পেহেলগামের ঘটনায় একের পর এক বাড়ি ধ্বংস, সরকারকে সতর্ক করল কাশ্মীরের দলগুলো
Published: 28th, April 2025 GMT
একের পর এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর বাড়ি ধ্বংস করা নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে সতর্ক করল সব রাজনৈতিক দল। প্রায় সবাই বলেছেন, এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা মানুষকে নতুনভাবে বিচ্ছিন্ন করে তোলে।
উপত্যকার রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই জারি রাখতে হবে, কিন্তু ভুল পদক্ষেপ ঠিক নয়। তাতে হিতে বিপরীত হবে।
পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর নৃশংস আক্রমণে ২৬ জনের মৃত্যুর পর জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন উপত্যকাজুড়ে জঙ্গি সন্ধান শুরু করেছে। এই অভিযানে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ডজনখানেক ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি ভাঙার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বুলডোজার। কোথাও নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণও ঘটানো হয়েছে। ভেঙে দেওয়া বাড়ির ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
২২ এপ্রিল পেহেলগাম–কাণ্ডে জড়িত বলে যাঁদের স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের ঘরবাড়িও রয়েছে। আর আছে সন্দেহভাজন উগ্রপন্থীদের বাড়ি। এমনই একজন কুপওয়ারা জেলার কালারুস এলাকার ফারুক আহমেদ টেডওয়া। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ফারুক আহমেদ ১৯৯০ সাল থেকেই নিখোঁজ। অভিযোগ, পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর তাঁর আর খোঁজ নেই। গত শনিবার ফারুকের বাড়ি ধূলিসাৎ করার পর সেই পরিবারের একজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘পরিবার ছেড়ে ফারুক সেই কবে থেকে নিরুদ্দেশ। কোথায় গেছে, কেমন আছে কিছুই জানা নেই। আমাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হলো। আমাদের অপরাধ কী? কোথায় যাব আমরা?’
এই প্রশ্নেই তোলপাড় হচ্ছে উপত্যকা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই বিচারের উত্তর খুঁজছেন। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গণমাধ্যমে এই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘পেহেলগামের ঘটনার পর অবশ্যই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক লড়াই চালাতে হবে। মূলে আঘাত করতে হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন ভুল পদক্ষেপ না হয়।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, নিরীহ নিরপরাধ মানুষদের হত্যার প্রতিবাদে উপত্যকার সব মানুষ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছে। প্রতিবাদী হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। সেই আচরণ স্বতঃস্ফূর্ত। এই সমর্থনকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। দেখতে হবে কোনো ভুল পদক্ষেপ যেন না করা হয়। নিরপরাধ কাশ্মীরিদের যেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয়।’
জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকার থাকলেও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার সুবাদে আইনশৃঙ্খলা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের কোনো ভূমিকাই নেই। নিরাপত্তা–সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও বৈঠকও করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে বাইরে রেখে। পেহেলগামের ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে ও জঙ্গি ধরতে ইতিমধ্যে পাঁচ শ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। সহস্রাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সন্দেহভাজন পলাতক সন্ত্রাসীদের পারিবারিক আস্তানা।
পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি ও পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোনের পাশাপাশি হুরিয়ৎ কনফারেন্সের চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুকও প্রশাসনের বুলডোজার নীতির সমালোচনা করেছেন। মেহবুবা ‘এক্স’ মারফত জানিয়েছেন, ‘সরকারের উচিত সাবধানী পদক্ষেপ নেওয়া। সন্ত্রাসবাদী ও শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মধ্যে ফারাকটা বুঝতে হবে। এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা নিরপরাধ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। যাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, তাঁরা যেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ মেহবুবা আরও বলেছেন, ‘সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, প্রশাসনকে যেন সতর্ক করে দেওয়া হয়। সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হলে জঙ্গিদেরই লাভ।’
