Prothomalo:
2025-04-28@13:51:25 GMT

ডলারের সিংহাসন কি কেঁপে উঠছে

Published: 28th, April 2025 GMT

গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে ফেরার পর বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান মনে করিয়ে দিয়েছেন চার্লস পি কিন্ডলবার্গারের সেই কথা, ‘আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ে বেশি ভাবলে মানুষ পাগল হয়ে যায়।’ এমন অস্থির সময়েই ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে ডলারের আধিপত্য নিয়ে দুটি বই—পল ব্লুস্টেইনের ‘কিং ডলার’ এবং কেনেথ রগফের ‘আওয়ার ডলার, ইয়োর প্রবলেম’। 

দুটি বই-ই ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর প্রকাশিত। ব্লুস্টেইনের বইটি বেরিয়েছিল ট্রাম্পের বিশ্ব অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর আগে। রগফ ও আমি ১৯৮৩ সাল থেকে একসঙ্গে গবেষণা করেছি। ব্লুস্টেইন ছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্ট–এর সাংবাদিক। 

এমআইটিতে পড়ার সময় আমরা শিখেছিলাম, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে সবকিছু একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই ডলারের আধিপত্য বোঝার জন্য বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক চিন্তায় পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হয়। রগফ ও ব্লুস্টেইনের বই এই বিষয়গুলো সহজ করে ব্যাখ্যা করেছে। ডলার ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস সম্মেলনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা ও বাণিজ্যের মাধ্যম হয়ে ওঠে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ডলারের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছিল। 

সে সময় অধিকাংশ দেশ নিজেদের মুদ্রাকে ডলারের সহযোগী হিসেবে দাঁড় করায়। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দেয়, চাইলে প্রতি আউন্স সোনার বিনিময়ে তারা ৩৫ ডলার ফেরত দেবে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল অপেক্ষাকৃত স্বাধীন; তবে তাকে বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতার দিকেও খেয়াল রাখতে হতো।

১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধব্যয়, বাজেট–ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন তখন ডলারে স্বর্ণ বিনিময় বন্ধ করেন এবং আমদানি শুল্ক বসান। ট্রেজারি সেক্রেটারি জন কনলি তখন বলেছিলেন, ‘ডলার আমাদের মুদ্রা, কিন্তু এটা তোমাদের সমস্যা।’ এরপর বড় বড় দেশগুলো নিজেদের মুদ্রাকে জাগিয়ে তুলতে শুরু করে। অনেকেই ভেবেছিলেন, ডলারের আধিপত্য কমবে, কিন্তু তা হয়নি।

বিশ্বব্যাপী আর্থিক তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। ফেডের ডলার সোয়াপ লাইনের ওপরও আস্থা দুর্বল হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি অতিরিক্ত উদার হলেও ডিজিটাল ডলার বা সিবিডিসি চালুর উদ্যোগ বন্ধ করেছে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করছে।

ডলার নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও টিকে থেকেছে। ১৯৭০-এর দশকে আইএমএফ বিশেষ ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) চালু করলেও, ডলার বিকল্প হারায়নি। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পল ভলকারের কঠোর নীতিতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে, আর্থিক বাজারের উদারীকরণ হয় এবং মার্কিন ট্রেজারি বন্ড বিশ্বের কাছে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে জনপ্রিয় হয়। 

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ৮৮ শতাংশে এখনো ডলার বিজড়িত। তবে ডলারের শক্তির ভিত্তি (আইনের শাসন, মুক্তবাজার, মূল্য স্থিতিশীলতা) ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমেরিকার আর্থিক অব্যবস্থাপনা এত বেড়েছে যে কংগ্রেসের কাছ থেকে দায়িত্বশীল বাজেট প্রত্যাশা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

ব্লুস্টেইন কিছুটা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু রগফ মনে করেন, ডলারের আধিপত্যের সময় ফুরিয়ে আসছে এবং পতনের মূল কারণ আমেরিকার নিজের ভেতর থেকেই আসছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে, মিত্রদের আস্থা হারিয়েছে এবং দেশের ভেতর ফেডারেল রিজার্ভ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এতে ডলারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

আরও পড়ুনএকটি কাগজের নোট যেভাবে অস্ত্র হয়ে উঠল০২ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বব্যাপী আর্থিক তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। ফেডের ডলার সোয়াপ লাইনের ওপরও আস্থা দুর্বল হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি অতিরিক্ত উদার হলেও ডিজিটাল ডলার বা সিবিডিসি চালুর উদ্যোগ বন্ধ করেছে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করছে।

এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প যখন ‘মুক্তির দিন’ ঘোষণা করে নতুন শুল্ক আরোপ করেন, তখন মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যায়, আর ডলার পড়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন সম্পদের ওপর আস্থা কমে যায় এবং শেয়ারবাজারও বড় ধাক্কা খায়।

এই এপ্রিল মাস সত্যিই টি এস এলিয়টের ভাষায় ‘সবচেয়ে নিষ্ঠুর মাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। যদি বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে হয়তো বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় ডলারের একক আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে।

মরিস অবস্‌ফেল্ড আইএমএফের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বার্কলে)-এর অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল স ট ইন ব যবস থ য় আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

রেফারি ইস্যুতে একঘরে রিয়াল মাদ্রিদ

বেচারা, কথা বলতে বলতে ক্যামেরার সামনেই কেঁদে ফেললেন। ‘আমার সন্তান যখন স্কুলে যায় আর তার সহপাঠীরা বলে, তার বাবা একজন চোর, তাতে তার কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসাটা কষ্টদায়ক। আমি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে তার বাবা একজন সৎমানুষ, তিনি যে কোনো খেলোয়াড়ের মতোই ভুল করতে পারেন।’ 

রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচিয়ার এই মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গী ছিলেন তাঁর পাশে বসা ভিএআরের দায়িত্বে থাকা পাবলো গঞ্জালেসও। কোপা দেল রের ফাইনালে থাকা এ দু’জনকে নিয়েই রিয়াল মাদ্রিদের জোর আপত্তি। তাদের দু’জনের দিকেই বার্সেলোনার প্রতি আনুগত্যের অভিযোগ এনেছিল এমবাপ্পেদের ক্লাব। এবং ক্লাবটির নিজস্ব টিভি চ্যানেল ‘আরএমটিভি’-তে রীতিমতো দুই ম্যাচ অফিসিয়ালের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে ফিফার নথিভুক্ত হলেও বুর্গোসের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। 

সেই তাঁকে কেন কোপা দেল রের ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? রেফারিকে নিয়ে এসব কাণ্ডে সায় দেওয়ার মতো কাউকে পাশে পাচ্ছে না রিয়াল মাদ্রিদ। রয়েল স্প্যানিশ ফুটবল সংস্থা এই ব্যাপারে চুপ, লা লিগা অনড়, নীরব বার্সেলোনা। বরং অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছে– ‘যথেষ্ট হয়েছে।’ রেফারিদের কান্নার দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে ‘স্টপ রেফারি হ্যারাসমেন্ট নাও’ হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড চলছে এখন স্পেনে।

রেফারিকে পাল্টানোর দাবিতে রিয়াল এতটাই প্রতিবাদী ছিল যে ফাইনালের আগে কোনো অফিসিয়াল ফটোসেশন, সংবাদ সম্মেলন, ট্রেনিং– কিছুই করেনি। সৌজন্যতা ও বহু বছরের রীতি ভেঙে তারা ম্যাচের আগের রাতে অফিসিয়াল ডিনারেও আসেনি। আর রিয়ালের এই পুরো ব্যাপারটিকে ‘নাটক’ মনে করছে বার্সা। 

‘ডেইলি স্পোর্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্সার অন্দরমহলে এই ব্যাপারটি নিয়ে কাউকে মিডিয়ার সামনে কিছু না বলার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করছে, ফাইনালের আগে রেফারিকে মানসিক চাপে রাখতেই এসব নাটক করা হচ্ছে। তারা ম্যাচটিকে কলঙ্কিত করতেই রেফারিকে নিয়ে এসব গল্প তৈরি করেছে। রিয়াল মাদ্রিদ নাকি ফুটবলের চেয়ে মাঠের বাইরের এসব আলোচনা বেশি করে সামনে এনেছে নিজেদের সম্ভাব্য পরাজয়ের অজুহাত খুঁজতে! 

বার্সেলোনা এফসির সভাপতি জোয়ান লোপার্তো তাদের অফিসিয়াল ভিডিও বার্তায় এটুকু বলেছেন, ‘রেফারিদের সম্মান দেখাতে হবে এবং ম্যাচে যে কোনো পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে।’ কিন্তু নির্দিষ্ট এই রেফারিকে নিয়ে কেন এত আপত্তি রিয়াল মাদ্রিদের? এক পরিসংখ্যানে তারা দেখিয়েছে, এই রেফারি যে ম্যাচগুলো পরিচালনা করেছেন, তাতে রিয়ালের জয়ের ৬৪ শতাংশ, সেখানে বার্সেলোনার ৮১ শতাংশ। কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, ম্যাচে কী সব ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তিনি।

রেফারিং নিয়ে রিয়ালের অসন্তুষ্টি নতুন কিছু নয়। গেল ফেব্রুয়ারিতেই লা লিগায় এস্পানিওলের ডিফেন্ডার কার্লোস রোমরোকে লাল কার্ড না দেখানো আর ভিনিসিয়ুসের গোল বাতিল নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল রিয়াল। রিয়াল মাদ্রিদের টিভিতে একটি রিপোর্ট প্রচার করা হয়, যেখানে তারা দাবি করে, এসব করা হচ্ছে রেফারিদের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান লুইস মোদিনার ইশারায়। তাঁকে পদ থেকে সরানোরও চেষ্টা করছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের সভাপতি ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ। কোনো ম্যাচে রেফারিং নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকলেই লা লিগা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি। 

তবে স্প্যানিশ মিডিয়ায় এর আগে এমনও খবর এসেছে যে, প্রতি মৌসুমেই রেফারিং প্রভাবিত করার চেষ্টা করে রিয়াল মাদ্রিদ। যা নিয়ে বিরক্ত লা লিগা সভাপতি ও রয়েল স্প্যানিশ ফুটবল সংস্থার সহসভাপতি হাভিয়ের তেভাস, ‘এটি ফুটবল নয়, ক্ষমতা দেখানোর খেলা। তিনি (ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ) তেভাসকে পছন্দ করেন না। কারণ তিনি যা চান, তেভাস সেটি করেন না। তিনি উয়েফা সভাপতিকেও পছন্দ করেন না। কারণ তিনি যা চান, তা সেফেরিনও করেন না। তিনি সংবাদ সম্মেলন বাতিল করেছেন, তিনি ফাইনালের সব আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করেছেন। তিনি প্রতিবাদ করেন না, চাপ দেন। তিনি অভিযোগ করেন না, হুমকি দেন।’ 

রিয়াল সভাপতির নাম না করেই এক্স হ্যান্ডেলে এভাবে তীব্র ভাষায় রিয়াল মাদ্রিদকে আক্রমণ করেন তেভাস। বিরক্ত রিয়ালের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদও। এক্স হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি দিয়েছে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, ‘এটি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। স্প্যানিশ ফুটবলের ইমেজকে যথেষ্ট কলুষিত করা হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রেফারি ইস্যুতে একঘরে রিয়াল মাদ্রিদ