সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের
Published: 28th, April 2025 GMT
জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছর ও সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ২৫ বছরের পরিবর্তে ন্যূনতম ২৩ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণ অধিকার পরিষদের এই অবস্থানের কথা জানান দলটির সভাপতি নুরুল হক। সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
নুরুল হক বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদের সময় বাংলাদেশের জনগণ নিষ্পেষিত ছিল। গত ৫৩ বছরের বাস্তবতায় এখন আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ইতিহাসে এমন বিরল পরিস্থিতি আর তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠন করে এই সংস্কারকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে।’
এর আগে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১২৭টির সঙ্গে একমত থাকলেও আজকের আলোচনার পর গণ অধিকার পরিষদ নতুন আটটি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত ও ২৩টির সঙ্গে আংশিক একমত হওয়ার কথা জানিয়েছে দলটি।
মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস যথেষ্ট নয় দাবি করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, একজন সন্তানের লালন–পালনের জন্য নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত তাঁর অফিস সময় অর্ধেক করার প্রস্তাব দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়ায় সংসদের দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের পাশাপাশি গণভোটের আয়োজন করারও প্রস্তাব জানায় দলটি।
নুরুল হক বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে থাকে। সব সংশোধনী নয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন জরুরি। সেই ধারাগুলোও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে গণ অধিকারের অবস্থান হলো, সংবিধান সংশোধন, অর্থ বিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়গুলোয় সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে অর্থাৎ দলের বিরুদ্ধেও ভোট দিতে পারবেন।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করে জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। নুরুল হক বলেন, বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে একটি নাম সাবলীল নয়। আর এনসিসি গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও তিন বাহিনীর প্রধানের পাশাপাশি পুলিশপ্রধানকেও যুক্ত করা জরুরি।
রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার প্রস্তাব জানায় দলটি।
ছাত্রসংগঠন ও শ্রমিক সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করতে পারবে না, ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে গণ অধিকার পরিষদ। নুরুল হক বলেন, ‘আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনকেও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত করতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি কোনো পেশাজীবী সংগঠনের এমন সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রাখতে মতামত দিয়েছি।’
সম্প্রতি গণহারে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হচ্ছে দাবি করে নুরুল হক বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে হলে অন্তত তিন থেকে চার বছর সক্রিয় কার্যক্রমে যুক্ত থাকার বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নতুন অধ্যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে।
সম্মিলিতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাঁদের লক্ষ্য দ্রুত একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।
সংস্কার প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, শুধু আলোচনার মধ্য দিয়েই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। সবার একত্র থাকার তাগিদ সব সময় জারি রাখতে হবে।
আলোচনায় অংশ নেওয়া গণ অধিকার পরিষদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ফারুক হাসান, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য খালিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান রিজু, সাকিব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক শাকিলুজ্জামান, মানবাধিকারবিষয়ক সহসম্পাদক ফাতেমা দিশা, যুব উইংয়ের সদস্য মুমতাজুল ইসলাম ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী সরকারকে পলাতে বাধ্য করেছে: আলী রীয়া
জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী সরকারকে পলাতে বাধ্য করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, “এই ঐক্যের মূল চেতনাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটি শুধু আমাদের অঙ্গীকার নয়, এটা আমাদের দায়।”
রবিবার (২৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে এল. ডি. হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের আলোচনার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়েছে, আলোচনার সময় সেখানে ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে যে সমস্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত সংকট মোকাবিলার একটা প্রয়াস।”
“শুধু সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বাস্তবায়নই নয়; আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করতে হবে। সেজন্য গণতান্ত্রিক চর্চা এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একত্রিত করা দরকার,” যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “৫৩ বছর ধরে যারা একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সংগ্রাম করেছেন, তাদের কাছে আমাদের এই দায় রয়েছে।”
আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
তাদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু, হাসান মারুফ রুমি, মনির উদ্দিন পাপ্পু, বাচ্চু ভুইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, ইমরাদ জুলকারনাইন, তরিকুল সুজন, মুরাদ মোর্শেদ এবং দীপক রায়।
সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালার ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরই মধ্যে ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন।
ঢাকা/হাসান/রাসেল