লামিয়ার মৃত্যুতে আরও সংকটে পরিবার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মা ও বোন
Published: 28th, April 2025 GMT
গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে মারা যান স্বামী জসিম উদ্দিন। এরপর গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে মারা যান বড় মেয়ে লামিয়া আক্তার (১৭)।
স্বামী এবং মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রুমা বেগম (৩৫)। একই অবস্থা লামিয়ার ছোট বোন বুশরা আক্তারের (১৪)। লামিয়া মারা যাওয়ার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে লামিয়াকে দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে দাফনের পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে স্বজনরা পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্বজনরা এ দুজনকে নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে লামিয়ার গলায় ফাঁস দেওয়া নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রবিবার মাগরিব নামাজ বাদ পাঙ্গাশিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে লামিয়ার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ নামাজে অংশ নেন বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ স্থানীয় শতশত মানুষ।
পরিবার জানায়, গত ১৮ মার্চ দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন লামিয়া। সাহসিকতার সাথে তিনি নিজে থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। দুমকি থানা পুলিশ অভিযুক্ত সাকিব ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকেই লামিয়া গভীর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। সামাজিক অবহেলা এবং ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় তার মধ্যে চরম হতাশা তৈরি হয়। সেই হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে পরিবারের ধারণা।
লামিয়ার দাদা শহীদ জসিম উদ্দিনের বাবা আবদুস সোবাহান বলেন, “আমরা এ শোক সইতে পারছিনা। কাঁদতে কাঁদতে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ছেলের বউ ও ছোট নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি।”
বলেন, “যাদের কারণে লামিয়া আত্মহত্যা করেছে আমরা তাদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।”
দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা আবুজর মোহাম্মদ ইজাজুল হক বলেন, “লামিয়ার মা এবং বোন হাসপাতালের ভর্তির বিষয়টি আমাকে অবগত করেনি। তবে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।”
ঢাকা/ইমরান/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে সহপাঠীদের মারধরে আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুরে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত এক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে আটদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে তার মৃত্যু হয়। গত ১৮ এপ্রিল বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইমন হোসেনকে (১৬) মারধর করা হয়।
নিহত ইমন শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার ছেলে। খুকনী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি।
নিহতের বাবা ইমদাদুল মোল্লা বলেন, “গত ১৭ এপ্রিল এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন সহপাঠী ইমনের খাতা দেখে চায়। ইমন তাতে রাজি হয়নি। এরই জেরে পরদিন শুক্রবার বিকেলে ইমনকে বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর নতুন পাড়ায় ডেকে নিয়ে মারধর করে তারা। এতে ইমনের বাম পাশের মাথার খুলি ভেঙে যায়।”
আরো পড়ুন:
রূপগঞ্জে নদীতে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতায় সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন: উপদেষ্টা
তিনি আরো বলেন, “আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইমনকে উদ্ধার করে প্রথমে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার তাকে বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার ভোরে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ইমন মারা যায়।”
ইমদাদুল মোল্লা বলেন, “আমার ছেলে মেধাবী ছিল। পরীক্ষার খাতা দেখে নকল করতে না দেওয়ায় তাকে এভাবে হত্যা করা হবে আমি কখনো ভাবিনি।” সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে দুই থানা মামলা না নেওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
খুকনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তোতা মিয়া বলেন, “মারধরের ঘটনার পর কয়েকবার নিহতের স্বজনরা এনায়েতপুর ও বেলকুচি থানায় মামলা করতে যান। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে দুই থানা মামলা নেয়নি। এনায়েতপুর থানা বলছে, বেলকুচিতে মামলা হবে, আর বেলকুচি থানা থেকে বলছে, মামলা হবে এনায়েতপুরে। এখনো মামলা হয়নি।”
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে এনায়েতপুর থানার ওসি রওশন ইয়াজদানি বলেন, “শিক্ষার্থী ইমন নিহতের ঘটনায় এনায়েতপুর থানায় জিডি করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার রাতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থী ইমন বেলকুচি থানার অন্তর্ভুক্ত দৌলতপুর নতুনপাড়া এলাকায় মারধরের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তার বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ঘটনার পর স্বজনদের বেলকুচি থানায় মামলা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। নিহতের স্বজনরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বেলকুচি থানার ওসি জাকেরিয়া ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থী ইমন আহত হওয়ার পর স্বজনরা থানায় মামলা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের এনায়েতপুর থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