ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলে থাকা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ফিরে পাওয়ার দাবি করেছে মস্কো। ইউক্রেনের সেনাদের কাছ থেকে ওই অঞ্চলের শেষ গ্রামটি দখল করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এ কাজে রুশ সেনাদের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সেনারাও লড়াই করেছেন বলে উল্লেখ করেছে মস্কো।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। পরে গত বছরের আগস্টে হঠাৎ করেই কুরস্কের বড় অংশ দখল করে নেয় ইউক্রেন। ওই ঘটনায় বেশ বিব্রত হয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন থেকেই কুরস্ক থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের হটাতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এর আগেও কুরস্কে বেশ কিছু এলাকার দখল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছিল তারা।

এরই মধ্যে গতকাল শনিবার একটি ভিডিও প্রকাশ করে ক্রেমলিন। তাতে দেখা যায়, রুশ সামরিক বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনের হাতে একটি প্রতিবেদন তুলে দিচ্ছেন। এ সময় গেরাসিমভ বলেন, কুরস্ক পুনর্দখলে রুশ সেনাদের সঙ্গে ‘কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে’ দায়িত্ব পালন করেছেন উত্তর কোরিয়ার সেনারা। তাঁরা ‘উচ্চ পেশাদারি, দৃঢ়তা, সাহস ও বীরত্ব’ দেখিয়েছেন।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হয়ে লড়াই করার জন্য আনুমানিক ১৪ হাজার সেনাসদস্য পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সাঁজোয়া যান ও ড্রোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে ওই সেনারা বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির খুব কাছাকাছি, বললেন ট্রাম্প২৬ এপ্রিল ২০২৫

এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে বিপুল পরিমাণ কামানের গোলা, রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ। এই অস্ত্র আদান-প্রদানের কথা স্বীকার করেনি মস্কো। কারণ, এমন আদান-প্রদানের ফলে জাতিসংঘের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘিত হবে। যদিও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সেনা সহায়তা নেওয়ার বিষয়টি কখনোই অস্বীকার করেনি ক্রেমলিন।

আরও পড়ুনকুরস্ক পুনর্দখলের দাবি রাশিয়ার, ইউক্রেন বলছে লড়াই চলছে৯ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ক রস ক র দখল

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো সমাধান

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি।        

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। 

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।  
লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।  

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে। 
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।  

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই। 

 

 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