ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেনি। নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই গেজেট প্রকাশ করেছে।

সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা ড.

আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন, ইশরাক হোসেনের গেজেট নোটিফিকেশন হবে কিনা, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। নির্বাচন কমিশনতো আসলে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আমাদের মতামত জানার প্রয়োজন ছিল না। এজন্য তাদের সিদ্ধান্ত তাদেরই নেওয়ার কথা। আমাদের কাছে যখন মতামত নিতে পাঠিয়েছিলেন তখন আমরা সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এতে আমরা জানতে পেরেছি নির্বাচনী যে প্লেইন্ড আছে সেটা নাকি পরিবর্তন করা যায় না। কারণ সেখানে নাকি হাইকোর্টের রায় রয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ইশরাক সাহেব নাকি পরবর্তী সময়ে প্লেইন্ড পরিবর্তন করেছিলেন। সেজন্য আমরা দ্বিধান্বিত ছিলাম এটা কি গেজেট নোটিফিকেশন হবে নাকি আপিল করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেনি। ওনারা নিজেরা গেজেট নোটিফিকেশন করেছেন। এখানে আমার বলার কিছু নাই।

এ সময় ন্যাটব্যক্তিত্ব ইরেশ যাকেরে বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, এ মামলাগুলো বাণিজ্যিক বা বিদ্বেষমূলক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের আইনে কোথাও মামলা করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় নাই। যে যার মতো করে মামলা করতে পারে। এখানে অনেক হয়রানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে। অন্যের জায়গা জমি দখল, ব্যবসা দখলের জন্য মামলা হচ্ছে। এগুলো অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। মামলা হওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকার দেওয়ার প্রচেষ্টা করছি। এখন এতো মামলা হচ্ছে, এতে আমাদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মামলা করতে আমরা কাউকে বাধা দিতে পারি না, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বার বার বলা হচ্ছে অভিযোগের সুনির্দিষ্টতা পাওয়া না গেলে কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়। আমরাও আদলতের মাধ্যমে আইনগত প্রতিকার দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইরেশ যাকেরসহ কিছু কিছু মামলা হয়েছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো যারা মামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে সবার সামনে উন্মোচন করেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আরো কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করছি। প্রয়োজনের আইনগত পরিবর্তন আনতে হলে চেষ্টা করবো।

মেজর সিনহা হত্যা মামলার অপরাধীদের এক মাসের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার জন্য একটি সংগঠনের আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, মেজর সিনহা হত্যা একটা পাশবিক হত্যা ছিল। এতে আমরা সবাই বিচার চেয়েছি। এটাও বুঝতে হবে কোনো মামলা উচ্চ আদালতে বা হাইকোর্টে থাকে তখন এটা সম্পূর্ণভাবে হাইকোর্টের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এটা কার্যতালিকায় কত নম্বরে আসবে, কবে বিচার হবে সেটা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে হাইকোর্ট ঠিক করে। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ নেই।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, কাউকে দোষী করার আগে ভালো করে জেনে করতে হয়। আপনাদের মতো আমিও আশা করি যাতে এটার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।

আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। এখন আগের সরকার কি করেছে, তারা ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল তাদের কোনো নীতি ছিল না। তারা চিফ জাস্টিসকে পর্যন্ত গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা সে সরকার না। উচ্চ আদালতের স্বাধীনতার ওপর আমরা অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল।

আছিয়া হত্যা মামলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আছিয়া হত্যা মামলার বিচার কাজ গত বুধবার শুরু হয়েছে। চার্জশিট পেতে একটু দেরি হয়েছে। এটা ছাড়া বিচার কাজ শুরু হতে পারে না। আগামী বুধবার হবে ষষ্ঠ কার্যদিবস এবং আগামী রোববার হবে সপ্তম কার্যদিবস। আমি বলেছিলাম সপ্তম কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম। এটা নিম্ন আদালতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। আমার মনে হয় না খুব একটা ব্যত্যয় হবে। আমার মনে হয় আমরা খুব দ্রুত একটা রায় পাব।

