দেশের কৃষি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর চোখে স্বপ্ন আর অবয়বে আত্মপ্রত্যয়। কেউ গবেষণা করেছেন জারবেরা ফুলের চারা উৎপাদনের পদ্ধতি নিয়ে, কেউবা কাজ করেছেন আনারসের উন্নত চারা তৈরির উপায় বের করতে। কারও গবেষণার বিষয় মিষ্টি আলুর চারা উৎপাদন, সুগারবিটের চারা তৈরির কৌশল। বাদ পড়েনি অর্কিড, আদা, সবরি কলা, স্ট্রবেরি, গ্লাডিওলাস, স্টেভিয়াও। টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগমুক্ত এবং তুলনামূলক কম সময়ে অধিক ফলনশীল চারা উৎপাদন নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন এই গবেষকরা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পে’র ল্যাবে এসব গবেষণাপত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তরুণ গবেষকরা ১৫টি ফসলের চারা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছেন। উদ্দেশ্য হলো– এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে উন্নত-রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। পুরো এই গবেষণায় নেওয়া হবে কৃষকের অভিজ্ঞতা।

সোমবার রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়িতে কৃষি তথ্য সার্ভিস অডিটোরিয়ামে টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে গবেষণার জন্য ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। প্রকল্পের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই  স্বপ্নবাজের নতুন পথচলা শুরু হলো।

অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.

ছাইফুল আলম বলেন, আগামীর কৃষি হবে প্রযুক্তিনির্ভর। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি জ্ঞান, উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এই তরুণ গবেষকরা সেই পরিবর্তনের দূত। তরুণদের হাত ধরে কৃষি পাবে নতুন প্রাণ, নতুন পরিচয়। টিস্যু কালচার ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং– এ দুটি শাখাকে সামনে রেখে উন্মোচিত হচ্ছে আগামীর কৃষির সম্ভাবনার নতুন দ্বার।

টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবায়ের মাশরুর বলেন, ‘আমরা তরুণ গবেষকদের মাধ্যমে ১৫টি ফসলের টিস্যু কালচার রিজেনারেশন প্রটোকল তৈরি করব। ভবিষ্যতে এ প্রটোকল ব্যবহার করে উন্নতমানের রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করা হবে। এই চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘তরুণ গবেষকদের যুক্ত করে আমরা এমন একটি টেকসই গবেষণা-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি কার্যকর সংযোগ তৈরি হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে, যেখানে গবেষণাগার আর কৃষিজমির মধ্যে আর কোনো দূরত্ব থাকবে না। একটা সময় ছিল যখন উন্নত জাতের রোগমুক্ত চারা ছিল দুর্লভ, এখন সেই চারাই হবে কৃষকের জন্য সহজলভ্য। এই অভিযাত্রার নায়ক হচ্ছেন দেশের তরুণ গবেষকরা, যারা নিঃশব্দে গড়ে তুলবে আগামীর সোনালি কৃষি।’

তরুণ গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীদের অনন্য অবদানের ফলে। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের লড়তে হবে। লবণাক্ততা, বন্যা, খরা তো আছেই, রোগজীবাণুকে কীটনাশক ছাড়া প্রযুক্তি দিয়ে দমন করার কৌশল বের করতে হবে। আমরা যে যাত্রা শুরু করেছি, তা কৃষকের কাছে ছড়িয়ে দিতে না পারলে এ গবেষণার কোনো মূল্য নেই। আমাদের আশা, কৃষক এই গবেষণার সুফল পাবেন।’ 

প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার মো. জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক এস. এম. সোহরাব উদ্দিন, পরিকল্পনা ও আইসিটি উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার, টিস্যু কালচার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ একরামুল হক। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ফাহমিদা খাতুন, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ও প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মেহেদি হাসান খান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র র গম ক ত আম দ র ষকদ র

এছাড়াও পড়ুন:

যুবককে তুলে নিতে বাধা, গুলিতে প্রাণ গেল যুবদল কর্মীর

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক যুবককে তুলে নেওয়ার সময় ঠেকাতে গিয়ে অস্ত্রধারীদের গুলিতে যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের গঙ্গাবর বাজারের ইসলামিয়া মার্কেটর সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত মো. শাকিল (২৮) গঙ্গাবর গ্রামের সোলাইমান খোকনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, শাকিলসহ কয়েকজন ইসলামিয়া মার্কেটর সামনে চায়ের দোকানে ছিলেন। সেসময় অটোরিকশায় অস্ত্রসহ পাঁচজন এসে লাবিব নামে একজনকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন শাকিলসহ অন্যরা বাঁধা দিলে অস্ত্রধারী একজন শাকিলকে গুলি করে। তার ছোটভাই শুভর মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়।

পরে দুই ভাইকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে শাকিলকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। তার লাশ হাসপাতালটির মর্গে রয়েছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিষ্ট্রার বই সূত্রে জানা গেছে, রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটের দিকে শাকিলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার বুকে ও মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.হাবীবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়রা অস্ত্রধারী তিনজনকে গণধোলাই দিয়ে আটক করে রেখেছে। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