ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
Published: 28th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল কিন্তু নেতা নন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শক্তি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এক হয়ে লড়েছিল। কিন্তু ড.
সোমবার বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘গণঅভ্যুত্থান : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক সভাটি আয়োজন করে সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ।
গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র না থাকায় আমরা দুর্বল হয়েছি উল্লেখ করে এই চিন্তক বলেন, এই অভ্যুত্থানের গণ অভিপ্রায় হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব। এর প্রথম ধাপ হবে সংবিধানে গণসার্বভৌমত্ব উল্লেখ করা। কিন্তু আমরা হাসিনার সংবিধানটাই ছুড়ে ফেলতে পারিনি। এর বদলে আমরা করেছি একটি সংস্কার কমিশন। এর নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা অভ্যুত্থান যারা ছিলেন না তারা। কমিশনগুলো জনগণের কাছে থেকে তাদের কথা শোনেনি। এতে আমরা ক্রমশ দুর্বল হয়েছি। ফলে, যারা আপনাদের অশান্তিতে রেখেছে আপনারা তাদের বিচার করতে পারবেন না। তাই গণ সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রে নতুন স্বাধীন গঠনতন্ত্র লাগবে।
জনগণের সার্বভৌমত্বকে মূল্যায়ন করে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং নতুন সংবিধানে তিনটি বিষয় উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ৭২ সালের সংবিধান জনগণ করেনি। ৭১ এর ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বাদ দিয়ে ‘সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ’সহ ৪টি মূলনীতি করা হয়েছিল। এই সংবিধানকে বাতিল করে জনতার অভিপ্রায়ের নতুন গঠনতন্ত্র চাই। জনতার অভিপ্রায়ের জন্য ৩টি বিষয় সংবিধানে উল্লেখ করতে হবে।
দাবি তিনটি হলো- প্রথমত, রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি করতে পারবে না যাতে ব্যক্তির অধিকার হরণ করা হয়। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি করতে পারবে না যাতে প্রাণ- প্রকৃতি- পরিবেশ ধ্বংস হয়। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি গ্রহণ করতে পারবে না যাতে জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হয়।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সেখানে ধর্মের প্রসঙ্গে চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা আধুনিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে ইসলামের খোঁজ করি। আধুনিক রাষ্ট্র ক্যাপিটাল দিয়ে চলে। আমরা সারাক্ষণ ক্যাপিটালের অধীনে থাকি। পুঁজিবাদের অধীনে থেকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা হবে না। আগামী দিনের লড়াই হবে এই পুঁজির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদে বিভক্ত করে আলাদা হওয়া যাবে না। কারণ দুনিয়াতে জাতীয়তাবাদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই সময়ের লড়াই হবে সেটা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, সেখানে কোনও জাতিবাদ থাকবে না।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান বলতে আসলে কী বুঝায়, এটা আসলে আমাদের সমাজে পরিষ্কার ধারণা নেই। সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামনের সাড়িতে অনেক মেয়ে ছিল, কিন্তু তারা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল? তারা আর রাজপথে নেই। কারণ, তারা রাজপথে আর নিরাপদবোধ করছে না। আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র আর সরকারের পার্থক্য স্পষ্ট না। ফলে দেশ সামনের দিকে এগোতে পারছে না।
দেশে স্টারলিংক আনার সমালোচনা করে লেখক ফরহাদ মজহার বলেন, ড. ইউনুস স্টারলিংক দেশে এনেছেন। এতে কী লাভ হবে? আপনার নিরাপত্তা, আপনার সিকিউরিটি কোনও কিছুই আর আপনার থাকবে না। সবকিছু ইলন মাস্ক জানবে। আর ইলন মাস্ককে জানেন তো? তিনি ট্রাম্পের সমর্থক। আর ট্রাম্প ইসলাম ঘৃণা করেন। উনি ঘোরতর ইসলামবিরোধী। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কথা বলে ভাবছেন- আমি চাকরি পাবো! অনেক বেতন পাবো!
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসঊদ। উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিনা আফরিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ইউন স গণঅভ য ত থ ন ফরহ দ মজহ র গণঅভ য ত থ ন ফরহ দ মজহ র আম দ র আপন র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবসম্মত সংস্কারে সহযোগিতা করবে জামায়াত: আব্দুল্লাহ তাহের
গঠনমূলক, ইতিবাচক, বাস্তবসম্মত সংস্কারে জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর বিষয়ে আমরা দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না। দেশ ও জাতির জন্য যেটা কল্যাণকর সেই কাজে, সেই পরিবর্তন ও সংস্কারে জামায়াত পরিপূর্ণভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। আলোচনার ভিত্তিতে আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা করবো। শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায় মন্তব্য করে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ৫৪ বছরের বাংলাদেশের ব্যাপারে মানুষের ভেতরে ব্যাপক হতাশা আছে। তারা কিছুটা হলেও বঞ্চিত। বাংলাদেশিরা বীর জাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখনই বঞ্চিত হয়েছি, তার প্রতিবাদে প্রতিরোধ হয়েছে। মানুষ রক্ত ও জীবন দিয়ে পরিবর্তন করেছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা পায়নি। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ সংগ্রাম, লড়াই যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম কিন্তু স্বাধীন হইনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আসলেই স্বাধীন হয়েছি কিনা সময় বলে দেবে।
তিনি বলেন, আমরা যারা নেতৃত্বে ছিলাম তারা মানুষের ত্যাগ ও প্রয়োজনকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি, নতুন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন অতীতের মতো হারিয়ে না যায়। সে জন্য আমাদের অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। মৌলিক বিষয়গুলো সংশোধনের জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ মন্তব্য করে তাহের বলেন, আমরা কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে কারও হস্তক্ষেপ করতে কাউকে দেব না।
গ্রহণযোগ্য ও টেকসই গণতন্ত্রের চর্চা জামায়াতে ইসলাম সাংগঠনিকভাবে করে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়, সেটা প্রচারণা, প্রার্থী ছাড়া এবং প্যানেল ছাড়া গোপন ব্যালেটে হয়। আমাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নো ক্যাম্পেইন, নো ক্যান্ডিডেট।
তিনি বলেন, আমরা দেশে এমন নির্বাচন চাই যাকে দেশের মানুষ নির্বাচন বলবে, দুনিয়া নির্বাচন বলবে। গত তিন মেয়াদে দেশে কোনো ধরনের নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকায় দেশে নৈরাজ্য হয়েছে, যার পরিণতি সমগ্র জাতি ভোগ করছি। আমরা এটার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা স্বচ্ছ ও সঠিক নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
জামায়াত দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায় জানিয়ে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশের আজকের দুরাবস্থার পেছনে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি দায়ী। মানুষ দুর্নীতি না করলে দেশে নৈরাজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। ভোট ছাড়া নির্বাচিত হওয়া হচ্ছে বড় দুর্নীতি। পরিশ্রম ছাড়া টাকা আয় করা দুর্নীতি। উন্নয়নের নামে টাকা পকেটস্থ করা দুর্নীতি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতের অঙ্গীকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনিবার্হী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিশির মুনির, মহিউদ্দিন সরকার।