মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। শুনানি শেষে কারাগারে ফেরত যাওয়ার সময় প্রধান অভিযুক্ত নিহত শিশুর বোনের শ্বশুর বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা তদন্ত করেন। ওই সময় আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। আমার বিটার বউরে (ছেলের স্ত্রী) ধরেন। এই কাজ ওই করছে। আমরা অপরাধী না। কোনো দিন শুনছেন বাপ–বিটা (বাবা–ছেলে) এক সাথে ধর্ষণ করে? আমরা সবাই ওই সময় কাজে-কর্মে বাইরে ছিলাম। খবর পাইছি, খবর পায়ে বাড়িতে আইছি।’  

পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই আসামি বারবার বলতে থাকেন, ‘আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা তদন্ত করেন। ওই সময় আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। এ সময় ওই ব্যক্তির এক ছেলে (তিনিও মামলার আসামি) বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ঘটনা ঘটছে। আমরা কাজে ছিলাম। আপনারা ওর বোনকে (শিশুটির বোন) ধরেন, সব তথ্য পেয়ে যাবেন।’
আদালত সূত্রে জানা য়ায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক (শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে যার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল), ১১ বছরের এক শিশুসহ তিনজনের সাক্ষ্য নেন আদালত।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম ও আসামিপক্ষের আইনজীবী সোহেল আহম্মেদ অংশ নেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন চার আসামি—শিশুটির বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, বোনের স্বামী ও ভাশুর।

২৩ এপ্রিল এই চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশে (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্ট) অভিযোগ গঠন করা হয়।

শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আদালত তিনজন আসামির সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল আবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত। আমরা আশা করছি আগামীকাল ১০ জন সাক্ষীকে উপস্থিত করতে পারব। আগামীকাল অন্য কোনো মামলার সাক্ষী থাকবে না, শুধু এই মামলার সাক্ষী থাকবে। আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত এই মোকদ্দমার বিচার শেষ করা যায়।’

১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন।

মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল রয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছিল ৫ তারিখ (মার্চ) দিবাগত রাতে এবং শিশুটির বোনের স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তাঁর বাবা শিশুটিকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৬ মার্চ সকালে, শিশুটির বোনের কক্ষে। এ সময় শিশুটির বোন ওই বাড়ির মধ্যেই ছিলেন।

শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ষ য গ রহণ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশ

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) এমসিকিউ (প্রথম ধাপ) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে মোট ১৩ হাজার ২৫৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।

শুক্রবার রাতে বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ফল প্রকাশ করা হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি পরে জানানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে সনদ পেতে তিন ধাপে (এমসিকিউ, লিখিত এবং ভাইভা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আইনের ওপর স্নাতক উত্তীর্ণের পরপরই আইনজীবী হিসেবে ন্যূনতম ১০ বছর পেশায় রয়েছেন এমন একজন সিনিয়রের অধীনে ইন্টিমেশন জমা দিতে হয়। ইন্টিমেশন জমা দেওয়ার পর ছয় মাস অতিক্রম হলে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ করে এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। সনদ লাভের পর সংশ্লিষ্ট জেলা বার-এ যোগদানের মধ্য দিয়ে আইন পেশা শুরু করতে পারেন।

উল্লেখ্য, আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। শুক্রবার বিকেলে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মোট ৪০ হাজার ৬২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার সঙ্গে অভিনেতা সাংবাদিক আইনজীবীসহ আসামি ৪০৭
  • সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি ‘জবাবদিহিহীন জায়গা’
  • ‘বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে আইনজীবীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি’
  • খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি হতে পারে আগামী সপ্তাহে
  • জুয়ার সাইট-অ্যাপ ও জড়িতদের খুঁজতে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • ২১ আগস্ট হামলা ৪৯ আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি ৪ মে
  • সেবা পেতে চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন দাবি
  • কলেজের অ্যাডহক কমিটিতে চিকিৎসক-প্রকৌশলী-আইনজীবী রাখার নির্দেশ
  • আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশ