৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
Published: 27th, April 2025 GMT
পিএসসি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
আজ রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া ও পিএসসির কয়েকজন সদস্য বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। পরে পিএসসির সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূইয়া রাজু ভাস্কর্যে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে।
পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া বলেন, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ৮ মে থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীদের আরও যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো রয়েছে তার জন্য সরকারের একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী দ্বিতীয় একটি পিএসসি করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকগুলো সংস্কারের চিন্তা সরকারের আছে। সে বিষয়গুলোতে এখানকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা বিদ্যুৎ উপদেষ্টার সঙ্গে বসে তাঁদের মতামতগুলো তুলে ধরবেন। এ ছাড়া পিএসসির যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন তাঁদের সঙ্গেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বসবেন। আলোচনার মাধ্যমে তাঁরা পিএসসির একটা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য কাজ করবেন। তিনি বলেন, যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে এবং শিক্ষার্থীদের এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যুক্ত করে নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে।
ডাব খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট প এসস র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পিএসসি সংস্কারের দাবিতে বাকৃবিতে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সংস্কার ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে তারা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন।
পরে রাত ৮টার দিকে একটি মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে শুরু হয়ে কেআর মার্কেট হয়ে আব্দুল জব্বার মোড়ে গিয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা রেললাইনে অবস্থান নেন। এ সময় ঢাকাগামী চলন্ত অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেন তারা। পরে রাত ৯ টা ৫৫ মিনিটিতে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করলে আবার রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা পিএসসি সংস্কারের দাবিতে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বহিষ্কার ও শাস্তি নিশ্চিত করা; ভবিষ্যতে ৪৬তম বিসিএস বাতিলের সম্ভাবনা দূর করা; আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ৪৪তম বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফল (ভাইভায় উত্তীর্ণদের) প্রকাশ করতে হবে; জুলাইয়ের শেষে অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৪৬তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে।
তারা আরো দাবিগুলো হলো- ৪৫তম বিসিএস থেকে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১০০ করতে হবে; ৪৫তম বিসিএস এর লিখিত ফলাফল জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ করে ২০২৫ সালের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হবে; প্রত্যেকটি বিসিএসের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে; প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ করতে হবে; লিখিত পরীক্ষার রুটিন ন্যূনতম দুই মাস আগে প্রকাশ করতে হবে; দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে পিএসসি সদস্যের সংখ্যা ২৫-৩০ জনে উন্নীত করতে হবে; লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গতিময়তা, নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা আনয়নে কমিশনে বসে সরাসরি খাতা দেখার ব্যবস্থা করতে হবে; ভাইভার পূর্বে ক্যাডার পছন্দক্রম পুনরায় নির্ধারণের সুযোগ দিতে হবে; পরবর্তী সব বিসিএসে ভাইভার আগে পুনঃপছন্দের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে; চূড়ান্ত ফলাফলের আগে প্রাক-যাচাই প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে; শুধু ফৌজদারি মামলা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সুস্পষ্ট অভিযোগ ব্যতীত চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ আটকানো যাবে না; নন-ক্যাডার বিধি-২০২৩ বাতিল করতে হবে এবং বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শতাব্দী কর বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীরা সবসময় আন্দোলন করতে চাই না। কিন্তু বরাবরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে অন্যায়গুলো হয়, তাতে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হই। আমরা ছাত্র সমাজ বিসিএসের ভাইভাতে ২০০ মার্কের পরিবর্তে ১০০ মার্ক রাখার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষার কোনো সার্কুলারেই আমরা কোনো সংস্কার দেখতে পাইনি।”
তিনি বলেন, “বেকার ছাত্র সমাজের জন্য দেওয়া চাকরিতে যদি তাদের প্রয়োজনের কথাই শোনা না হয়, তাহলে সেই চাকরি বা বিজ্ঞপ্তির দেওয়ার মানে টা-কি। পিএসসি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ৪৭তম বিসিএস থেকে এ বিষয়টি সংস্কার করা হবে। তাহলে ৪৫তম’তে সংস্কার করতে অসুবিধা কোথায়? ৪৫তম’তে সংস্কারের পর বাকিগুলো সংস্কার করতে হবে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী