লক্করঝক্কর যান সরাতে সময় আর এক মাস, বিকার নেই মালিকদের
Published: 28th, April 2025 GMT
সড়ক থেকে পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে নিতে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। নতুন যানবাহন কেনার জন্য মালিকদের ঋণ পেতে সহায়তার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমা শেষ হবে মে মাসে। তবে মালিকদের কোনো গরজ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচলকারী ৭৫ হাজারের বেশি বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরির আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরোনো এসব যানবাহন দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণ করছে।
পুরোনো যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মালিকেরা। এবারও তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের মধ্যে পুরোনো গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে। নির্ধারিত সময়ের পর পুরোনো যান চললে তা জব্দ করে ধ্বংস করা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে একটা ডাম্পিং স্টেশন (পুরোনো যান ফেলার স্থান) পাওয়া গেছে। ঢাকায় একটা স্টেশন তৈরির চেষ্টা চলছে।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, পরিবহনমালিকেরা নিজে থেকে পুরোনো যান সরিয়ে নিলে নতুন যান কিনতে সরকার সহায়তা করবে। সহজ শর্তে ঋণ পেতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। মালিকেরা নিজ উদ্যোগে না সরালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মে মাসের পর এসব যান চলতে দেবে না।
পুরোনো যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মালিকেরা। এবারও তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।মালিকেরা কী করছেনজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের আমলে ‘যানজট ও বায়ুদূষণ’ নিরসনে পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়াসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে দুই দফা বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠক হয় গত বছরের ২৪ অক্টোবর। পরেরটি হয় ১৯ ডিসেম্বর।
২৪ অক্টোবরের বৈঠকে পুরোনো যানবাহনের বিষয়ে দুটি বড় সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমটি হলো, আগামী ছয় মাস পর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করে সড়ক থেকে প্রত্যাহার এবং সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের মালিকেরা যাতে নতুন যানবাহন কিনতে পারেন, সে জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিআরটিএ বলছে, সারা দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮১। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬১টি বাস-মিনিবাসের বয়স ২০ বছরের বেশি। অর্থাৎ সরকারি সিদ্ধান্তমতে, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বাস-মিনিবাসই আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে।সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উদ্যোগটি সড়ক পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের। এতে স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্তের পর ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ঢাকা মহানগর থেকে অপসারণের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে বিআরটিএ। গত ১৬ জানুয়ারি যানবাহন মালিক সমিতিগুলোকে বিআরটিএর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, পুরোনো যানবাহনের স্থলে নতুন যানবাহন নামাতে ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তার প্রয়োজন হলে সরকারের সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করা হয়। এর বাইরে বিআরটিএর আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব পরিবহন মালিকদেরই দেওয়া হয়েছে।
মালিকেরা কী করছেন, জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে। বিআরটিএর চিঠি পাওয়ার পর তিনি সাধারণ পরিবহন মালিকদের চিঠি দিয়ে এবং বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি নতুন বাস-ট্রাক কিনতে ব্যাংকঋণ বা কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে সে আবেদন করতে বলেছেন। কিন্তু সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবহন খাতের এই নেতা আরও বলেন, সরকার ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তার কথা বলেছে। কিন্তু এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে ভালো হতো।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আগে থেকে তৎপর না হলে এবারও পুরোনো যানবাহন সড়ক থেকে ওঠানো যাবে না এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হবে। নির্ধারিত সময়ের পর পুলিশ পুরোনো যানবাহন জব্দের পদক্ষেপ নিলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা তখন বাস-মিনিবাস বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে মানুষের দুর্ভোগ হবে। মানুষকে জিম্মি করে সরকারি সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য করতে পারেন মালিকেরা।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরির মেয়াদ পেরিয়েছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। এমনকি ৫০ বছরের পুরোনো ট্রাক-লরিও চলছে।৩৮% বাসের মেয়াদ নেই২০২৩ সালের মে মাসে বিআরটিএ এক প্রজ্ঞাপনে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকারের ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করে দেয়। এতে বলা হয়, বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হবে ২০ বছর এবং ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ২৫ বছর।
