ঢালাও হত্যা মামলা দায়েরকারীদের বাণিজ্যিক বা বিদ্বেষমূলক স্বার্থ রয়েছে কি না তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।  

ড.

আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের আইনে কোথাও মামলা করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়নি। যে যার মতো করে মামলা করতে পারে। তবে অনেক হয়রানিমূলক ও বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে। অন্যের জায়গাজমি দখল, ব্যবসা দখলের জন্যও মামলা হচ্ছে। এগুলো অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। মামলা হওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকার দেওয়ার প্রচেষ্টা করছি। এখন এত মামলা হচ্ছে যে, এতে আমাদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মামলা করতে আমরা কাউকে বাধা দিতে পারি না, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বারবার বলা হচ্ছে, অভিযোগের সুনির্দিষ্টতা পাওয়া না গেলে কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়। আমরাও আদালতের মাধ্যমে আইনগত প্রতিকার দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইরেশ যাকেরসহ (নাট্যব্যক্তিত্ব) কিছু কিছু মামলা হয়েছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, যারা মামলা করেছেন, তাদের খুঁজে বের করে সবার সামনে উন্মোচন করুন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আরও কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করছি। প্রয়োজন হলে আইনগত পরিবর্তন আনারও চেষ্টা করবো।

মেজর সিনহা হত্যা মামলার অপরাধীদের এক মাসের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার জন্য একটি সংগঠনের আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, মেজর সিনহা হত্যা একটি পাশবিক হত্যা ছিল। এতে আমরা সবাই বিচার চেয়েছি। তবে এটাও বুঝতে হবে, কোনো মামলা উচ্চ আদালতে বা হাইকোর্টে থাকলে, সেটি সম্পূর্ণভাবে হাইকোর্টের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এটি কার্যতালিকায় কত নম্বরে আসবে, কবে বিচার হবে—সেটা হাইকোর্ট স্বাধীনভাবে ঠিক করে। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ নেই।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, কাউকে দোষী করার আগে ভালো করে জেনে নিতে হয়। আপনাদের মতো আমিও চাই যাতে এই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়।

এর আগে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা। আইন সচিব শেখ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী, ব্লাস্টের প্রধান নির্বাহী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সম্মাননাপ্রাপ্ত সিলেটের আইনজীবী পল্লবী রায় এবং আইন সহায়তাপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী ইব্রাহিম শাওন প্রমুখ।

এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আইন উপদেষ্টা লিগ্যাল এইড রোড শো ও লিগ্যাল এইড মেলার উদ্বোধন করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবেশ

আর্থিকভাবে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে সহায়তা দিতে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন এবং এ-সংক্রান্ত একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে জনকল্যাণমূলক আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও সরকারি খরচে আইনি সেবার বিষয়ে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজে যেন প্রত্যেক মানুষ নিজেদের মধ্যে বিরোধে না জড়িয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা নিয়ে বসবাস করতে পারে।

দেশে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলো এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে এসব অফিস এখন ‘এডিআর কর্নার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা প্রণয়ন করে লিগ্যাল এইড অফিসারদের এডিআর বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আইনি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে একে অনেকাংশে পরিপূর্ণ আকার প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের ক্ষমতাকে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে দেওয়ানি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন 
করে যাচ্ছেন। 

বিদ্যমান আইনে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যেসব আইনি সেবা প্রদান করা হয় তা হলো– যে কোনো ব্যক্তি তার আর্থিক সামর্থ্য যা-ই হোক না কেন, সরকারি আইনগত সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত আইনগত তথ্যসেবা গ্রহণ, আইনগত পরামর্শ গ্রহণ কিংবা বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আপসযোগ্য বিরোধ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সেবা; অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলার প্রয়োজন হলে সরকারি খরচে মামলা করা ও পরিচালনা; মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ; আদালত থেকে প্রেরিত মামলার মধ্যস্থতা; বিনামূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ; আইনজীবীর ফি পরিশোধ; মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় পরিশোধ; ফৌজদারি মামলার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ; মধ্যস্থতাকারী বা সালিশকারীর সম্মানী পরিশোধ; ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ এবং বিনামূল্যে রায় কিংবা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ।
সাধারণ নাগরিকরা জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের টোল ফ্রি নম্বর- ১৬৪৩০ এ কল করে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে এবং বিডি লিগ্যাল এইড অ্যাপ ব্যবহার করে বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নিতে পারেন। এ ছাড়া জাতীয় লিগ্যাল এইড দপ্তরের ই-মেইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও তা সম্ভব। এমনকি বিদেশ থেকে +৮৮০৯১২৩১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করেও বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নেওয়া যায়।

দেশে এখন প্রায় ৪৪ লাখ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন (সমকাল, ১২ নভেম্বর ২০২৪)। এই মামলাজট কমাতে দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যন্ত লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হলেও সীমাবদ্ধতার কারণে এ আইনের সুফল দেশের আপামর জনসাধারণ ভোগ করতে পারছে না। 
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে চলমান কার্যক্রম আমাদের নতুন ভাবনা জাগিয়েছে। আমরা চাই মামলাজটমুক্ত বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্ণ একটি চমৎকার পরিবেশ। দেশে আদালতের বাইরে লিগ্যাল এইড অফিস হোক মামলা নিষ্পত্তির অন্যতম কেন্দ্র।

মহসিনুল হক: স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ), কুমিল্লা
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়া ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ হয়েছে: আসিফ নজরুল
  • কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ৪ জন নিহত
  • অনেক হয়রানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা
  • জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করলো জেলা লিগ্যাল এইড না’গঞ্জ 
  • মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ: আসিফ নজরুল
  • উচ্চ আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই: আসিফ নজরুল
  • স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবেশ