পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু
Published: 28th, April 2025 GMT
দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল রোববার ও আজ সোমবার বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের অষ্ট্রগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও মদনে দুজন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন মারা গেছেন।
কুমিল্লা
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া এলাকায় ফসলের মাঠে ধান কাটতে গিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৫৮) ও উপজেলা আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসীম উদ্দীন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে পাশাপাশি জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হন। আশপাশের লোকজন এসে দেখেন তাঁরা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।
মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে তাঁরা দুজনের মৃত্যুর ঘটনাটি জানতে পেরেছেন। তবে এ ঘটনায় কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি। ঘটনার পর স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে জুয়েল ভূঁইয়া নিজের জমিতে এবং নিখিল অন্যের জমিতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে বরুড়া উপজেলার খোসবাস উত্তর ইউনিয়নের পয়েলগচ্ছ গ্রামে ঘুড়ি ওড়ানোর সময় বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে দুই কিশোর। তারা হলো ওই গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) ও খোকন মিয়ার ছেলে মো.
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হক বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে দুই কিশোরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এ ছাড়া একটি শিশু আহত হয়েছে। স্বজনেরা ওই দুজনের মরদেহ নিয়ে গেছেন।’
দুপুর ১২টার দিকে বরুড়া উপজেলার খোসবাস উত্তর ইউনিয়নের পয়েলগচ্ছ গ্রামে ঘুড়ি ওড়ানোর সময় বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে দুই কিশোর। তারা হলো ওই গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) ও খোকন মিয়ার ছেলে মো. ফাহাদ (১৩)।কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার সময় সকাল পৌনে ১০টার দিকে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৫)। ইন্দ্রজিৎ উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে। স্বাধীনের বাবার নাম ইদ্রিস মিয়া; বাড়ি খয়েরপুর গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে খাবার খেয়ে ইন্দ্রজিৎ ধান কাটতে যান। পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে স্বাধীনও যায় ধান কাটতে। সকাল নয়টার দিকে অষ্টগ্রামের আকাশ কালো হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ধমকা হাওয়া বইতে থাকে। বিরূপ আবহাওয়ায় অনেক কৃষক ধান কাটা রেখে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ ও স্বাধীন হাওরে অবস্থান করছিলেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সামান্য শিলাও পড়ে। তখন বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়।
বজ্রপাতে দুজন কৃষকের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে ইন্দ্রজিৎ ও স্বাধীনের মৃত্যু হয়।
প্রায় একই সময়ে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে বজ্রপাতে ফুলেছা বেগম (৬৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকার মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী। মিঠামইন থানার এসআই অর্পন বিশ্বাস বলেন, আজ সকালে বাড়ির পাশে ধানের খড় শুকাতে দিচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এ সময় বজ্রপাত হলে নিহত হন তিনি।
নেত্রকোনা
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্দ গ্রামে নিজ বাড়িতে গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে বজ্রপাতে আহত হন দিদারুল ইসলাম (২৮)। পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি পাশের খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের দাফনের জন্য পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
আজ সকাল সাতটার দিকে মদন উপজেলার তিয়োশ্রী গ্রামে মো. আরাফাত (১০) বাড়ি থেকে বের হয়ে মাদ্রাসার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ করে একটি বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরাফাত ওই গ্রামের সালাম মিয়ার ছেলে। সে তিয়োশ্রী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।
সকালে গ্রামের পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। একপর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে আজ সকালে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রিমন আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এবং শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে গ্রামের পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। একপর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন তালুকদার নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে বিশাখা রানী (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশাখা ওই এলাকার কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
কচুয়া থানার ওসি আজিজুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে স্বামী–স্ত্রী মিলে নিজ জমি থেকে ধান তুলছিলেন। এ সময় কাছাকাছি কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এ সময় বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল জানান, তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। বজ্রপাতের শব্দের কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে ঘটনাস্থলে মারা যান।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ ও ভৈরব; প্রতিনিধি, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও চাঁদপুর]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন র ম ত য ১০ট র দ ক স ন মগঞ জ ক শ রগঞ জ চ ক ৎসক উপজ ল র ত হয় ছ এ সময় সময় ব ল কজন র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয়নগরে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০
ছবি: সংগৃহীত