সময়মতো বিচার হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী
Published: 27th, April 2025 GMT
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘কলেজছাত্রীর (নাম) এই মৃত্যু গোটা জাতির সামনে একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বলতে একটু দ্বিধা হয়, তবু বলতে হয়, সময়মতো বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত হলে সে হয়তো আজকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না।’
জুলাই আন্দোলনে এক শহীদের মেয়ের (১৭) জানাজায় অংশ নেওয়ার আগে আজ রোববার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকিতে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে। আজ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যা সাতটায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের মর্মবাণী হচ্ছে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আদালত হচ্ছে সেই জায়গা, মানুষ অন্য কোথাও বিচার না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়। সেটা হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। সেই বিচারব্যবস্থা থেকে যদি মানুষ বিচ্যুত হয়, বঞ্চিত হয়, তাহলে সেই সমাজে নৈরাজ্যের কালো অন্ধকার নেমে আসবে। সেই সমাজের মধ্যে পরিব্যাপ্ত এক ভয়ংকর হতাশা বহমান থাকবে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পরেও এখনো কেন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে? এখনো কেন পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে বখাটে ও সমাজবিরোধীরা আধিপত্য বিস্তার করবে? তারা যদি এখনো বিস্তার করে তাহলে গণতন্ত্র আইনের শাসন কোনো দিনও প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
রিজভী বলেন, ‘যে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবে জনগণের পক্ষে নিজের বুক পেতে বুলেট বরণ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, এই এক শোক না কাটতে আরেকটি শোকাবহ ঘটনা ঘটে গেল। তাঁর মেয়ে (নাম) পৃথিবী থেকে চলে গেল। এই যে শোক—একটি পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা এবং উপযুক্ত শব্দগুলো আমার জানা নেই।’
গত ১৫-১৬ বছরে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অনেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অনেকেই নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আয়নাঘর থেকে শুরু করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অনেকেই। আমরা সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিগুলো দেখেছি। সেখান থেকে মুক্তির জন্য যে সর্বশেষ গণ-অভ্যুত্থান এবং এক প্রচণ্ড পৃথিবী কাঁপানো একটি অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানে এই কলেজছাত্রীর (নাম) বাবা অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর সেই অবদান একটি গ্রামের একটি ব্যক্তির ছোট্ট অবদান নয়, তাঁর অবদানের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি নিষ্কৃতি পেয়েছে এক ভয়ংকর জগদ্দল পাথর থেকে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে যে এই গ্রামে এসেছি, তার সাহসটুকু জুগিয়েছেন এই ছাত্রীর (নাম) শহীদ পিতা। এত ছাত্র-তরুণের জীবন চলে গেল। অথচ বিচারপ্রক্রিয়া সঠিক জায়গায় আজও আসেনি।’
পরে কলেজছাত্রীর জানাজায় অংশ নেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, সহসভাপতি মশিউর রহমান, পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ (চুন্নু মিয়া), সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার, জেলা বিএনপির নেতা মজিবুর রহমানসহ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
খায়রুল হক ও আসাদুজ্জামান এখনও কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না, প্রশ্ন রিজভীর
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী ফ্যাসিবাদ কায়েমের মূল দোসর বিচারপতি খায়রুল হক এবং আসাদুজ্জামান এখনও কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না?
শুক্রবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান এর নির্দেশনায়— চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের ছোট ভাই ক্যান্সার আক্রান্ত মাহমুদুল্লাহ বিন জিসানের চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য আর্থিক সহায়তার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
রিজভী বলেন, ‘যাদের কারণে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা কেন আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে? যারা বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দিয়েছে যারা ফ্যাসিবাদকে চিরস্থায়িত্ব দান করার জন্য নিজেদের ওপর অর্পিত যে দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্ব শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করে গেছেন তাদেরকে এখনও কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি? কেন জাস্টিস খায়রুল হক এখনও গ্রেপ্তার হয়নি? উনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে বন্ধ করে দিয়ে স্তব্ধ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে এক ভয়ঙ্কর রাক্ষসী ফ্যাসিবাদ তৈরি করার নাৎসিবাদ তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সে কেন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে?’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘একজন নিরীহ মানুষ, যার সঙ্গে কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই, জনগণের অত্যন্ত সমাদৃত জনপ্রিয় একজন নেত্রী, দেশ-বিদেশে প্রশংসিত একজন নেত্রী, গণতন্ত্রের জন্য যিনি তার পরিবার সমস্ত সুখ শান্তিকে বিলীন করে দিয়ে দেশের মানুষ এবং মাটিকে ছেড়ে যিনি যাননি তাকে মিথ্যা মামলায় জাস্টিস আসাদুজ্জামান পাঁচ বছর সাজা দিয়ে দিলেন। তারপরে আবার হাইকোর্টে আরেকজন বিচারপতি এনায়েতুর রহিম তিনি আরও বাড়িয়ে দিলেন পাঁচ বছর। এরা কেন আজকে ধরাছোঁয়ার বাইরে?এরাই তো গণতন্ত্রের হত্যাকারী। এরাই তো ফ্যাসিবাদ কায়েমের জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছেন। আমরা যদি শহীদের রক্তকে ন্যূনতম মর্যাদা দিতে পারি এরা তো কেউ গ্রেপ্তারের বাইরে থাকার কথা নয়। তাহলে কেন আজকে এই সমস্ত ফ্যাসিবাদ কায়েমকারীরা, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারীরা এখনও বহাল তবিয়তে আছে? এরা যদি দেশে নাও থাকে, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই থাকুক, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং ধরার দায়িত্ব হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। সেই উদ্যোগ জনগণ দেখতে চায়।’
রিজভী বলেন, ‘খায়রুল হক যে অপরাধ করেছেন নিজের স্বার্থে, এটাতো প্রমাণিত। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করতে পারলে পুরস্কৃত হবেন, তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি চিফ জাস্টিসের মতো পদ থেকে তার চেয়ে ছোট পদে থাকার জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন এবং তার চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন।’
যারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনকে ধ্বংস করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনার জন্য, সেই নুরুল হুদা এখনও গ্রেপ্তার হয় না কেন এমন প্রশ্নও রাখেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘সেই সিইসি কে এম নুরুল হুদা এখনও কেন গ্রেপ্তার হয় না? এরাই তো হচ্ছে গণতন্ত্র হত্যাকারী, নির্বাচন ধ্বংসকারী, এরাই ভোটার বাদ দিয়ে গরু ছাগলকে দিয়ে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এই সমস্ত গণতন্ত্র বিনাশী অমানুষ দানবরা কি আজও গ্রেপ্তারের বাইরে থাকতে পারে? যারা হচ্ছে মূল অপরাধী, যাদের কারণে গত ১৫-১৬ বছর শেখ হাসিনার মতো একজন রক্ত পিপাসু নারী, যিনি ছোট মাসুম বাচ্চাদেরকে গুলি করে হত্যা করতে দ্বিধা করেননি তাকে যারা সহযোগিতা করেছে। তারা কেন আজকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে? এটা হতে পারে না।’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনির পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কোষাধক্ষ্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই জামান সেলিম, আবুল কাশেম, আলমগীর কবির, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য নাজমুল হাসান প্রমুখ।