গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের বৈধতা চায় গণঅধিকার পরিষদ। দলটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, প্রধানমন্ত্রী পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ রাখা ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশে একমত হয়েছে। সুপারিশ করেছে, গঠনের তিন বছর পর নিবন্ধন পাবে রাজনৈতিক দল।
সোমবার সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরে গণঅধিকার। দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সংস্কার কিংবা জুলাই সনদকে ভবিষ্যতে যাতে কেউ চ্যালেঞ্জ বা বাতিল করতে না পারে, সে সিদ্ধান্ত গণভোটে চূড়ান্ত করতে হবে।
দ্রুত নির্বাচনের দাবি করা বিএনপি আগামী সংসদে সংস্কার বাস্তবায়ন চায়। নুরুল হক নুরও সম্প্রতি কয়েকবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। গতকাল সংলাপের পর নুর বলেন, ‘গণভোটের পরে জাতীয় নির্বাচনের আশা করি। যেসব সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, সেগুলো বর্তমান সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন চায় গণঅধিকার। বাকিগুলো নির্বাচিত সরকার এসে করবে।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্বে এনসিসি গঠনের সুপারিশে গণঅধিকার একমত জানিয়ে নুর বলেন, কাউন্সিলের পরিবর্তে পরিষদ নামকরণের প্রস্তাব করেছি।
সুপারিশে বলা আছে, এনসিসি প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ দেবে। গণঅধিকার চায়, নির্বাচনকালীন উপদেষ্টা পরিষদও এনসিসির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হবে। পুলিশপ্রধানের নিয়োগও এনসিসির মাধ্যমে করার সুপারিশ করে গণঅধিকার।
কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে বণ্টন হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, আসন পেতে কমপক্ষে ৩ শতাংশ ভোট পেতে হবে। গণঅধিকার আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে একমত হলেও দলটি প্রস্তাব করেছে ১ শতাংশ ভোট পেলেই আসন পাবে রাজনৈতিক দল। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তত শতাংশ আসন পাবে।
বিএনপি এনসিসি, আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশে একমত নয়। কমিশন এই তিন সুপারিশকে মৌলিক পরিবর্তন বলছে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এই তিন সুপারিশে একমত। একই অবস্থান জানিয়েছে বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গণঅধিকার। একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান হতে পারবেন না– কমিশনের এ সুপারিশেও একমত দলটি। যদিও বিএনপির এ সুপারিশে ঘোর আপত্তি আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নবগঠিত এনসিপির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন গণঅধিকারের নেতারা। যদিও এনসিপির উদ্যোক্তার বড় অংশই একসময় গণঅধিকার নেতাদের সঙ্গে ছিলেন। ২০২১ সালে গঠিত গণঅধিকার সভাপতি নুর বলেছেন, ‘মাসে গড়ে আটটি করে রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে। রাজনৈতিক শৃঙ্খলার জন্য নিবন্ধনের শর্ত বহাল রাখা উচিত। আমরা বলেছি, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে ন্যূনতম তিন বছর সক্রিয় কার্যক্রম চালাতে হবে।’
সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের পরিবর্তে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে গণঅধিকার। সংসদের মেয়াদ চার বছর, প্রার্থী হতে ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর করারও প্রস্তাব দিয়েছে। সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের সুপারিশ করেছে। ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশে একমত নয় গণঅধিকার। দলটি প্রস্তাব করেছে, অর্থবিল এবং আস্থা প্রস্তাব বাদে বাকি সব বিষয়ে এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন।
নুর বলেছেন, আস্থা ভোট দলের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলে এমপি কেনাবেচার নজির উপমহাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে।
গণঅধিকার ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের ১২৭টিতে একমত জানিয়েছে। ১৫টিতে একমত নয়। বাকি ২৩টিতে আংশিক একমত বলে জানিয়েছে। গতকাল আরও আটটি সুপারিশে নতুন করে একমত হয়েছে। সংলাপে সভাপতিত্ব করা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সবার লক্ষ্য জাতীয় সনদ তৈরি, যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত য় গণঅধ ক র স প র শ কর প রস ত ব ত ব কর ন র বল ব এনপ গণভ ট এনস স
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে: জেএসডি
বিদ্যমান ব্যবস্থা সংস্কার না করে নির্বাচন হলে পুরোনো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। একই সঙ্গে দলটি মনে করে জাতীয় সনদ আগামী প্রজন্মের জন্য দলিল হিসেবে কাজ করবে।
আজ রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে শহীদ উদ্দিন বলেন, শাসনব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার অনিবার্য। ফ্যাসিবাদী শাসক ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে মানুষের সব অধিকার হরণ, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠাসহ রাষ্ট্রের সব কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রের সব কাঠামো ভেঙে পড়েছে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ বিদ্যমান ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে এটিকে পুনর্বিন্যাস করা ছাড়া নতুন ক্ষমতায়নের দিকে গেলে পুরোনো ব্যবস্থা ফিরে আসার আশঙ্কা থাকবে।
জাতীয় সনদ তৈরির উদ্যোগকে যৌক্তিক ও কার্যকর মন্তব্য করে শহীদ উদ্দিন বলেন, জাতীয় সনদ তৈরির জন্য যে কাজগুলো হয়েছে; তা আজ, আগামীকাল ও প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। আমরা যেটুকু ঐকমত্য তৈরি করব, সেটি হবেই। কিন্তু আগামী প্রজন্ম রাষ্ট্রকে পুনর্নির্মাণ করার জন্য নতুন ধারণা তৈরি করার ক্ষেত্রে সহায়তা নিতে পারবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ করা দরকার বলে মনে করেন শহীদ উদ্দিন মাহমুদ।
জেএসডি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৯টিতে একমত, ১৭টিতে দ্বিমত, ২৭টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ৩টিতে মতামত নেই বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, সহসভাপতি সিরাজ মিয়া, সানোয়ার হোসেন তালুকদার, কে এম জাবির, তৌহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলালুজ্জামান।
আরও পড়ুনস্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় ঐকমত্য কমিশন১০ মার্চ ২০২৫