অনলাইন জুয়ার নামে টাকা পাচারের অভিযোগ, বিশেষ সহকারীর হুঁশিয়ারি
Published: 28th, April 2025 GMT
সাইবার সুরক্ষা আইন পাস হলে জুয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া এবং বেটিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
তিনি জানান, কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং ই-কমার্স এমএলএম এর নাম করে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। সাইবার আইন পাস হওয়ার পরে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনটি পাস হবে বলে আশা করি। এ আইনে সাইবার স্পেসে জুয়া কিংবা অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন পাস হওয়ার পরে আমরা জুয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া এবং বেটিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেব।”
বেটিং সাইটগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত এমএফএস কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানির বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং ই-কমার্স এমএলএম এর নাম করে অর্থ পাচারের অভিযোগ ঘনীভূত হচ্ছে। সাইবার আইন পাস হওয়ার পরে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব।”
“আমরা মোবাইল ব্যাংকিংসহ ফাইনান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলোকে আগাম সতর্কতা জানিয়ে রাখি। কেননা সাইবার জুয়া কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংসহ ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল হাউজ কিংবা পেমেন্ট গেটওয়ে, এমএফএস, পিএসও বা পিএসপি ইত্যাদির সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড।”
সেখানে তিনি লেখেন, “'মাসের পর মাস নির্দিষ্ট কিছু পুলের মোবাইল ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ইরেগুলার, একমুখী এবং অস্বাভাবিক ট্রানজেকশন হচ্ছে। একটা পুল অফ নাম্বারে টাকা যাচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট নাম্বারে গিয়ে ক্যাশ আউট হয়ে বাইরে পাচার হচ্ছে, আপনি দেখেও না দেখার ভান করে বলবেন, আমি জড়িত না! এটা হবে না। সুতরাং অবৈধ জুয়ার জড়িত সবাই সাবধান।”
এদিকে গতকাল রবিবার অনলাইন জুয়া বন্ধে সাত দপ্তরের সাত কর্মকর্তাকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট, লিংক ও গেটওয়েগুলো কারা কীভাবে চালায়, তা এ কমিটি চিহ্নিত করবে।
অনলাইন জুয়া নিয়ে পত্রিকায় আসা একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট আবেদন করেন তানজিম রাফিদ নামের এক ব্যক্তি। এতে অনলাইন জুয়া খেলার সব ওয়েবসাইট, লিংক ও গেটওয়ে অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
তারকাদের মাধ্যমে সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে অনলাইন জুয়ার প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বিজ্ঞাপন বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংক হিসাব খুলতে কী প্রয়োজন, জেনে নিন
এখনকার সময়ে নিজের নামে একটি ব্যাংক হিসাব থাকা সবার জন্য জরুরি। তিনি যেকোনো শ্রেণি, পেশা ও আয়ের মানুষ হোন না কেন, এই হিসাব প্রয়োজন। পাশাপাশি এখন আয় না করলেও শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক অর্ধেক মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে। আর বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাব ধরলে আরও বেশি মানুষ আর্থিক সেবার আওতায় এসেছেন।
যদিও ব্যাংক হিসাব ও এমএফএস হিসাব এক নয়। কারণ, এমএফএস মূলত টাকা স্থানান্তর প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে কিছু কেনাকাটা ও বিল পরিশোধ করা যায়। পাশাপাশি সীমিত আকারে সঞ্চয়ের সুবিধা রয়েছে। এ জন্য পুরোপুরি সঞ্চয়ের প্রবণতা গড়ে তুলতে ব্যাংক হিসাবের বিকল্প নেই। আবার আর্থিক জ্ঞান বাড়াতেও ব্যাংক হিসাব প্রয়োজন।
কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেনএখন আমরা তুলে ধরব কীভাবে আপনি ব্যাংক হিসাব খুলবেন। একটি হিসাব খোলার মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক শুরু হবে। প্রথমে আপনি ছোট অঙ্কের টাকা জমা করবেন। একসময় প্রয়োজনে কিছু ঋণ নেবেন। এটাই ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম—আমানত নেওয়া ও ঋণ দেওয়া।