বিআরটিএ বলছে, সারা দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮১। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬১টি বাস-মিনিবাসের বয়স ২০ বছরের বেশি। অর্থাৎ সরকারি সিদ্ধান্তমতে, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বাস-মিনিবাসই আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে নিবন্ধিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরির সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৭৪। এর মধ্যে ২৫ বছরের চেয়ে বেশি পুরোনো এই ধরনের যানবাহনের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৮১। অর্থাৎ আয়ুষ্কাল পেরোনো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরি প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরির মেয়াদ পেরিয়েছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। এমনকি ৫০ বছরের পুরোনো ট্রাক-লরিও চলছে।
মে মাসের পর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহন আর চলতে পারবে না। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআরটিএ ‘আনফিট’ (ফিটনেসবিহীন) যানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানবারবার সিদ্ধান্ত, বারবার পিছু হটা২০১০ সালে সরকার রাজধানীতে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর আরও কয়েক দফা একই ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে একবার নির্বাহী আদেশও জারি করা হয়। কিন্তু পুরোনো এসব যানবাহন বন্ধ করা যায়নি।
২০২৩ সালে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণের পর মে মাসে পুরোনো যান উঠিয়ে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআরটিএ। সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের কথা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিআরটিএ। উল্টো একই বছরের আগস্টে প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহনমালিকদের চাপে সরকার পিছু হটে।
২০২৩ সালের জুনে পুরোনো গাড়ি দুর্ঘটনা ও পরিবেশদূষণের কারণ উল্লেখ করে এগুলো ধ্বংস করতে (স্ক্র্যাপ) খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন বিভাগ। এতে বলা হয়, আয়ুষ্কাল ফুরানো গাড়ি ধ্বংস করতে হবে সরকার নিয়োজিত ঠিকাদারের মাধ্যমে। তবে এই নীতিমালা আর চূড়ান্ত হয়নি।
বিগত সরকারের আমলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, যিনি এখন কারাগারে।
এবার আর সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। মালিকদের বোঝাতে হবে, তাঁদের পরিবারও এই দেশেই থাকে, একই বায়ুতে শ্বাস নেয়। তাঁরা না বুঝলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।বায়ুদূষণ–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালামমালিক ও শ্রমিক সংগঠন মিলে পরিবহন খাতকে নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব করার যেকোনো উদ্যোগে বাধা দিত। তারাই তখন পুরোনো যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে বাস-ট্রাক চালিয়ে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিত মালিক-শ্রমিক সমিতিগুলো। ফলে সরকারও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারত না। এখন পরিবহন খাতের নেতৃত্ব বদলেছে, কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
নতুন সরকারের আমলে গত বছরের ৬ অক্টোবর ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিআরটিএকে চিঠি দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে পুরোনো ডিজেলচালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালুর অনুরোধ জানানো হয়। তবে ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় নিঃসরণ পরীক্ষা করার মতো যন্ত্রপাতি বিআরটিএর নেই। ফলে এই চিঠির কোনো কার্যকারিতা দেখা যায়নি।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের পর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহন আর চলতে পারবে না। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআরটিএ ‘আনফিট’ (ফিটনেসবিহীন) যানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।
বায়ুদূষণের কারণ পুরোনো যাননির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে ‘বাংলাদেশে বায়ুদূষণের উৎস: ইটভাটা ও যানবাহনের অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের গবেষণায় এসেছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ১০ দশমিক ৪ শতাংশের উৎস যানবাহন।
গবেষণায় আরও এসেছে, ঢাকার ৮৪ শতাংশ বাস-মিনিবাস নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে কালো ধোঁয়া ছাড়ে। ৬৯ শতাংশ ট্রাক ও ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ হালকা যানবাহন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি দূষণ করছে। বেশি মাত্রায় দূষণ করে ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন’ অনুযায়ী, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ছিল ঢাকা। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফিনল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ রোধ করা গেলে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জনের অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। বায়ুদূষণের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, তাদের ৪৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরের মানুষ।
বায়ুদূষণ–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, আপনি দেখবেন ঢাকায় পুরোনো বাসগুলো কী পরিমাণ কালো ধোঁয়া ছাড়ে। যানবাহন যত পুরোনো হয়, দূষণ তত বাড়ে। বায়ুদূষণের একটি বড় অংশের কারণ এই পুরোনো যানবাহন। তিনি বলেন, এবার আর সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। মালিকদের বোঝাতে হবে, তাঁদের পরিবারও এই দেশেই থাকে, একই বায়ুতে শ্বাস নেয়। তাঁরা না বুঝলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আয় ষ ক ল প র য় পর বহন ম ল ক ২০ বছর র ব শ সরক র র আমল বছর র প র ন ল গ সরক র র পর বহন খ ত প রথম আল ক ২৫ বছর র হন ম ল ক নত ন য ন ধ ব স কর ব আরট এ ফ টন স ন বন ধ পর ব শ হয় ছ ল আওয় ম অবস থ দশম ক বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
