গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা না গেলে লোডশেডিং দিতে হয়। এবার লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করছে সরকার। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এই উৎপাদন ধরে রাখতে বিদ্যুৎ খাতে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। কমানো হয়েছে শিল্প ও আবাসিক খাতের সরবরাহ।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ পেলে মোটামুটি চাহিদা মেটানো যায়। রেশনিং করে (এক খাতে কমিয়ে, আরেক খাতে বাড়ানো) পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০৫ কোটি ঘনফুট যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়। বিদ্যুৎ খাত এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তাই আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকের গ্যাস–সংকট বেড়েছে।

বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। আর এলএনজি আমদানিও বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো.

রফিকুল ইসলাম

বৃহত্তম গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে। এ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের দিনে চাহিদা ১৯০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ পাচ্ছেন ১৫২ থেকে ১৫৩ কোটি ঘনফুট। এমন সরবরাহের সময় তাঁরা বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ঘনফুট দিতে পারতেন। এখন দিতে হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৭ কোটি ঘনফুট। এতে শিল্প ও আবাসিক খাতে ১৩ থেকে ১৪ কোটি ঘনফুটের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়েও শিল্পে গ্যাসের ঘাটতি থাকে। এখন এটি আরও বেড়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। আর এলএনজি আমদানিও বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো। ২০১৮ সালে উৎপাদন কমতে থাকলে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। উৎপাদন কমে এখন ১৮৪ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। আগের চেয়ে এলএনজি আমদানি বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি ইউনিট গ্যাস বিক্রি করে পেট্রোবাংলা পায় ২২ টাকা ৮৭ পয়সা। তাদের এখন খরচ হচ্ছে গড়ে ২৭ টাকার বেশি। যদিও শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাস বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। শিল্প গ্রাহকেরা বাড়তি দাম দিলেও গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। চাহিদামতো সরবরাহ করতে হলে আরও দুই কার্গো এলএনজি জাহাজ বাড়তি আমদানি করতে হবে। এতে পেট্রোবাংলার লোকসান বাড়বে। কিন্তু পিডিবি যদি ২৭ টাকা করে দাম দেয়, তাহলে আরও কার্গো আনা যাবে।

ঢাকার পাশের দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মূলত শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের অধিকাংশ কারখানা এখানে। গ্যাসের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাস–সংকট আরও বেড়েছে। গাজীপুর তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (সঞ্চালন ও বিতরণ) মো. রেদওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরে গ্যাসের চাহিদা এখন ৬০ কোটি ঘনফুট, পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ কোটি ঘনফুট।

দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো। ২০১৮ সালে উৎপাদন কমতে থাকলে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। উৎপাদন কমে এখন ১৮৪ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। আগের চেয়ে এলএনজি আমদানি বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গাজীপুর জেলায় মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৭৬। এর মধ্যে পোশাক কারখানা রয়েছে ১ হাজার ১৮৭টি। লাইসেন্সবিহীন কারখানাসহ সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। বেশির ভাগই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।

গাজীপুরের মৌচাক এলাকার সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা চালাতে গ্যাসের চাপ ১০ থেকে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে চাপ) থাকতে হয়। ১৫ দিন ধরে ২ থেকে ৩ পিএসআইয়ের বেশি গ্যাসের চাপ পাওয়া যায়নি। এতে আমাদের উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমে গেছে।

তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ কম থাকায় অনেক জায়গায় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহক গ্যাস কম পাচ্ছেন।

জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি ব্যবস্থাপনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় রাখতে হয়। গ্যাস সরবরাহে ভারসাম্য আনতে গিয়ে বেশি হারে এলএনজি আমদানির দিকে যাওয়া যাবে না। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিতে হবে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং লিমিটেডের উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ টন। উৎপাদন নেমেছে ১০ টনে। গ্যাসের চাপস্বল্পতার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয়টি জানিয়ে ২৩ এপ্রিল তিতাসকে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রোববার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, বয়লার মেশিন বন্ধ, গ্যাসের চাপ শূন্য পিএসআই। বিসিকের অপর প্রতিষ্ঠান ফেয়ার অ্যাপারেলস লিমিটেডে সকাল থেকে উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকেরা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি ব্যবস্থাপনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় রাখতে হয়। গ্যাস সরবরাহে ভারসাম্য আনতে গিয়ে বেশি হারে এলএনজি আমদানির দিকে যাওয়া যাবে না। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিতে হবে। 

[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ ন র য়ণগঞ জ প রথম আল ক সরবর হ ব ব যবস থ আমদ ন সরক র ঘনফ ট

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মেট্রোরেল চলাচল শুরু

বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে মেট্রোরেল চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

ঢাকার মেট্রোরেল পরিচালনায় নিয়োজিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে মেট্রোরেল আবার চালু হয়েছে।

এর আগে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে শনিবার বিকেলে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, বিজয় সরণি এলাকায় মেট্রোরেল বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, বিজয় সরণি সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শাহবাগ থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চলাচলের সুযোগ ছিল না। ফলে পুরো পথেই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনবৈদ্যুতিক গোলযোগে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ২ ঘণ্টা আগে

মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। রাজধানীর শাহবাগসহ কয়েকটি স্টেশনে টিকিট ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এ সময় টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় কিছু স্টেশনের মূল ফটকও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম
  • লোডশেডিং হবে শহরেও, সহনীয় মাত্রায় রাখার চেষ্টা চলছে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
  • সিন্ধু নদের পানি সরবরাহ আটকে দেওয়ার ভারতের হুমকিতে পাকিস্তানে আতঙ্ক
  • লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করা হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • ত্রুটি সারাতে ৫ মিনিট, কর্মীর পৌঁছাতে লাগল দেড় ঘণ্টা
  • জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ১৫ জেলা অন্ধকারে 
  • দক্ষিণের ২১ জেলায় দুই ঘণ্টা ‘ব্ল্যাক আউট’
  • দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মেট্রোরেল চলাচল শুরু
  • লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা