Samakal:
2025-04-28@02:56:22 GMT

গরুর হাট বসাতে শ্মশান ভরাট

Published: 27th, April 2025 GMT

গরুর হাট বসাতে শ্মশান ভরাট

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে বালু ভরাট করে গরুর হাট তৈরির কাজ চলছে। ইউএনও এরশাদুল আহমেদের নির্দেশে এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের। এ ঘটনায় ইউএনওর বিচার ও অপসারণ দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন।
রোববার দুপুরে ঘণ্টাখানেক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে দু’পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধরা। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউএনওর অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অলক ঘোষ ছোটন, রাজিপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জনি দে, ঈশ্বরগঞ্জ মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব গৌড়, উচাখিলা ইউনিয়নের সার্বজনীন শ্মশান কালীমন্দির কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক রাজীব সাহা রাজু প্রমুখ।
তাদের ভাষ্য, দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষের শেষকৃত্য হয়ে আসছে। সেখানে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের শেষকৃত্য হয়েছে। প্রতিবছর তাদের স্মরণে এখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। তাদের এই স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে ইউএনও যে পরিকল্পনা করেছেন, জীবন থাকতে তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। বিক্ষুব্ধ লোকজন বলেন– দফা এক দাবি এক, ইউএনওর পদত্যাগ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনওকে অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, উচাখিলা ইউনিয়নের বাজারের পাশেই কাঁচামাটিয়া নদী। নদীপাড় ঘেঁষে শ্মশানের অবস্থান। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের ফেলা বালুর নিচে চাপা পড়ে গেছে শ্মশানের নির্মাণাধীন কালীমন্দির। শ্মশানের দাহকার্য সম্পন্ন করার স্থানটির পাশের পিলারও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এই শ্মশানে শেষবারের মতো একজনের দাহকার্য সম্পন্ন হয়। চুল্লির পাশে মাটির কলসে সেই চিহ্ন পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৬ শতক জমি প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্মশানের নামে দান করেন একজন। এর পর ১৯৪৭ সালের সিএস এবং ১৯৬২ সালের আরওআর শ্মশানের নামেই হয়। তবে ১৯৮৪-৮৫ সালের বিআরএসে শ্মশানের নাম না এসে সেটি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানে উঠে যায়। ওই অবস্থায়ও শ্মশানে দাহকার্য হতো। এক পর্যায়ে চারপাশের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে যায়। এর পর গত বছরের নভেম্বরে সাবেক ইউএনও সারমিনা সাত্তার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনসহ সেটি উদ্ধার করে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। এর পর শ্মশানের নিজস্ব অর্থায়নে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা চলমান। এ অবস্থায় দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে গরুর হাট বসানোর জন্য বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
উচাখিলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আবেদীন খান সেলিম বলেন, ‘শ্মশানটি পুরোনো। আমি চাই শ্মশানের জায়গায় শ্মশান থাকুক। সেটি উচ্ছেদ না হোক। গরুর হাটের জায়গায় গরুর হাট থাকুক। ইতোমধ্যে গরুর হাটের জন্য অনেকটা খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও উদ্ধার করা হোক। তবুও শ্মশান স্থানান্তর না হোক। 
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি ওবায়দুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, শ্মশানের বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতেই ইউএনও শ্মশান-সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসেন। ওই আলোচনায় রোববার যারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ করছেন তারা ছিলেন না। সেটাই তাদের আক্ষেপ। কারণ তাদের ছাড়াই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছি, আপনারা একটা তারিখ এবং তালিকা দেন। আপনাদের সঙ্গেও বসা হবে। এর পর আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটাই মানা হবে।’
জানতে চাইলে ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, শ্মশানের কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে এক ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। উচাখিলা বাজারের গরুর হাটের ইজারা হচ্ছিল না। সরকারের রাজস্ব আয়ের স্বার্থে উদ্ধারকৃত (শ্মশানের পাশেই) সরকারি খাসজমি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বালু ভরাটের সময় নির্মাণাধীন মন্দিরের ৩টি পিলার ভেঙে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার রাতেই শ্মশান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপাতত কাজ বন্ধ রেখে সোমবার (আজ) পরিদর্শন করে শ্মশান, মন্দির, স্নানঘর অক্ষত রেখে একটি স্থায়ী উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও একটি পক্ষ ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে বিক্ষোভ করেছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর র হ ট মন দ র অবর ধ বছর র সহক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলের সেই পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়া হলো নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের ৫ শতাধিক বই

‘ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে নিয়ে যাওয়া পাঁচ শতাধিক বই অবশেষে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ, বইগুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেওয়া ব্যক্তি ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের বৈঠক শুরু হয়। আলোচনা শেষে ইউএনও মো. শাহীন মাহমুদ বইগুলো পাঠাগারে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন।

উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে ইউএনও মো. শাহীন মাহমুদ উভয় পক্ষকে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। পরে পাঠাগারের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ কীভাবে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে যেসব যুবক বই নিয়ে আসার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষ থেকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পাঠাগারে যাতে ধর্মবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না হয় এবং ধর্মবিরোধী ও নিষিদ্ধ কোনো বই যেন না রাখা হয়। সভায় উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে বইগুলো অভয়ারণ্য পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে ইউএনও উভয় পক্ষকে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে বইগুলো ফিরিয়ে দেন। ইউএনও শাহীন মাহমুদ বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। দুই পক্ষই বৈঠকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বইগুলো পাঠাগারে দিয়ে আসা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বইগুলো নিয়ে আসার নেতৃত্ব দেওয়া গোলাম রব্বানী রিশাদ বলেন, ‘আমরা পাঠাগার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করেছি, ভবিষ্যতে তারা যেন ধর্মবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না করেন এবং ধর্মবিরোধী ও নিষিদ্ধ বই পাঠাগারে না রাখেন।’

২০১৫ সালে ধনবাড়ী উপজেলা সদরে অভয়ারণ্য পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা হয়। ‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’ স্লোগান সামনে নিয়ে পরিচালিত পাঠাগারটিতে বর্তমান সদস্যসংখ্যা দেড় শতাধিক। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একদল যুবক গিয়ে পাঁচ শতাধিক বই নিয়ে যান। তাঁরা বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। তাঁদের দাবি, বইগুলো ধর্মবিরোধী।

তবে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন, কোনো ধর্মবিরোধী বই ছিল না। সেদিন যে বইগুলো নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই ছিল।

আরও পড়ুন‘ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে পাঠাগার থেকে নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের বই নিয়ে গেলেন একদল যুবক২৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাঙ্গাইলের সেই পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়া হলো নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের ৫ শতাধিক বই
  • দিনাজপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২০০ বস্তা চাল জব্দ
  • দিনাজপুরে চালকলের গুদামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৫ হাজার কেজি চাল জব্দ
  • পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে লুটের অভিযোগ
  • ধামরাইয়ে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত
  • শ্রীপুরে বনের জমি উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান
  • সড়কে নিম্নমানের ইট-খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ, নির্মাণকাজ আটকে দিলেন ইউএনও
  • গাজীপুরে বনভূমি থেকে ৫৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
  • চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রভাষকের বিরুদ্ধে মামলা