শিশু কবিরাজের ঝাড়ফুঁক পেতে মানুষের ভিড়, সামলাতে পরিবারে হিমশিম
Published: 28th, April 2025 GMT
চার বছরের এক শিশুর ঝাড়ফুঁক দেওয়া পানি ও তেল ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে অসুস্থ রোগীরা- এমন বিশ্বাসে শিশুটির বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। এ খবর এতোটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, উপচে পড়া লোক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ভাটি লঙ্গরপাড়া এলাকায় এমন কাণ্ডে মানুষের ভিড় জমলেও সচেতন মহল বলছেন, এটা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়।
পানি পড়া পেতে নারীদের লাইন
চার বছরের শিশুটির নাম লাবীব। স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী মো.
প্রথমে তার পরিবারের সদস্যদের রোগ মুক্তি, পরে তার আত্বীয় স্বজনের রোগমুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলাসহ জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। এরপর থেকেই বিভিন্ন রোগীকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে যাচ্ছেন শিশু কবিরাজ। তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, এটা আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা।
বাবার কোলে লাবীব
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি নিজের মনে বাবার সাথে পানি দিয়ে খেলছে। দুইজন মানুষ বালতি বালতি পানি এনে বোতলে ভরছেন। তার বাবা তাকে খেলাধুলা বন্ধ করে পানিতে ফু দিতে বলছে। অমনি ছেলেটি মাথা এগিয়ে পানিতে ফু দিচ্ছে। অপরদিকে শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে পানি ও তেলের বোতল এগিয়ে শিশুটির মুখের কাছে ধরছেন। আবার কখনও শিশুটি তার বাবার কোলে বসে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের বোতল ভর্তি পানি, তেলের শিশিতে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা এবং বিকেল ৫টায় দুই ধাপে চলে এই ঝাড়ফুঁক। আগত রোগীর মধ্যে নারীরাই বেশি।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান বলেন, “আমার দ্বিতীয় বারের মতো স্ট্রোক হওয়ার পর একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। এই শিশু কবিরাজের চিকিৎসায় আমি এখন সুস্থ। আমি এখন লাঠি ছাড়া দ্রুত হাঁটতে পারি।”
খেলাধুলার সময়ে নিস্তার নেই, সেখানেও দিতে হচ্ছে ঝাড়ফুঁক
শিশুটির বাবা বলেন, “আমার ছেলে শত শত মানুষের রোগ ভালো করেছে বলে রোগীরা আমাদের জানিয়েছেন। তার এই ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। প্রথমে সে তার মাকে চিকিৎসা করে ভালো করেছে। পরে সুস্থ করেন এলাকার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানীয় কয়েকজন ফুটবল খেলোয়াড়দের। এরপর থেকে জানাজানি শুরু হলে মানুষের ভিড় জমে। আল্লাহর নাম নিয়ে আমার ছেলে ফু দিয়ে দিলে অনেকেই সুস্থ হয়ে যায় বিধায় হাজার হাজার লোক আসে। এর জন্য আমার ছেলে আজ পর্যন্ত একটি টাকা কারো কাছে নেয়নি।”
এসময় তিনি তার ছেলেকে একজন আলেম বানাতে চান বলে দোয়া চান।
শেরপুর সিভিলে সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, “এটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতিতে রোগ মুক্তির কোন ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “এই ঘটনাটি অবৈজ্ঞানিক এবং কুসংস্কার এ নিপতিত একটা ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। ঠিকানাসহ অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।”
ঢাকা/তারিকুল/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আল ল হ পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রীকে হত্যার পর শ্বশুরকে লাশ নিয়ে যেতে বলা সেই স্বামী গ্রেপ্তা
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রী নাদিরা বেগমকে (৩১) হত্যার অভিযোগে স্বামী আমিনুল ইসলাম খোকনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব-১ ও র্যাব-৯ এর যৌথ অভিযানে সিলেট মহানগরীর সুরমা থানাধীন হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নাদিরা বেগম ও আমিনুল ইসলাম দম্পতি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা কপাটিয়াপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তারা দুজনেই স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
র্যাব জানায়, গত ২৪ এপ্রিল এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার পরপরই র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত খোকনের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন: মামলার রায় দ্রুত কার্যকর চান স্বজনরা
র্যাব-১ স্পেশালাইজড কোম্পানির কোম্পানি কমান্ডার কে এম এ মামুন খান চিশতী বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোকন স্ত্রীকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।”
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রেপ্তার আমিনুল ইসলামকে র্যাব থেকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে হত্যার পর মরদেহ ঘরের মেঝেতে রেখে শ্বশুরকে ফোন করেন আমিনুল। বলেন, “আপনার মেয়েকে মেরে ফেলছি। এসে লাশ নিয়ে যান।” এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান তিনি।
ঢাকা/রফিক/রাজীব