এর আগে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিচারকাজে বিড়ম্বনা কমানো, সময় বাঁচানো ও অর্থ ব্যয় কমানো। এজন্য ইতোমধ্যেই আমরা বেশকিছু সংস্কারকাজ করেছি। এটা হয়তো খুব বেশি বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু যারা আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের বুঝার কথা। 
আসিফ নজরুল বলেন, দেওয়ানী কার্যবিধির  যুগান্তকারী বেশকিছু সংশোধন করা হয়েছে যা উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি,  উপদেষ্টা পরিষদের আগামী সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করবে। 

আইন সচিব শেখ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন আইন উপদেষ্টা। বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রধান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী, ব্লাস্টের প্রধান নির্বাহী সারা হোসেন, সন্মাননাপ্রাপ্ত সিলেটের আইনজীবী পল্লবী রায় এবং আইন সহায়তাপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী ইব্রাহিম শাওন প্রমুখ। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টা লিগ্যাল এইড রোড শো ও লিগ্যাল এইড মেলার উদ্বোধন করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট র মত মত আম দ র র জন য সরক র ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবেশ

আর্থিকভাবে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে সহায়তা দিতে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন এবং এ-সংক্রান্ত একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে জনকল্যাণমূলক আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও সরকারি খরচে আইনি সেবার বিষয়ে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজে যেন প্রত্যেক মানুষ নিজেদের মধ্যে বিরোধে না জড়িয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা নিয়ে বসবাস করতে পারে।

দেশে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলো এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে এসব অফিস এখন ‘এডিআর কর্নার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা প্রণয়ন করে লিগ্যাল এইড অফিসারদের এডিআর বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আইনি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে একে অনেকাংশে পরিপূর্ণ আকার প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের ক্ষমতাকে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে দেওয়ানি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন 
করে যাচ্ছেন। 

বিদ্যমান আইনে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যেসব আইনি সেবা প্রদান করা হয় তা হলো– যে কোনো ব্যক্তি তার আর্থিক সামর্থ্য যা-ই হোক না কেন, সরকারি আইনগত সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত আইনগত তথ্যসেবা গ্রহণ, আইনগত পরামর্শ গ্রহণ কিংবা বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আপসযোগ্য বিরোধ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সেবা; অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলার প্রয়োজন হলে সরকারি খরচে মামলা করা ও পরিচালনা; মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ; আদালত থেকে প্রেরিত মামলার মধ্যস্থতা; বিনামূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ; আইনজীবীর ফি পরিশোধ; মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় পরিশোধ; ফৌজদারি মামলার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ; মধ্যস্থতাকারী বা সালিশকারীর সম্মানী পরিশোধ; ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ এবং বিনামূল্যে রায় কিংবা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ।
সাধারণ নাগরিকরা জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের টোল ফ্রি নম্বর- ১৬৪৩০ এ কল করে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে এবং বিডি লিগ্যাল এইড অ্যাপ ব্যবহার করে বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নিতে পারেন। এ ছাড়া জাতীয় লিগ্যাল এইড দপ্তরের ই-মেইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও তা সম্ভব। এমনকি বিদেশ থেকে +৮৮০৯১২৩১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করেও বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নেওয়া যায়।

দেশে এখন প্রায় ৪৪ লাখ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন (সমকাল, ১২ নভেম্বর ২০২৪)। এই মামলাজট কমাতে দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যন্ত লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হলেও সীমাবদ্ধতার কারণে এ আইনের সুফল দেশের আপামর জনসাধারণ ভোগ করতে পারছে না। 
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে চলমান কার্যক্রম আমাদের নতুন ভাবনা জাগিয়েছে। আমরা চাই মামলাজটমুক্ত বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্ণ একটি চমৎকার পরিবেশ। দেশে আদালতের বাইরে লিগ্যাল এইড অফিস হোক মামলা নিষ্পত্তির অন্যতম কেন্দ্র।

মহসিনুল হক: স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ), কুমিল্লা
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ৪ জন নিহত
  • অনেক হয়রানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা
  • জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করলো জেলা লিগ্যাল এইড না’গঞ্জ 
  • ঢালাও মামলায় বাদীর স্বার্থ খুঁজে বের করার আহ্বান আসিফ নজরুলের
  • মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ: আসিফ নজরুল
  • উচ্চ আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই: আসিফ নজরুল
  • স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবেশ