নওগাঁয় আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় সমবায় সমিতির মালিককে পিটুনি
Published: 27th, April 2025 GMT
নওগাঁর মান্দায় আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় একটি সমবায় সমিতির মালিককে পিটুনি দিয়েছেন গ্রাহকেরা। রোববার দুপুরে উপজেলার সতিহাট বাজার এলাকায় তাঁকে পিটুনি দিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে তাঁকে উপজেলার মৈনম এলাকায় নিয়ে নিজেদের কবজায় রাখেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা।
ওই ব্যক্তির নাম আবদুল মান্নান। তিনি সোনালী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং মৈনম ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত হিসেবে নেওয়া টাকা ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সেই টাকা মাঠেই পড়ে আছে। যাঁরা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন, বিভিন্ন অজুহাতে তাঁরা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। মাঠ থেকে টাকা ওঠানোর চেষ্টা চলছে। টাকাগুলো উঠে এলে গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আমার টাকা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু এরপরও সমিতির কিছু সদস্য আজ আমাকে হেনস্তা করলেন। এ বিষয়ে আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।’
গ্রাহকদের অভিযোগ, বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাসিক ও বার্ষিক এবং স্থায়ী আমানত হিসেবে গ্রাহকদের কাছে টাকা সংগ্রহ করেন সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন আক্তার। শুরুর দিকে মুনাফার টাকা দিলেও বেশ কয়েক দিন ধরে মুনাফা ও আমানতের টাকা ফেরত দিতে তাঁরা টালবাহানা করছেন। এ অবস্থায় আমানতের টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিলে সমিতির সাইনবোর্ড গুটিয়ে নিয়ে সটকে পড়ার পাঁয়তারা করছিলেন তাঁরা দুজন। বেশ কয়েক দিন ধরে আবদুল মান্নান ও সমিতির অন্য কর্মকর্তারা আত্মগোপনে ছিলেন। আজ সতিহাট বাজারে তাঁকে দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা তাঁকে আটকে রাখেন।
সমিতির কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনালী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয় উপজেলার সতিহাট বাজারে অবস্থিত। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সমিতিটি। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানতের নামে টাকা সংগ্রহ করেন। পাঁচ বছরে আড়াই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে দুই হাজার টাকা করে মুনাফার দেওয়ার শর্তে গ্রাহকেরা সেখানে টাকা রাখতেন। প্রথম দিকে সঠিকভাবে মুনাফার টাকা পরিশোধ করা হলেও ছয় মাস ধরে টালবাহানা শুরু করেন সমিতির কর্মকর্তারা
ফারমিন আক্তার নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ওই সংস্থার সভাপতি আবদুল মান্নান আমার কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নেন। দেড় বছর ধরে মুনাফা দিচ্ছেন না। আমানতের টাকা ফেরত দিতেও টালবাহানা করছেন। আমাদের আশঙ্কা, টাকা ফেরত না দিয়ে সমিতির কর্মকর্তারা যেকোনো মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারেন। তাই আজকে গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে আটকে রাখেন। টাকা ফেরত না দিলে ছাড়া হবে না।’
আরেক গ্রাহক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এক লাখ টাকায় মাসিক দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার অঙ্গীকারে আমার কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মান্নান। সঠিকভাবে কয়েক মাস মুনাফা পেয়েছি। বর্তমানে সংস্থার লোকজন কার্যক্রম গুটিয়ে আত্মগোপনে আছেন। আবদুল মান্নানকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজকে দুপুরে সতিহাট বাজারে পেয়ে গ্রাহকেরা তাঁকে আটকান।’
মান্দা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুর রশীদ বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে সোনালী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ অবস্থায় গ্রাহকের টাকা আটকে রাখা সঠিক হয়নি। আমানতের টাকা ফেরত পাওয়া গ্রাহকের ন্যায্য অধিকার। তবে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াও সঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে বিকেলে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন কর মকর ত গ র হক র ব যবস উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সমকালে সংবাদ প্রকাশের পর লম্বাশিয়া পাহাড়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করল প্রশাসন
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লম্বাশিয়া পাহাড় ধ্বংস করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। লম্বাশিয়া পাহাড়টি বালু প্রকৃতির, যার ফলে এ পাহাড় ঘেঁষে যাওয়া সাতগরিয়া ছড়ার পানির পথ পরিবর্তন করে দেয় বালুখেকোরা। আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ে পাহাড়। শ্যালো মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হয় বালু। এভাবেই চলছে দেড় যুগ ধরে।
এ ছড়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে এক কিলোমিটারজুড়ে পাহাড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। রোববার দৈনিক সমকালে ‘লম্বাশিয়া পাহাড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই’ শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হয়। এ সংবাদ প্রকাশের এক দিন পর রোববার দুপুরে লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর ঢিবি নষ্ট করে দেওয়া হয়। বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত অবৈধভাবে মজুদ করা পানি কেটে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বালু পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত রাস্তা কেটে গর্ত তৈরি করে দেওয়া হয়, রাস্তার মাঝে পিলার পুঁতে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়।
লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন লায়েল ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সঙ্গে ছিলেন চুনতির রেঞ্জ অফিসার মো. আবীর হাসান, সাতগড় বিটের বিট অফিসার মহসিন আলী ইমরানসহ থানা পুলিশ ও বনবিভাগের সদস্যরা।
২০২৩ সলের ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক সমকালে ‘অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই, কিলোমিটার জুড়ে ক্ষতচিহৃ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের পরও বনবিভাগ ও প্রশাসন রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। তখনই বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ বালু উত্তোলন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আরেক দল দূর্বৃত্ত কাঁটাতার তুলে আবারও অবৈধ বালু উত্তোলন করে।