তাহলে জেনে নিই, ব্যাংক হিসাব খুলতে কী প্রয়োজন। আগের চেয়ে ব্যাংক হিসাব খোলা কিন্তু এখন বেশ সহজ হয়েছে। এখন ব্যাংকে না গিয়েও ঘরে বসে অ্যাপসের মাধ্যমে হিসাব খোলা যায়। যে ব্যাংকের হিসাব খুলতে চান, সেই ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গেলে তা জানা যায়।
তবে প্রক্রিয়া যতই সহজ হোক না কেন, কিছু তথ্য ও ছবি তো দিতেই হবে। এ জন্য প্রয়োজন আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব রয়েছে, এমন একজন পরিচয়দানকারী; সঙ্গে সবার স্বাক্ষর তো লাগবেই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম–ঠিকানাও দিতে হবে। প্রতিটি হিসাব খোলার সময় গ্রাহক পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) জমা দিতে হয়। এখানে নাম–পরিচয়ের পাশাপাশি পেশা, অর্থের উৎস, মাসিক আয় ও ব্যয়ের তথ্য দিতে হবে। প্রয়োজন হলে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই–টিআইএন) নম্বরও জমা নেয় কিছু কিছু ব্যাংক। ই–টিআইএন জমা দিলে সুদের ওপর ৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়।
হিসাব খোলার ফরমেই দিতে হবে আপনি কী কাজে হিসাবটি ব্যবহার করতে চান। ওই হিসাবে আনুমানিক কী পরিমাণ লেনদেন হবে, প্রতি মাসে নগদ ও চেকে কত জমা–উত্তোলন হবে, তার তথ্যও দিতে হবে।
হিসাব খোলার সময়ই আপনি কী কী সেবা নেবেন, তার চাহিদা দিতে পারেন। যেমন এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এসএমএস অ্যালার্ট। আর একটি হিসাব খোলার জন্য আপনাকে কতবার স্বাক্ষর করতে হবে, তার হিসাব নেই।
কোন হিসাবে কী কাগজপত্র লাগবেদেশে একজন ব্যক্তি নানা ধরনের ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। এসব হিসাব খোলার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। ব্যাংকভেদে এই নিয়মের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। ব্যবসায়িক হিসাব খুলতে প্রয়োজন আরও বাড়তি কিছু তথ্য।
একক মালিকানাধীন ব্যবসায়িক হিসাব• ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)
• পরিচিতিদানকারী ব্যক্তি দ্বারা স্বাক্ষর করা দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
• নমুনা স্বাক্ষর (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)
• স্থানীয় সরকার সংস্থা, যেমন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন কাউন্সিল কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সের কপি
• বাড়ি কেনা অথবা আমদানি ও রপ্তানি–সংক্রান্ত কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় অনুমতির প্রমাণ
• টিআইএন সার্টিফিকেট
লিমিটেড কোম্পানি হিসাব• ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)
• কোম্পানির মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যয়িত অনুলিপি
• ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট
• পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরুর সার্টিফিকেট
• হিসাব খোলা ও পরিচালনার জন্য সব অংশীদারের যথাযথ অনুমতি ও অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারীর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হবে
• নির্দিষ্ট ফরমে পরিচালকদের নাম ও ঠিকানা
• স্বাক্ষরকারীদের ছবি
• ট্রেড লাইসেন্সের কপি
• আবেদনপত্র ও আবেদনকারীদের ছবির পেছনে পরিচিতিদানকারীর স্বাক্ষর
• হিসাব পরিচালনাকারীদের নামের তালিকা, নিয়োগপত্র ও নমুনা স্বাক্ষর
• একক অথবা যৌথ মালিকানাধীন হিসাবের ক্ষেত্রে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সব পরিচালক ও মালিকের পরিচিতিমূলক তথ্য
যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব
• ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)
• অংশীদারত্বের চুক্তিপত্র
• অংশীদারদের ঠিকানাসহ নামের তালিকা
• অংশীদারদের সভায় গৃহীত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অনুলিপি
• ট্রেড লাইসেন্সের কপি
• স্বাক্ষরকারী বা অংশীদারদের ছবি
• নমুনা স্বাক্ষর (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে)
• আবেদনপত্র ও আবেদনকারীদের ছবির পেছনে পরিচিতিদানকারীর স্বাক্ষর
• ব্যক্তিগত হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী পরিচালক ও অংশীদারদের পরিচিতিমূলক তথ্য প্রদান করতে হবে। হিসাব খোলা ও পরিচালনার জন্য অংশীদারদের যথাযথ অনুমতি ও হিসাব পরিচালনাকারীর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হবে
• প্রকৃত ব্যবসা ও অংশীদারত্বের প্রমাণ হিসেবে সর্বশেষ পরিচালনা রিপোর্ট ও অডিট রিপোর্ট (যেখানে প্রযোজ্য) প্রদর্শন করতে হবে