস্ট ৪৯তম অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এলাকায় এবং ফ্রেসার স্ট্রিটের পশ্চিম পাশের পার্কিং লটে লাপু লাপু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।