সেই ‘ছোট সাজ্জাদ’ ফের ৩ দিনের রিমান্ডে
Published: 28th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’ ওরফে বুড়ির নাতিকে জেলার হাটহাজারী থানার একটি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে কড়া পুলিশ পাহারায় আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে তোলা হয়।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো.
এর আগে ১৩ এপ্রিল বাকলিয়া থানার জোড়া খুনের মামলায় ‘ছোট সাজ্জাদে’র ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল তাহসিন হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চান্দগাও অদুরপাড়ায় গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসিন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া খুনের মামলার আসামি সাজ্জাদ।
সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ছোট সাজ্জাদ ও আরেক সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলার মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত বছরের ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস ও মাসুদ কায়ছার নামে দুই জন খুন হন। তারা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় মাসুদ কায়ছারের ছোট ভাই মো. আরিফ বাদী হয়ে সাজ্জাদসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় ছোট সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। ওই সময় গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যান তিনি। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন। পরে একই থানার ওসিকে ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। এরপর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরষ্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।
এরপর আত্মগোপনে চলে যায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের দুই সপ্তাহের মাথায় ২৯ মার্চ দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেটকারে দুর্বৃত্তের গুলিতে দুজন নিহত হন। জোড়া খুনের ঘটনায় ১ এপ্রিল বাকলিয়া থানায় নিহত মোহাম্মদ মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এলজিইডির প্রকৌশলী রাশেদুলের ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাট, কলেজ শিক্ষক স্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ
ঢাকার অভিজাত একটি আবাসিক এলাকায় প্লট কিনেছেন। কিনেছেন ফ্ল্যাট। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন চার কোটি টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে সোয়া কোটি টাকার। দুদক বলছে, তাঁর স্ত্রীর নামেও রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। বিপুল এই সম্পদ করা হয়েছে ঘুষের টাকায়।
তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম। তাঁর স্ত্রী অপর্ণা রানী দাস একটি কলেজের শিক্ষক। এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
রাশেদুল ও অপর্ণার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদন ধরে অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ ২২ কোটি ৮০ লাখ ৫৭ হাজার ৭০৭ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছেন দুদকের সহকারী কমিশনার মো. সাজিদ-উর-রোমান।
এই দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাঁর (রাশেদুল) প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জড়িত। দুদককে এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবিদুদকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন প্রকৌশলী রাশেদুল। গত বছরের মে মাসে ছুটি নিয়ে বিদেশে পড়তে গেছেন। এখন পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ডে আছেন।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশেদুলের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি এফডিআর হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে সোনালী ব্যাংকের হিসাবে তাঁর বেতনের টাকা জমা হয়। বাকি ব্যাংক হিসাবগুলোতে তিনি ঘুষের টাকা লেনদেন করেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশেদুলের নামে শেল্টেক্ ব্রোকারেজ লিমিটেডে একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রয়েছে। এই বিও হিসাবের মাধ্যমে রাশেদুলের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।
দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনুসন্ধানকালে রাশেদুল ও অপর্ণার নামে ব্যাংক হিসাবে থাকা সব টাকা অবরুদ্ধ এবং আবাসিক এলাকার প্লট ও রাশেদুলের নিজ এলাকা কুমিল্লার হোমনায় থাকা একটি জমি জব্দ করা হয়েছে।
রাশেদুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশেদুলের নামে শেল্টেক্ ব্রোকারেজ লিমিটেডে একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রয়েছে। এই বিও হিসাবের মাধ্যমে রাশেদুলের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।দেড় লাখ টাকার ঘড়িরাশেদুলের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ এলজিইডি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিলাসী জীবন কাটাতেন। দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন। নিয়মিত যেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। অনুসন্ধানে এসব হোটেলে লাখ লাখ টাকা বিল দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকার অভিজাত একটি বিপণিবিতান থেকে ২০১৮ সালে চারটি দামি ঘড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত রাশেদুল বেতন পেয়েছেন ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৯ টাকা। সঞ্চয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া করমুক্ত আয় ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৬১ টাকা, মায়ের কাছ থেকে উপহার ৪ লাখ টাকা, বাবা ও দাদির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকার জমি পেয়েছেন, নিকটাত্মীয়র কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকার। পাশাপাশি জিপিএফ (সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল) সুদ ও অন্যান্য আয় ৩ লাখ ২৭ হাজার ১৩৮ টাকা এবং রেমিট্যান্স থেকে ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন রাশেদুল।
দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনুসন্ধানকালে রাশেদুল ও অপর্ণার নামে ব্যাংক হিসাবে থাকা সব টাকা অবরুদ্ধ এবং আবাসিক এলাকার প্লট ও রাশেদুলের নিজ এলাকা কুমিল্লার হোমনায় থাকা একটি জমি জব্দ করা হয়েছে।স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদরাশেদুলের স্ত্রী অপর্ণা কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষক। দুদক সূত্র বলছে, অপর্ণার নামে ৯১ লাখ ৯১ হাজার ৮৪২ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকে (কিশোরগঞ্জ শাখা) রয়েছে ৬০ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৮ টাকা। নগদ রয়েছে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অপর্ণা ২০১৭ সালে বিসিএসে (শিক্ষা ক্যাডার) উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৬ টাকা সঞ্চয় করেছেন তিনি। বেতন-ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ১০ হাজার ৮১০ টাকা। আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৮ টাকা।
অনুসন্ধানে দুদক অপর্ণার বৈধ আয় পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৪ টাকা। এর বাইরে তাঁর নামে থাকা সব সম্পদই অবৈধ।
রাশেদুলের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ এলজিইডি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিলাসী জীবন কাটাতেন। দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন। নিয়মিত যেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। অনুসন্ধানে এসব হোটেলে লাখ লাখ টাকা বিল দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।জড়িত সবার জবাবদিহি প্রয়োজনঅনুসন্ধানে দুদক রাশেদুল আলমের বিপুল অর্থসম্পদের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস পায়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাশেদুলের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। পরে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদুল যে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন, সেটা বৈধভাবে সম্ভব নয়। তিনি দুর্নীতির মাধ্যমেই এই বিপুল সম্পদ করেছেন।
গত ১৫ বছরে দুর্নীতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জড়িত। দুদককে এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।