নিউজ প্রকাশের জেরে জাবি সাংবাদিককে হুমকি, প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 27th, April 2025 GMT
ছাত্রদলের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জাগোনিউজ২৪.কম এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন করেন জাবিতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এ সময় তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অপেশাদার শব্দচয়নের প্রতিবাদ করেন।
এতে জাবি সাংবাদিক সমিতির সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মেহেদী মামুনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দসহ অনেকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
আরো পড়ুন:
জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
জাবিতে অবিলম্বে নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি
জাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ছাত্র রাজনীতির মৌলিক সংস্কার এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে একজন সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদ জানাতে। কোনো সংবাদে ত্রুটি থাকলে সেটি সংশোধনের জন্য যথাযথ প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা না করে সংবাদপত্রের ওপর পেশিশক্তি প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলা ফ্যাসিস্ট আচরণের বহিঃপ্রকাশ।”
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে যে অশোভন ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি বড় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন অপেশাদার আচরণ হলে, সারাদেশে থাকা অন্যান্য নেতাকর্মীদের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে বলছি, ছাত্রদল তাদের বক্তব্যের ভাষা সংশোধন এবং দলের অপকর্মের সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “গত ১৫ বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা তাদের কলম চালিয়ে গেছে। আপনারা যারা নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছেন, আপনাদের ভয়-ভীতি তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্রদল যে ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হস্তক্ষেপ।”
তিনি বলেন, “ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যে বিবৃতি দিয়েছে তা অন্যান্য ইউনিটগুলোকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আরো উদ্বুদ্ধ করবে। তার সংবাদ প্রকাশের কোনো ধরনের ভুল থাকলে তার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়। আপনারা যদি ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়াবে।”
গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “আমাদের ভাই সাংবাদিক সৈকত ইসলাম ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল, সে বিষয়ে অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে একটি বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিল। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সৈকত শুধু একা নয়। আমরা হাজার হাজার সৈকত এখনো বেঁচে আছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা সৈকতের পাশে আছি। শুধু সৈকত নয়, সব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময়ই তাদের পাশে আছি।”
গত ২৪ এপ্রিল জাগোনিউজ২৪.
প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে সাব্বির আহমেদ নামে সময়ের আলোর জনৈক স্টাফ রিপোর্টার জাগোনিউজ২৪.কম এর জাবি প্রতিবেদক সৈকত ইসলামকে নানাভাবে জেরা করেন ও হুমকি দেন। পরে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পত্রিকা অফিসে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়া হয় ও রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অপেশাদার শব্দচয়ন করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাবি প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতিসহ দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম বাতিল চায় ছাত্রদল
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আজ রোববার রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানিয়েছে।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ এবং এই হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছিল। এর অধীনে থেকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মী জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবপরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থানের পরে এই প্ল্যাটফর্মের কাজ শেষ হলেও ইউনিয়ন পর্যন্ত এর কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম বাতিল চাচ্ছি।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনকে পুনর্বাসন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জনগণ এই চেষ্টা মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই ছাত্রদল নেতা। এ সময় তিনি পারভেজ হত্যাকাণ্ডে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন।
এ সময় জাহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. আবু হোরায়রা। ওই চারজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবাহান নিয়াজ (তুষার), টিঅ্যান্ডটি ইউনিট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম হোসাইন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া হক ও ফাতেমা তাহসিন।
আবু হোরায়রা বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অনেক বেশি। এ কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘টার্গেট কিলিং’ করা হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক মহল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে এই হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে রাজনীতিতে আসতে না পারেন, অনেকে সে জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ সময় তিনিও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মটি বিলুপ্ত ঘোষণার দাবি জানান।
ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে নিহত জাহিদুল ইসলামের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।’
মানববন্ধনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সিদ্দিকী, সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক, শাহ নিয়াজ রাহাত, ফেরদৌস আহমেদ রুবেল, মোহাম্মদ সাকিব, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সোলায়মান কাদেরসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ব্যানারে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।