লাল-সমুদ্রে গোল-উৎসবে চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
Published: 27th, April 2025 GMT
মোহাম্মদ সালাহ গোল করলেন। ছুটে গেলেন গ্যালারির কাছে। এক দর্শকের হাত থেকে মুঠোফোন নিয়ে নিজেই তুলে ফেললেন সেলফি। যে সেলফির ক্যাপশনে লেখা হতে পারে একটিই শব্দ—লাল!
শুধুই লাল!
সব ধ্বনি, সব রং মুছে গিয়ে লিভারপুলে আজ রাজত্ব ছিল তো শুধুই লালের।
সেটিই তো হওয়ার কথা! লিভারপুলের জন্য যে আজ দিনটি ছিল উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার, লিগ জয়ের উৎসবে মাতার। পাঁচ বছর আগে যে উৎসব করা যায়নি করোনা নামের এক মহামারিতে পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায়। প্রিয় দল ৩০ বছর পর লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও সে বছর তাই উৎসব করতে পারেননি লিভারপুলের সমর্থকেরা। ইয়ুর্গেন ক্লপ নামের এক জাদুকরের তাই তিন দশক পরে লিভারপুলকে লিগ জিতিয়েও একটু অপূর্ণতা না থেকে পারে না।
জার্মান কোচের উত্তরসূরি আর্নে স্লটকে ওই বিবেচনায় ভাগ্যবানই বলতে হবে। লিভারপুল ফুটবল ক্লাব রেকর্ড ছোঁয়া ২০তম লিগ শিরোপাটা যে আজ নিশ্চিত করল দর্শকঠাসা অ্যানফিল্ডে। ছুঁয়ে ফেললে ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবল লিগ জয়ের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ড। লিভারপুলের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ডাচ কোচ নিশ্চিত করেই থাকবেন কোপাইটদের ভিক্টরি প্যারেডে। লিভারপুলের সমর্থকেরা যে প্যারেড সর্বশেষ করেছেন ১৯৯০ সালে ১৮তম লিগ শিরোপা জিতে। লিগ জয়ে তখন লিভারপুলই ছিল সবার ওপরে।
৩৫ বছর পর আজ অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামে লিভারপুল আবারও শীর্ষে উঠল টটেনহামকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে। একটি পয়েন্ট পেলেই চ্যাম্পিয়ন, এমন সমীকরণে ম্যাচে লন্ডন থেকে যাওয়া অতিথিদের ৫-১ গোলে হারিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয় নিশ্চিত করেছে লিভারপুল।
অথচ ম্যাচটি লিভারপুল শুরু করেছিল যতটা সম্ভব বাজেভাবেই। ১২ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েছিল দলটি। কর্নার থেকে আসা বলে খুব সহজেই এক হেড করে টটেনহামকে এগিয়ে দেন ডমিনিক সোলাঙ্কি। সেই সোলাঙ্কি, একটা সময়ে যাঁর গায়ে উঠেছিল লিভারপুলের লাল জার্সি।
শিরোপা-উৎসব করতে অ্যানফিল্ডে যাওয়া লিভারপুল সমর্থকেরা তখন কী ভেবেছিলেন কে জানে! তবে সালাহ-দিয়াজ-গাকপো-ম্যাকঅ্যালিস্টার, সবোসলাইয়েরা যে তেতে উঠেছেন ওই গোলে সেটি নিশ্চিত।
এরপর যা হলো সেটিকে কী বলা যায়? লিভারপুল তো এরপর ধ্বংস করল টটেনহামকে। সোলাঙ্কির গোলের চার মিনিট পরেই সমতা। মোহাম্মদ সালাহর দারুণ এক থ্রু ধরে দমিনিক সবোসলাই বাড়ালেন লুইজ দিয়াজের দিকে। বাঁ প্রান্ত থেকে উঠে আসা কলম্বিয়ান উইঙ্গার ভুল করেননি গোল করতে। সবোসলাই অফসাইড ছিলেন না, ভিএ্আর এটি নিশ্চিত করতেই উৎসবে মাতে অ্যানফিল্ড।
আরও চার মিনিট পর আরেকবার টটেনহামের জালে বল পাঠিয়েও অফসাইডের কারণে উদ্যাপন করতে পারেননি কোডি গাকপো। লিভারপুল এগিয়ে যেতে অবশ্য এরপর সময় নিয়েছে আর চার মিনিটই। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে গোল পেয়ে যান আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ২৪ মিনিটের সেই গোলের ১০ মিনিট পর টটেনহাম রক্ষণের ভিড়ের মধ্য থেকে গোল আদায় করে নেন গাকপো।
৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করা লিভারপুলকে ৬৩ মিনিটে ট্রেডমার্ক শটে চতুর্থ গোলটি এনে দেন সালাহ। এরপর সালাহর সেলফি তোলা শেষ হওয়ার ছয় মিনিট পর ডেসটিনি উদোগির আত্মঘাতী গোল ৫-১ বানিয়ে দেয় স্কোরলাইনটাকে।
এরপর লিভারপুল অপেক্ষা করেছে শুধু রেফারির শেষ বাঁশি বাজার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ম ন ট পর ল গ জয়
এছাড়াও পড়ুন:
আজ শেষ হচ্ছে চিঠি উৎসব
একসময় চিঠিই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। কাগজের পাতায় লেখা হতো অনুভূতির ভাষা—ভালোবাসা, অভিমান, অপেক্ষা কিংবা বিদায়ের কথা। আজকের দ্রুতগতির প্রযুক্তিনির্ভর যুগে চিঠি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই ভুলে যাওয়া চিঠিকে নতুন করে আবিষ্কারের লক্ষ্যে হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহণ–এর ব্যতিক্রমী ধারাবাহিক আয়োজন—চিঠি উৎসব ‘ডাকপিয়ন ৩’। গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
চিঠির গুরুত্ব ও আবেদন তুলে ধরতে ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে দেশ–বিদেশ থেকে চিঠি আহ্বান করে হিমু পরিবহণ। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে। অনেকেই তাঁদের পুরোনো চিঠি, পারিবারিক স্মৃতিচিহ্ন, প্রেমপত্র কিংবা কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির লেখা দুর্লভ চিঠি পাঠান। প্রাপ্ত চিঠিগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে সর্বমোট ৬৪টি চিঠি স্থান পেয়েছে এবারের প্রদর্শনীতে।
আরও পড়ুনটাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিং: দেশসেরা বুয়েট ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবির অবস্থান কোথায়২৫ এপ্রিল ২০২৫চিঠিগুলোর ধরনও বৈচিত্র্যময়। কিছু চিঠি কোনো প্রিয়জনের উদ্দেশে লেখা, কিছু আবার কখনো পাঠানো হয়নি—রয়ে গেছে ড্রয়ারে আটকে। কোনোটি নিছকই ব্যক্তিগত, আবার কোনোটি ইতিহাসের অংশ, যেখানে উঠে এসেছে বিশেষ কোনো সময়ের পটভূমি কিংবা সামাজিক বাস্তবতা। প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক রুপম জানান, ‘আমরা চেষ্টা করেছি এমন চিঠিগুলো তুলে ধরতে, যেগুলোয় শুধু লেখার সৌন্দর্য নেই, রয়েছে একটা সময়। একটা অনুভব।’
প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই ছিল উল্লেখযোগ্য দর্শনার্থীর ভিড়। নানা বয়সী দর্শনার্থী এসে পড়ছেন চিঠির পৃষ্ঠা। কেউ থমকে দাঁড়িয়েছেন কোনো ছাপার অক্ষরে। কেউবা নীরবে চোখ মুছছেন নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করে।
হিমু পরিবহণের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চিঠিকে শুধু একটি প্রদর্শনীর বস্তু হিসেবে দেখছে না; বরং এটি মানুষের অনুভূতি, সময় ও সম্পর্কের সাক্ষ্য বাহক হিসেবে নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে চায়।
আজ শনিবার বেলা তিনটা থেকে দুই দিনব্যাপী চিঠি প্রদর্শনী ‘ডাকপিয়ন ৩’–এর শেষ দিনের প্রদর্শনী। হুমায়ূন–ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহণের আয়োজনে এই ভিন্নধর্মী চিঠি উৎসবে দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন দেশ–বিদেশ থেকে সংগৃহীত ৬৪টি বাছাই করা চিঠি। যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত, ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের চিঠিও।
আরও পড়ুনপিএইচডি ফেলোশিপ দিচ্ছে সরকার, গবেষকেরা মাসে পাবেন ২৫০০০৫ ঘণ্টা আগে