আর্থিকভাবে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে সহায়তা দিতে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন এবং এ-সংক্রান্ত একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে জনকল্যাণমূলক আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও সরকারি খরচে আইনি সেবার বিষয়ে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজে যেন প্রত্যেক মানুষ নিজেদের মধ্যে বিরোধে না জড়িয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা নিয়ে বসবাস করতে পারে।

দেশে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলো এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে এসব অফিস এখন ‘এডিআর কর্নার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা প্রণয়ন করে লিগ্যাল এইড অফিসারদের এডিআর বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আইনি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে একে অনেকাংশে পরিপূর্ণ আকার প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের ক্ষমতাকে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে দেওয়ানি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন 
করে যাচ্ছেন। 

বিদ্যমান আইনে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যেসব আইনি সেবা প্রদান করা হয় তা হলো– যে কোনো ব্যক্তি তার আর্থিক সামর্থ্য যা-ই হোক না কেন, সরকারি আইনগত সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত আইনগত তথ্যসেবা গ্রহণ, আইনগত পরামর্শ গ্রহণ কিংবা বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আপসযোগ্য বিরোধ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সেবা; অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলার প্রয়োজন হলে সরকারি খরচে মামলা করা ও পরিচালনা; মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ; আদালত থেকে প্রেরিত মামলার মধ্যস্থতা; বিনামূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ; আইনজীবীর ফি পরিশোধ; মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় পরিশোধ; ফৌজদারি মামলার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ; মধ্যস্থতাকারী বা সালিশকারীর সম্মানী পরিশোধ; ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ এবং বিনামূল্যে রায় কিংবা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ।
সাধারণ নাগরিকরা জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের টোল ফ্রি নম্বর- ১৬৪৩০ এ কল করে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে এবং বিডি লিগ্যাল এইড অ্যাপ ব্যবহার করে বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নিতে পারেন। এ ছাড়া জাতীয় লিগ্যাল এইড দপ্তরের ই-মেইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও তা সম্ভব। এমনকি বিদেশ থেকে +৮৮০৯১২৩১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করেও বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নেওয়া যায়।

দেশে এখন প্রায় ৪৪ লাখ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন (সমকাল, ১২ নভেম্বর ২০২৪)। এই মামলাজট কমাতে দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যন্ত লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হলেও সীমাবদ্ধতার কারণে এ আইনের সুফল দেশের আপামর জনসাধারণ ভোগ করতে পারছে না। 
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে চলমান কার্যক্রম আমাদের নতুন ভাবনা জাগিয়েছে। আমরা চাই মামলাজটমুক্ত বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্ণ একটি চমৎকার পরিবেশ। দেশে আদালতের বাইরে লিগ্যাল এইড অফিস হোক মামলা নিষ্পত্তির অন্যতম কেন্দ্র।

মহসিনুল হক: স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ), কুমিল্লা
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ বস র লক ষ য পর শ ধ ব কল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ধানমন্ডিতে মশা নিধনসহ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান, অংশ নিলেন ৭০০ ব্যক্তি

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় মশক নিধনসহ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়েছে। একযোগে চালানো এই অভিযানে ৭০০ ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগ আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে অভিযান শুরু হয়। চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, অভিযানে সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৫০ জন কর্মী ও স্বাস্থ্য বিভাগের ৫০ জন মশক কর্মী অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১০০ জন, বিডি ক্লিনের ৫০ জন ও ধানমন্ডি সোসাইটির ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকাকে সাতটি জোনে ভাগ করা হয় বলে জানায় ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ। তারা বলে, এভাবে মূল রাস্তা, লেক, পার্ক, মসজিদ, ঈদগাহসংলগ্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশকনিধন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

অভিযান চলাকালে অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ঢাকাকে সুন্দর ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ডিএসসিসিসহ বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সোসাইটিগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজউক, গণপূর্ত, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ঢাকা মহানগর পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার অংশগ্রহণে সরকার একটি সুপরিকল্পিত-সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) প্রণয়ন করছে। এ ছাড়া পয়োনিষ্কাশনের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন হচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএসসিসির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন অভিযান পরিচালনা করা হবে। ধানমন্ডি থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে।

ডিএসসিসির প্রশাসক আরও বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা শহরকে নিয়ে ৩টি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৯১৭ সালে স্যার প্যাট্রিক গেডেস যে মাস্টারপ্ল্যান করেছিলেন, সেখানে বলা হয়েছিল, ঢাকা হবে একটি বাগানের শহর। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেসরকারি হাউজিং শুরু হওয়ার পরে ঢাকা থেকে সবুজ ও জলাশয় হারিয়ে যেতে থাকল। তাঁরা ঢাকার সবুজ ফিরিয়ে আনতে এ বছর বর্ষার শুরুতেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

অভিযান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অতিথিরা জনসচেতনতামূলক একটি র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। অভিযান চলাকালে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান, সংস্থাটির সব বিভাগীয় প্রধান ও ধানমন্ডি সোসাইটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সচিব নিয়োগে ‘মতামত’ প্রতিফলিত হয়নি, নাখোশ কর্মকর্তারা
  • ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠন করছে এনসিপি, ২ মে ঢাকায় সমাবেশ
  • ২ মে ঢাকায় বড় সমাবেশ করবে এনসিপি
  • নেতৃত্ব, নীতি ও প্ল্যাটফর্ম, ই-ক্যাবের ভবিষ্যৎ করণীয়
  • নীতির স্বাধীনতা নাকি প্রশাসনিক বিভাজন
  • ৮০০ কর্মী-স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ডিএসসিসির বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান
  • ধানমন্ডিতে মশা নিধনসহ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান, অংশ নিলেন ৭০০ ব্যক্তি
  • ধানমন্ডিতে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান ডিএসসিসির  
  • ৮০০ কর্মী-স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ধানমন্ডিতে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান ডিএসসিসির