ঘূর্ণিঝড়ে হতাহতদের স্মরণে মানববন্ধন
Published: 28th, April 2025 GMT
দুর্যোগ প্রশমনে ঋণের ওপর নির্ভর না করে জাতীয়ভাবে নিজস্ব অর্থায়নে আঞ্চলিক অগ্রাধিকার পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।
তারা বলছেন, জাতিসংঘ সংস্থা ও আইএনজিওদের সরাসরি প্রকল্প পরিচালনা থেকে সরে এসে স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উপকূলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দূরীকরণে জলবায়ু সহিষ্ণু লবণমুক্ত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ এবং কৃষিজমি রক্ষায় টেকসই কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
সোমবার জাতীয় (২৮ এপ্রিল) প্রেসক্লাবের সামনে ‘১৯৯১ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিলের ৩৪ বছর: উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের দাবি’ শীর্ষক মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।
ইক্যুইটিবিডির মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চলনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী। বক্তৃতা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, উদয়ন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শেখ আসাদ, ইয়থ অ্যাকশান ফর ডেভোলাপম্যান্টের সাহেদা খাতুন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের শাহরিয়ার শাওন, সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম এ হাসান প্রমুখ।
সমাবেশে রেজাউল করিম চৌধুরী দুর্যোগ প্রশমনে জাতীয়ভাবে নিজস্ব তহবিল নির্ভর আঞ্চলিক অগ্রাধিকার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ ও কৃষিজমি রক্ষার জন্য কংক্রিট বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কংক্রিট ব্লক বাঁধ নির্মাণ এবং উপকূলীয় বনায়ন তৈরির জন্য সর্বাধিক দুই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সরকারের উচিত সেই অনুযায়ী এই বাজেট বরাদ্দ করা।”
উপকূলীয় অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য লবণাক্ত পানি পরিশোধন প্রযুক্তির সম্প্রসারণে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
আইএনজিও এবং দেশীয় এনজিও’র মধ্যে সমতা ও মর্যাদাভিত্তিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মসম্মান ও আত্মউন্নয়নের বোধকে জাগ্রত করার আহ্বান জানান মোস্তফা কামাল আকন্দ।
তিনি বলেন, “২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের পর ৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও টেকসই উপকূলীয় সুরক্ষা ইস্যু এখনো আবহেলিত। এখনো দুর্যোগের খবরে উপকূলবাসীর দিন কাটে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠায়। বেড়িঁবাধ ভেঙে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। তাই সবার আগে উপকূলীয় সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যেকোনো দুর্যোগে ম্যানগ্রোভ বন আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু রামপাল-মাতারবাড়ির মতো বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো এই বন ধ্বংস করেই তৈরি করা হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা ওই প্রকল্পগুলো থেকে সরে এসে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে হবে। দুর্যোগের কারণে ভবিষ্যতের বাস্তুচ্যুতির তীব্র সংকট মোকাবিলায় কেবল একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; জলবায়ু-সহনশীল অগ্রাধিকার-ভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
ঢাকা/এএএম/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল