অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যভিচার ও মানহানির অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসাইন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করেছেন আদালত। এরপর মামলাটি অন্য আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন।

সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।

এদিন মামলাটিতে নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা আদালতে হাজির হন।

তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু আদালতে দুটি আবেদন করেন। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি আবেদন করেন।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ মামলার বিচার চলছে। এ অবস্থায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়াতে বলেন, নাসির হোসেন ব্যভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আদালতে বিচার চলছে। বিচার শেষে আদালত রায়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কিনা এবং ব্যভিচারের সম্পর্ক করেছেন কিনা। একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন।

এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি এখন আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।

অভিযোগের ইশরাত হাসান বলেন, মামলার কেস রেকর্ডে যা আছে তাই বলেছি। যা সত্যি তাই বলেছি। আদালতকে নিয়ে কোনও কিছু বলিনি বরং আদালতের নিকট ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করা কোনও অপরাধ নয়। এ ধরনের আবেদন উদ্দেশ্যমূলক। আমাকে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখার জন্য আগেও প্রকাশ্য আদালতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বারবার আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তবে এসব করে লাভ হবে না। আইনজীবীকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি আইনগতভাবেই সব বিষয় মোকাবেলা করবো।

দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা একটা ব্যস্ত আদালত। এক মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার, এতো সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় ইফেক্ট পড়ে। আমি আসলে বিব্রতবোধ করছি। মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন? তখন আইনজীবীরা বলেন, এতে তাদের আপত্তি নেই।

তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। সিএমএম মামলাটি একটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। 

২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একই আদালত ক্রিকেটার নাসির হোসাইন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ মার্চ মহানগর দায়রা আদালতে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করেন তাদের আইনজীবী কাজী নজিব্যুল্লাহ হিরু। অন্যদিকে সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের রিভিশন অবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ মামলাটির বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তার মামলার দায় থেকে অব্যাহতি থাকবেন বলে আদেশ দেন।

এর আগে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন; যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তাম্মিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন নাসির। তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী কন্যা মারাত্মভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ত হ স ন কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুয়ার সাইট-অ্যাপ ও জড়িতদের খুঁজতে কমিটি গঠনের নির্দেশ

বিজ্ঞাপন প্রচারসহ অনলাইনে জুয়া/বেটিংয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন চিহ্নিত করা, এগুলোর কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়, তা নির্ণয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।

‘অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় তারকারা’ শিরোনামে ৯ এপ্রিল প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমস এবং সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমে তারকাদের এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে তানজিম রাফিদ নামে রাজধানীর এক বাসিন্দা ১৬ এপ্রিল রিটটি করেন। আজ রিটের ওপর শুনানি হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহিন এম রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী।

পরে আইনজীবী মাহিন এম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। হাইকোর্ট সাত বিবাদীর একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে; কমিটি বিশেষজ্ঞদের মতামতও নিতে পারবেন। বিজ্ঞাপন প্রচারসহ অনলাইনে জুয়া/বেটিংয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন চিহ্নিত করা, এগুলো কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং এগুলোর সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত কমিটিকে খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। আদালতে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’

সাত বিবাদীকে সাতজন প্রতিনিধি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কোন কোন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন অনলাইনে জুয়া/বেটিং হয়, তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।’

সংবিধানে ১৮(২) ও ৩১ অনুচ্ছেদ, সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে জনপ্রিয় তারকদের মাধ্যমে কোনো সামাজিক ও মূল ধারার মাধ্যমের প্লাটফর্মে অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমের কার্যক্রম ও বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তার বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অন্যতম শোবিজ তারকা ও মডেল পিয়া জান্নাতুল। তিনি আইন পেশায়ও আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীসংখ্যা ১৭ লাখ। ইনস্টাগ্রামে ১১ লাখ। পিয়া নিজের মডেলিং–জীবনের পাশাপাশি নানা সময় সামাজিক ও আইনি পরামর্শমূলক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। তবে তাঁকে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালাতেও দেখা গেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ১২টি অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালিয়েছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে। শুধু পিয়া নন, চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী, অভিনয়শিল্পী সামিরা খান মাহিও অনলাইন জুয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও আছেন এই তালিকায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্রিকেটার নাসির ও তামিমার মামলায় শুনানিতে আদালত বিব্রত
  • নিরপরাধ দাবি করে প্রধান অভিযুক্ত বললেন, ‘ওই সময় কাজে-কর্মে বাইরে ছিলাম’
  • শেখ হাসিনার সঙ্গে অভিনেতা সাংবাদিক আইনজীবীসহ আসামি ৪০৭
  • নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ 
  • সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি ‘জবাবদিহিহীন জায়গা’
  • ‘বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে আইনজীবীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি’
  • খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি হতে পারে আগামী সপ্তাহে
  • জুয়ার সাইট-অ্যাপ ও জড়িতদের খুঁজতে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • আবারও মঞ্চে আসছে ‘মার্ক্স ইন সোহো’