ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৫০টি জায়গায় বসানো হচ্ছে ‘এয়ার পিউরিফায়ার’
Published: 28th, April 2025 GMT
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে অন্তত ৫০টি জায়গায় ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ বা বাতাস বিশুদ্ধকারী যন্ত্র বসানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এসব যন্ত্র বসাতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগরভবনে ‘দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে প্রশাসক এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করেছে ডিএনসিসি ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের একটা বড় কারণ ২০ বছরের আগের যানবাহন। ডিএমপিকে এ ধরনের যানবাহনগুলোকে উঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কারণ, বাসগুলো ভাঙাচোরা এবং একটি আরেকটিকে ধাক্কা দিতে দিতে চলে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণকাজও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।
এমন পটভূমিতে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকার ৫০টি জায়গায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এয়ার পিউরিফায়ার বসানো হচ্ছে। এগুলো আকারে বড় এবং দামি। এগুলোর জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষক পাওয়া গেছে। এগুলো জনপরিসরে স্থাপন করা হবে। করপোরেশনের কোনো টাকা খরচ হবে না।
এয়ার পিউরিফায়ার বসাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, ১০০টি গাছ যে পরিমাণ বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে, একেকটি পিউরিফায়ার সেই কাজ করবে। দূষণ কমাতে কিছু তাৎক্ষণিক সমাধানের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নিয়েও কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাসাবাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাদে সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের গৃহকরের ওপর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার কথা করপোরেশন থেকে ভাবা হচ্ছে। ঢাকার কিছু পরিকল্পিত এলাকায় ভবনের উচ্চতা কাছাকাছি। সেখানে পরিকল্পিতভাবে সোলার প্যানেল স্থাপন করে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পাড়কে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহর জীবনের মান সূচকে শেষ দিক থেকে চতুর্থ। এ শহর বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে। দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার প্রথম সারিতে। বিশ্বে যানজটের সূচকে পাঁচ নম্বরে। পৃথিবীর চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ শহর। শব্দদূষণেও শীর্ষে ঢাকা। স্বাস্থ্যসেবার সূচকে শেষের দিকে। এক কথায় ঢাকা শহর আজ ভয়াবহ পরিবেশদূষণের সম্মুখীন। এসব দূষণ থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে শতাধিক উপায় রয়েছে। আমাদের চাহিদাটাকে কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি দূষণকারী যাঁরা আছেন, তাঁদের সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, যানজট নিরসনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রচলন করলে সে ক্ষেত্রে সৌরশক্তির মাধ্যমে চার্জিংয়ের ব্যবস্থা করলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের (সিথ্রিইআর) সমন্বয়ক রৌফা খানম বলেন, শহরাঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অনেক আইন ও বিধিনিষেধ প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে শক্তিশালী কারিগরি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, একটি কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবিটি) পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি, মানসম্মত গণপরিবহন, শিল্প খাত, কৃষি খাত, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে এর ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘আমাদের জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। তার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’
সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ব ল ন র ব যবহ র ক ম হ ম মদ ব যবহ র ব ব সরক র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ
প্রচণ্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে যেন বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। গতকাল সোমবার এক দিনেই ১১ জেলায় বজ্রাঘাতে চার শিক্ষার্থীসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দু’জন এবং খুলনা, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চাঁদপুরে একজন করে মৃত্যুর খবর
পাওয়া গেছে।
বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
গতকাল কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে বজ্রাঘাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী ও দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন– ফাহাদ হোসেন (১৩), মোহাম্মদ জিহাদ (১৪), নিখিল দেবনাথ (৫৫), জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) ও মীম আক্তার (১০)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিন হাওরে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মারা গেছেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৬) ও ফুলেকা বেগম (৬৫)। নেত্রকোনার দুই উপজেলায় বজ্রাঘাতে মাদ্রাসাশিক্ষক দিদারুল হক (২৫) ও শিশু আরাফাত (১০) নিহত হন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দূর্বাসা দাস (৩৫) নামের এক কৃষক। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর থেকে গরু আনার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান কলেজছাত্র রিমন আহমদ তালুকদার (২৪)। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামের এক চা শ্রমিক মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন মানিক মিয়া (৬৫) নামের এক কৃষক। চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে মারা যান বিশাখা সরকার (৩৫) নামে কিষানি। খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন যুবক আরিফুল ইসলাম। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। যশোরের শার্শায় বাড়ির আঙিনায় ধান মাড়াইকালে বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪৫) নামের এক কৃষক মারা গেছেন।
কৃষকের মৃত্যুই বেশি
দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং হতাহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের, অর্থাৎ প্রতিবছর ২৭৬ জনের বেশি। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২১ সালে– ৩৮১ জন। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কাল থেকে শুরু মে মাসজুড়ে বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস আছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য বলছে, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। দেশের হাওর, বাঁওড় ও বিলপ্রবণ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, আকাশে যখন কালো মেঘ হয়, তখনই মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। পায়ে জুতা থাকতে হবে। উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে কী করতে হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি)