এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার
Published: 27th, April 2025 GMT
চলতি এপ্রিল মাসের ২৬ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ২২৭ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৭ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। এপ্রিলের ২৬ দিনের প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৯২ ডলার।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশকেও পানি দেওয়া বন্ধের দাবি বিজেপির
চাপহীন ক্রিকেটে সিরিজ জিততে চায় জিম্বাবুয়ে
কোনো প্রবাসী আয় আসেনি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের মাধ্যমে। এছাড়া বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমেও কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।
একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৬ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
ঢাকা/এনএফ/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২৬ দ ন প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
রাখাইনের জন্য করিডোর দিতে সম্মত বাংলাদেশ
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মার্চ কিংবা এপ্রিলে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে– এমন শঙ্কা থেকে সেখানে মানবিক সহায়তা দিতে বাংলাদেশের কাছে করিডোর চেয়েছিল সংস্থাটি। এ করিডোর ব্যবহারে কিছু শর্ত মানতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল রোববার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে করিডোরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। কারণ, এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত আপাতত বলছি না। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ করিডোর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা; অস্ত্র তো আর নেওয়া হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বাংলাদেশে প্রশাসনিক পর্যায়ে এ করিডোর নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে জাতিসংঘের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এটি দিতে রাজি হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বের কোনো মানবিক করিডোরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে ছিল না। যদিও মানবিক করিডোর দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকের সহায়তার জন্য। তবে এ ধরনের করিডোর অপরাধীরা নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। করিডোর দিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমও সংঘটিত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থার কারণে যত মানবিক করিডোর দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দিয়ে নানা অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখা গেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মানবিক করিডোর ব্যবহারের শর্ত জাতিসংঘকে দেওয়ার আগে ঢাকা ও নেপিদোকে এই করিডোর ব্যবহার বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। শর্তগুলো নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করবে ঢাকা।
প্রসঙ্গত, আনুষ্ঠানিক করিডোর না থাকলেও গত ছয় মাসে অন্তত দুইবার টেকনাফ থেকে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে জাতিসংঘ।
মানবিক করিডোরের নিরাপত্তা ঝুঁকি
জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশকে জানায়, রাখাইনে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে খাদ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বাংলাদেশকে বলছে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা না গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত বাকি জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় মানবিক করিডোর দিয়ে সহায়তা পাঠাতে চায় জাতিসংঘ।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপি রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে; আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ করিডোরকে মানবিক ক্ষেত্রে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করলেও এটি ঝুঁকিপূর্ণ। সহজ করে বললে, আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে সব সরবরাহ আটকে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এখন বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলো দখলে নেবে– এর নিশ্চয়তা নেই।
এমনিতেই রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতিসংঘকে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের চাহিদার বিপরীতে পূর্ণ সহযোগিতা পায়নি সংস্থাটি। ফলে বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করে রাখাইনে যে মানবিক সহায়তা যাবে, তা পর্যাপ্ত না হলে সেখানকার নাগরিকদের ত্রাণের উৎসে একসঙ্গে হামলে পড়ার শঙ্কা থাকে।
মিয়ানমারের এ অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু পাচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করিডোর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকার শঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দরকষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই। মানবিক করিডোর পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্য দেশেও চেষ্টা করা উচিত জাতিসংঘের।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরের সময় রাখাইনে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রভাব নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শুধু বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমারের সব প্রতিবেশী দেশকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেন সহিংসতা বন্ধে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ তৈরি হয়।
তিনি বলেন, প্রথমেই সহিংসতা বন্ধ, একই সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ বের করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম হবে। একই সময়ে মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা বাড়াতে হবে, যেন শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়। এ কারণেই আমাদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু আমরা নিশ্চয়ই যোগাযোগ করব। নিজেদের স্বার্থেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারব না।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা হলো পরে। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত তো আমাদের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারণ, মিয়ানমারের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের আমরা ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি। ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যা কিছু প্রয়োজন, সেটা তো আমাদের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সীমান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজেদের স্বার্থে কোনো না কোনোভাবে আমরা যোগাযোগ করতে পারি। তবে আমরা অবশ্যই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। কারণ, আরাকান আর্মি স্বীকৃত কোনো শক্তি না।’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি প্রবেশ করে বর্ষবরণ করেছে– এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই না।’
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরের কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বর্তমানে ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৬৭৫। এখনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ এখন এদের ঘর করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বলছে।