মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান
Published: 27th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেছেন তিনি। রোববার ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ?’ শিরোনামে এই সাক্ষাৎকার আল–জাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
উপস্থাপক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে শেখ হাসিনার পতনের পরের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অন্যরা রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। যেমন লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারে?
জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দুটি বিষয়, একটি জনগণের অধৈর্য নিয়ে, তা মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেতে দাও। আজ আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি। এই দিকেই আমরা যাচ্ছি। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হস্তান্তর করো।’
অপর দিকে রোহিঙ্গা একটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘের সাথে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি এবং এই লোকেরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি। আমাদের চিন্তা হলো, কীভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া তৈরি করা যায়, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং নিরাপদ পুনর্বাসন করতে পারে।’
সাক্ষাৎকারে বিগত দিনের অনিয়ম–দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচন জুনের পরে যাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্ন করেছিলেন আল–জাজিরার উপস্থাপক। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কি না। তারা এখনো কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তাহলে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কি না, সে প্রশ্ন সাক্ষাৎকারে উঠে আসে। জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সেটা অন্যান্য দল আছে যারা বলতে পারে যে এই আইনের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কর্মসূচি, ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদককে নোটিশ
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রোববার ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রক্টর মোখলেসুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাবিপ্রবি শাখা ৮ এপ্রিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে একটি মানববন্ধন করে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং ২১ এপ্রিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যানারে মানববন্ধন ও র্যালি করেন, যা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় একটি শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধ করেছেন এবং অপরাপর ছাত্রসংগঠনগুলোর ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাই আপনাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রক্টর বরাবর লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
গত ১৪ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের নাঈম সরকার মনোনীত হন।
গত বছরের ৬ নভেম্বর ক্যাম্পাসে দলীয় ব্যানারে রাজনৈতিক কার্যক্রমে আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান প্রথম আলোকে বলেন, 'যে দুইটা বিষয়ে কর্মসূচি করেছি, সেগুলো জাতীয় ইস্যু। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে লুকিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে চাইনি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাউকে জোর করিনি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা যদি অমান্য হয়ে থাকে, আমরা তিনদিনের মধ্যে শোকজের জবাব দেব।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে শৃঙ্খলাভঙ্গের কাজ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আইন অমান্য করে কর্মসূচির কারণে ছাত্রদলের নেতাদের শোকজ করা হয়েছে। লিখিতভাবে তাঁদের জবাব পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।