পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেছেন, “পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে করা মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।”

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পুলিশ সপ্তাহ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে পুলিশপ্রধান এ কথা জানান।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “৫ আগস্টের পর একটি মহল হয়রানির উদ্দেশ্যে মূল আসামির সঙ্গে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে মামলায় আসামি করছে। এ বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। শুরু থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আমি নিজেও বলেছি এবং পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই নির্দেশ পেয়েছেন যে, কোনো নিরীহ মানুষকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, হয়রানি করা না হয়। তদন্তে শুধু যার বিরুদ্ধে দায়ভার পাওয়া যাবে, তার বেলাতেই আমরা ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট চাইব।”

আরো পড়ুন:

দুই কিশোরীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করায় দম্পতি গ্রেপ্তার 

ডিবির অভিযানে আ.

লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭

‘সাংবাদিকসহ বিভিন্নজনের নামে মিথ্যা মামলা হচ্ছে’-এ প্রশ্নের জবাবে বাহারুল আলম বলেন, “আমাদের শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়েছে। সবাই নিজের হাতে লিখে নিয়ে আসেন। যখন একজন বাদী নিয়ে আসেন তখন সেটি আমাদের মামলা হিসেবে রুজু করতে হয়। তখন এটা সত্য না মিথ্যা যাচাই করার সুযোগ নেই। অভিযোগ যেটা দেয়, সেটা আমার নিতে হয়। এরপর তদন্তে গিয়ে আমি দেখি আসলে কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা। সত্য অংশটুকুই আমরা তদন্তে উঠিয়ে নিয়ে আদালতের কাছে পাঠাই। এই অপরাধটা হয়েছে।”

‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’। তবে গতানুগতিক বছরগুলোর মতো এবারের পুলিশ সপ্তাহে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকভাবে করা হচ্ছে না বলে জানান আইজিপি বাহারুল আলম।

তিনি বলেন, “এবারের পুলিশ সপ্তাহ আনুষ্ঠানিক না করে, কার্যকর করতে চাই। তাই এবার পুলিশ সপ্তাহ অনাড়ম্বরভাবে করছি। যেখানে উৎসব-আনন্দ একদমই থাকছে না। পুলিশ সপ্তাহ আমরা আনুষ্ঠানিক না করে কার্যকর করতে চাচ্ছি।এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য, ‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’। এই ভাবনাটি আমরা দেশবাসীর মনে সঞ্চারিত করতে চাই। তারা যেন বলতে পারেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের এই পুলিশ আমাদের।”

তিনি বলেন, “আনন্দ-উৎসব বাদ দিয়ে এবার অনেক বেশি কার্যকর সেশন করা, পেশাগত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা ও বিগত দিনের কর্মকাণ্ড খুঁজে বের করার বিষয়গুলো নিয়ে এই তিন দিন আমরা ব্যস্ত থাকব। সারা দেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনাররা, পুলিশ সুপাররা আসবেন এবং সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবে। আগামী দিনে কীভাবে আরো উন্নত পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে পারি। সামনে যেসব চ্যালেঞ্জগুলো আসবে, সেগুলো থেকে কীভাবে নিজেদের উত্তরণ ঘটাবো এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। মাঠ পর্যায়ে বর্তমান পরিস্থিতি সবার কাছ থেকে নেব, জানবো এবং আগামী দিনে তারা কি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেটা শুনব।”

আইজিপি বলেন, “এবারের পুলিশ সপ্তাহে আমরা নাগরিক সমাজের সঙ্গে একটি আলোচনা রেখেছি। যেখানে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, গীতিকার, ক্রীড়াবিদ ও ছাত্র প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। পুলিশিংয়ের বিষয়ে তাদের ধারণা এবং অভিজ্ঞতা, ৫ আগস্টের আগের ও পরের ভুলত্রুটির বিষয়গুলো তাদের কাছ থেকে শুনব।”

তিনি বলেন, “পুলিশ সপ্তাহে সময়ে আমরা বরাবরের মতোই যারা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন তাদের পদকে ভূষিত করে থাকি। প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থেকে পদক প্রদানের জন্য সদয় সম্মতি দিয়েছেন। তিনি নিজেই পদক প্রদান করবেন।”

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর ও পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এমআর/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব হ র ল আলম কর মকর ত আম দ র তদন ত আইজ প

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘আমরা জমিদার’ বলা সেই কর্মকর্তার পদোন্নতির আবেদন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।

পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াত।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) আর ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও তিনি এ নাম লিখতেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারের পর তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে এ পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।

অবশ্য শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়। তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাক পেয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিতে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহাকরী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মতবিনিময় সভা হয়। এ সভায় সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’

সিরাজুল ইসলামের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, ছাত্রদের আবাসিক এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ প্রতিক্রিয়ার পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাঁকে শোকজ করে।

নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যর শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কমিটি হয়। এ কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় কে কে পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার এ সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার করা হয়।

জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়ে ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এ কারণে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকজের জবাব দিয়েছেন। তাঁর দল থেকেও ওই ঘটনার পর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন‘আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেব না,’ বললেন জামায়াত নেতা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫যা বলছে প্রশাসন

পদোন্নতির নথিতে দেখা যায়, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতিতে সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তিনি সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি দেওয়া নয়। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