লক্করঝক্কর যান সরাতে সময় আর এক মাস, বিকার নেই মালিকদের
সড়ক থেকে পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে নিতে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। নতুন যানবাহন কেনার জন্য মালিকদের ঋণ পেতে সহায়তার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমা শেষ হবে মে মাসে। তবে মালিকদের কোনো গরজ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচলকারী ৭৫ হাজারের বেশি বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরির আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরোনো এসব যানবাহন দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণ করছে।
পুরোনো যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মালিকেরা। এবারও তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের মধ্যে পুরোনো গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে। নির্ধারিত সময়ের পর পুরোনো যান চললে তা জব্দ করে ধ্বংস করা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে একটা ডাম্পিং স্টেশন (পুরোনো যান ফেলার স্থান) পাওয়া গেছে। ঢাকায় একটা স্টেশন তৈরির চেষ্টা চলছে।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, পরিবহনমালিকেরা নিজে থেকে পুরোনো যান সরিয়ে নিলে নতুন যান কিনতে সরকার সহায়তা করবে। সহজ শর্তে ঋণ পেতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। মালিকেরা নিজ উদ্যোগে না সরালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মে মাসের পর এসব যান চলতে দেবে না।
পুরোনো যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মালিকেরা। এবারও তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।মালিকেরা কী করছেনজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের আমলে ‘যানজট ও বায়ুদূষণ’ নিরসনে পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়াসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে দুই দফা বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠক হয় গত বছরের ২৪ অক্টোবর। পরেরটি হয় ১৯ ডিসেম্বর।
২৪ অক্টোবরের বৈঠকে পুরোনো যানবাহনের বিষয়ে দুটি বড় সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমটি হলো, আগামী ছয় মাস পর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করে সড়ক থেকে প্রত্যাহার এবং সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের মালিকেরা যাতে নতুন যানবাহন কিনতে পারেন, সে জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিআরটিএ বলছে, সারা দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮১। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬১টি বাস-মিনিবাসের বয়স ২০ বছরের বেশি। অর্থাৎ সরকারি সিদ্ধান্তমতে, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বাস-মিনিবাসই আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে।সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উদ্যোগটি সড়ক পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের। এতে স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্তের পর ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ঢাকা মহানগর থেকে অপসারণের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে বিআরটিএ। গত ১৬ জানুয়ারি যানবাহন মালিক সমিতিগুলোকে বিআরটিএর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, পুরোনো যানবাহনের স্থলে নতুন যানবাহন নামাতে ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তার প্রয়োজন হলে সরকারের সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করা হয়। এর বাইরে বিআরটিএর আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব পরিবহন মালিকদেরই দেওয়া হয়েছে।
মালিকেরা কী করছেন, জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে। বিআরটিএর চিঠি পাওয়ার পর তিনি সাধারণ পরিবহন মালিকদের চিঠি দিয়ে এবং বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি নতুন বাস-ট্রাক কিনতে ব্যাংকঋণ বা কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে সে আবেদন করতে বলেছেন। কিন্তু সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবহন খাতের এই নেতা আরও বলেন, সরকার ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তার কথা বলেছে। কিন্তু এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে ভালো হতো।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আগে থেকে তৎপর না হলে এবারও পুরোনো যানবাহন সড়ক থেকে ওঠানো যাবে না এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হবে। নির্ধারিত সময়ের পর পুলিশ পুরোনো যানবাহন জব্দের পদক্ষেপ নিলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা তখন বাস-মিনিবাস বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে মানুষের দুর্ভোগ হবে। মানুষকে জিম্মি করে সরকারি সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য করতে পারেন মালিকেরা।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরির মেয়াদ পেরিয়েছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। এমনকি ৫০ বছরের পুরোনো ট্রাক-লরিও চলছে।৩৮% বাসের মেয়াদ নেই২০২৩ সালের মে মাসে বিআরটিএ এক প্রজ্ঞাপনে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকারের ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করে দেয়। এতে বলা হয়, বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হবে ২০ বছর এবং ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ২৫ বছর।
বিআরটিএ বলছে, সারা দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮১। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬১টি বাস-মিনিবাসের বয়স ২০ বছরের বেশি। অর্থাৎ সরকারি সিদ্ধান্তমতে, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বাস-মিনিবাসই আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে নিবন্ধিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরির সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৭৪। এর মধ্যে ২৫ বছরের চেয়ে বেশি পুরোনো এই ধরনের যানবাহনের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৮১। অর্থাৎ আয়ুষ্কাল পেরোনো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরি প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরির মেয়াদ পেরিয়েছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। এমনকি ৫০ বছরের পুরোনো ট্রাক-লরিও চলছে।
মে মাসের পর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহন আর চলতে পারবে না। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআরটিএ ‘আনফিট’ (ফিটনেসবিহীন) যানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানবারবার সিদ্ধান্ত, বারবার পিছু হটা২০১০ সালে সরকার রাজধানীতে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর আরও কয়েক দফা একই ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে একবার নির্বাহী আদেশও জারি করা হয়। কিন্তু পুরোনো এসব যানবাহন বন্ধ করা যায়নি।
২০২৩ সালে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণের পর মে মাসে পুরোনো যান উঠিয়ে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআরটিএ। সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের কথা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিআরটিএ। উল্টো একই বছরের আগস্টে প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহনমালিকদের চাপে সরকার পিছু হটে।
২০২৩ সালের জুনে পুরোনো গাড়ি দুর্ঘটনা ও পরিবেশদূষণের কারণ উল্লেখ করে এগুলো ধ্বংস করতে (স্ক্র্যাপ) খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন বিভাগ। এতে বলা হয়, আয়ুষ্কাল ফুরানো গাড়ি ধ্বংস করতে হবে সরকার নিয়োজিত ঠিকাদারের মাধ্যমে। তবে এই নীতিমালা আর চূড়ান্ত হয়নি।
বিগত সরকারের আমলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, যিনি এখন কারাগারে।
এবার আর সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। মালিকদের বোঝাতে হবে, তাঁদের পরিবারও এই দেশেই থাকে, একই বায়ুতে শ্বাস নেয়। তাঁরা না বুঝলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।বায়ুদূষণ–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালামমালিক ও শ্রমিক সংগঠন মিলে পরিবহন খাতকে নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব করার যেকোনো উদ্যোগে বাধা দিত। তারাই তখন পুরোনো যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে বাস-ট্রাক চালিয়ে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিত মালিক-শ্রমিক সমিতিগুলো। ফলে সরকারও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারত না। এখন পরিবহন খাতের নেতৃত্ব বদলেছে, কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
নতুন সরকারের আমলে গত বছরের ৬ অক্টোবর ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিআরটিএকে চিঠি দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে পুরোনো ডিজেলচালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালুর অনুরোধ জানানো হয়। তবে ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় নিঃসরণ পরীক্ষা করার মতো যন্ত্রপাতি বিআরটিএর নেই। ফলে এই চিঠির কোনো কার্যকারিতা দেখা যায়নি।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের পর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহন আর চলতে পারবে না। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআরটিএ ‘আনফিট’ (ফিটনেসবিহীন) যানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।
বায়ুদূষণের কারণ পুরোনো যাননির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে ‘বাংলাদেশে বায়ুদূষণের উৎস: ইটভাটা ও যানবাহনের অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের গবেষণায় এসেছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ১০ দশমিক ৪ শতাংশের উৎস যানবাহন।
গবেষণায় আরও এসেছে, ঢাকার ৮৪ শতাংশ বাস-মিনিবাস নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে কালো ধোঁয়া ছাড়ে। ৬৯ শতাংশ ট্রাক ও ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ হালকা যানবাহন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি দূষণ করছে। বেশি মাত্রায় দূষণ করে ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন’ অনুযায়ী, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ছিল ঢাকা। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফিনল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ রোধ করা গেলে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জনের অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। বায়ুদূষণের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, তাদের ৪৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরের মানুষ।
বায়ুদূষণ–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, আপনি দেখবেন ঢাকায় পুরোনো বাসগুলো কী পরিমাণ কালো ধোঁয়া ছাড়ে। যানবাহন যত পুরোনো হয়, দূষণ তত বাড়ে। বায়ুদূষণের একটি বড় অংশের কারণ এই পুরোনো যানবাহন। তিনি বলেন, এবার আর সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। মালিকদের বোঝাতে হবে, তাঁদের পরিবারও এই দেশেই থাকে, একই বায়ুতে শ্বাস নেয়। তাঁরা না বুঝলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।