আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
Published: 28th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ‘এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ওয়ার্ল্ড কাপ’ বা ‘আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা বিশ্বকাপ (ইডব্লিউসি) ২০২৫’–এর উদ্বোধন ও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ড্যাফোডিল প্লাজায় আয়োজিত এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন) বাংলাদেশ।
আয়োজকেরা জানান, উদ্যোক্তা বিশ্বকাপ আয়োজনের লক্ষ্য হচ্ছে—নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা (আইডিয়া) তুলে ধরা, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী ও মেন্টরদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং স্থাপন এবং বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে বিশ্ব পর্যায়ে পরিচিত করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন) বাংলাদেশ এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো.
এ ছাড়া বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান, ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন ও জেন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম হাসান রিপন।
আয়োজকেরা জানান, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ওয়ার্ল্ড কাপ (ইডব্লিউসি) বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্টার্টআপ পিচিং প্রতিযোগিতা। এখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের পুরস্কার ও বিনিয়োগ সুবিধা জয়ের সুযোগ পাবেন।
এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আইডিয়া স্টেজ, আর্লি স্টেজ এবং গ্রোথ স্টেজ—এই তিনটি শ্রেণিতে স্টার্টআপদের নির্বাচন করা হবে।
গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন) বাংলাদেশ এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, উদ্ভাবনই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে। আর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ওয়ার্ল্ড কাপ হলো সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই বিশ্বকাপ বাংলাদেশি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। এখানে উদ্যোক্তারা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী, পরামর্শক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন) বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড, নলেজ ভেইল এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ও উদ্যোক্তাবৃত্তি বিভাগ এই আয়োজনের আয়োজক হিসেবে যুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া মাইক্রোসফট, নিওম ও মনশাতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার প্রতিষ্ঠানের সমর্থন রয়েছে এতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে স্টার্টআপ চর্চা বাড়ানোর আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা বিশ্বকাপে অংশ নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে হবে। অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট র টআপ অন ষ ঠ ন ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘আমরা জমিদার’ বলা সেই কর্মকর্তার পদোন্নতির আবেদন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।
পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) আর ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও তিনি এ নাম লিখতেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারের পর তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে এ পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।
অবশ্য শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়। তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাক পেয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিতে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহাকরী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মতবিনিময় সভা হয়। এ সভায় সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’
সিরাজুল ইসলামের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, ছাত্রদের আবাসিক এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ প্রতিক্রিয়ার পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাঁকে শোকজ করে।
নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যর শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কমিটি হয়। এ কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় কে কে পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার এ সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার করা হয়।
জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়ে ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এ কারণে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকজের জবাব দিয়েছেন। তাঁর দল থেকেও ওই ঘটনার পর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন‘আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেব না,’ বললেন জামায়াত নেতা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫যা বলছে প্রশাসনপদোন্নতির নথিতে দেখা যায়, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতিতে সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তিনি সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি দেওয়া নয়। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।