একই কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রী সাজ্জাদ লোন। তিনিও এক্সে লিখেছেন, ‘পেহেলগাম–কাণ্ডের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ও গণপ্রতিবাদ গত ৭৮ বছরে কাশ্মীরে দেখা যায়নি। মানসিকতার এ এক বিশাল পরিবর্তন। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, আশা করি তাঁরা এই পরিবর্তনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা মানুষকে পুরোনো মানসিকতায় ফিরিয়ে নেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ এমন ভাবতে শুরু করেছে যে একজনের অপরাধের ফল পরিবারের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে। একজনের শাস্তি পুরো পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে।’
হুরিয়ৎ কনফারেন্স নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকও সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘গোটা কাশ্মীর সমষ্টিগতভাবে পেহেলগামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে। অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু নিরীহ মানুষেরা যেন শাস্তি না পান। লাগামছাড়া ধরপাকড় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার ছবি মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।’ প্রশাসনের প্রতি তাঁর আবেদন, ‘অনুগ্রহ করে নিরীহ মানুষদের শাস্তি দেবেন না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র সরক র র পদক ষ প বল ছ ন মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুর জন্য গ্রোথ হরমোন কেন, কখন
একটি শিশুর লম্বা হওয়ার জন্য শরীরে যে হরমোন বিশেষ ভূমিকা রাখে, সেটির নাম গ্রোথ হরমোন। গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি হলে শিশু খর্ব হতে পারে। অনেকে মনে করেন, গ্রোথ হরমোন দিয়ে সব খাটো শিশুকে লম্বা বানানো সম্ভব। ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু অভিভাবক তাঁদের শিশুকে লম্বা করার জন্য গ্রোথ হরমোন দেওয়ার আরজি নিয়ে আসছেন, যা যুক্তিসংগত নয়।
লম্বা হওয়ার জন্য গ্রোথ হরমোন এককভাবে দায়ী নয়। একটি শিশু কতটা উচ্চতা লাভ করবে, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। গ্রোথ হরমোন ছাড়াও শিশুর ঠিকভাবে লম্বা হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো দায়ী, তা হলো গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাস্থ্য (যা আবার মায়ের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল), নবজাতকের ওজন ও সুস্থতা (জন্মগত রোগ ও জন্মপরবর্তী পুষ্টির কোনো সমস্যা থাকলে উচ্চতা কমে যেতে পারে), গড় পারিবারিক উচ্চতা (জাতিগত, বংশগত বৈশিষ্ট্য), দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি ও বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত দীর্গমেয়াদি রোগ-ব্যাধির যথাযথ চিকিৎসা না হওয়া। সেই সঙ্গে লম্বা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের (থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোন) অভাব বা অকার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য। একজন শিশু হরমোন–রোগবিশেষজ্ঞ শিশুর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে লম্বা হওয়ার অন্তরায় অন্যান্য কারণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্রোথ হরমোন থেরাপি লাগবে কি না, তা ঠিক করে থাকেন।
যেসব ক্ষেত্রে গ্রোথ হরমোন দিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা হলো—
● শরীরে গ্রোথ হরমোনের অভাব বা ঘাটতি যদি প্রমাণিত হয়;
● প্রাডার উইলি সিনড্রোম নামক বিশেষ রোগ;
● জন্মগত স্বল্প ওজনের শিশু, যারা পরেও ঠিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়নি; ৪. যেসব ক্ষেত্রে খাটো হওয়ার কারণ জানা যায়নি; ৫. টারনার সিনড্রোম;
● শক্স জিন হাপ্লো–ইনসাফিশিয়েনসি;
● নুনান সিনড্রোম;
● দীর্ঘমেয়াদি কিডনি বিকলজনিত রোগ।
গ্রোথ হরমোন অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং দুষ্প্রাপ্যও বটে। তা ছাড়া শিশু একটু খাটো মানেই গ্রোথ হরমোনের অভাব, তা–ও নয়। তাই যদি মনে হয়, শিশু যথাযথ বাড়ছে না, তাহলে পুরো বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য একজন শিশু হরমোন–রোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট