ঐকমত্যের বাইরে সংস্কার করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 

বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ’র নেতৃত্বে বিজেপির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন বিজেপির মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোস্তফা তামজিদ প্রমুখ। বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

আমির খসরু বলেন, আমরা দেশে বাকশাল করতে যাচ্ছি না। সবাইকে যে একমত হতে হবে, এটা যারা চিন্তা করে- এটা তো একটা বাকশালী চিন্তা। যেটা শেখ হাসিনা করেছিলেন। বিভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন দর্শন, চিন্তা-ভাবনা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে। যেখানে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাইরে সংস্কার করার কোনো সুযোগ নাই। এর বাইরে যেটা করতে যাবে, সেটা আপনাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে। সুতরাং যেগুলো ঐকমত্য হয়েছে, এ বিষয়গুলো কেনো জাতির সামনে তুলে ধরা হচ্ছে না। এটাই প্রশ্ন। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু আরও বলেন, ইতিমধ্যে সবাই জমা দিয়েছে। অনেকদিন সময় চলে গিয়েছে। আলোচনা শেষ। কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, এটার জন্য এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না। জাতিকে জানান, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, জাতি জানুক। ওই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সনদে সই করে দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই। খুব সহজ ব্যাপার। এর বাইরে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। আজকে যে প্রেক্ষাপট, এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী রোডম্যাপ না দেওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আগামী দিনের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কম ট র ব এনপ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালান ৩ চেয়ারম্যান

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কয়েকমাস ধরে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন নৌকা প্রতিকের তিন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে ঐ তিন ইউনিয়নের জনগণ। 

চেয়ারম্যানরা কোথায় আছেন তার হদিস কেউ জানে না। তারা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র।

অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালানো চেয়ারম্যানরা হলেন- ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহম্মেদ শেখ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। তারা পাঁচ জনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। 

সেসময় টুঙ্গিপাড়ার মতো দেশের অধিকাংশ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সরকার। 

তারপর থেকে উপজেলার ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী ও বর্নির ইউপি চেয়ারম্যানরা অফিস করলেও পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহম্মেদ আত্মগোপনে থেকে যান। তখন তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দায়িত্ব পান।

এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ। তারপর থেকে বাকি তিন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন।

২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন ঐ তিন ইউপি চেয়ারম্যান। আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা নিজ এলাকার জনগণের ফোনও রিসিভ করছে না। কখনো কখনো রিসিভ করলেও বিভিন্ন আবেদন সচিবদের কাছে রেখে যেতে বলছেন।

বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, হাফেজ মোহাম্মদ মোস্তাইনসহ অনেকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল ঠিকমতো পরিষদে থাকেন না। নিজেদের কাজ ফেলে রেখে কয়েকমাস ধরে জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘুরছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। আর অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।”

তারা আরো বলেন, “চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষরের জন্য জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। বর্নি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।

বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাস খানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দেই। আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দুই একদিন পর পর ফাইলটি নিয়ে যান। আর চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পরে আবার পাঠিয়ে দেন। এভাবেই চলছে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ।”

ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদারসহ গোপালপুর ইউনিয়নের অনেকে বলেন, “চেয়ারম্যানরা আত্মগোপানে থাকায় ওয়ারিশান, নাগরিক, চারিত্রিক ও মৃত্যু সনদ নিতে দিনের পর দিন পরিষদে ঘুরেও জনগণ কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন জনগণের ভোগান্তি, অপরদিকে ব্যাপক সময় আপচয় হচ্ছে। শুনেছি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। তাই জনজীবনের দুর্ভোগ কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দুই চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং আলী আহম্মেদ শেখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

তবে বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুলের হোয়াটসঅ্যাপে কল করলে তিনি রিসিভ করেন। তখন বেশ কিছুদিন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন না জানিয়ে মিলিয়া আমিনুল বলেন, “পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় আমাকে ১০৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পরিষদে যেতে পারছি না।” 

এতে জনপ্রতিনিধিদের অফিস চলাকালীন কার্যালয়ে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে দাঁড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, তবে এলাকাতেই আছি।”

তিনি দাবি করেন, তার এলাকার জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে না। কারণ, তার স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। কোনো কাজহই বাকি থাকে না।

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, “কোন জনপ্রতিনিধি অনুমোদনহীনভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃস্টি হয়। নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ও জনদুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জেএসডির বৈঠক
  • পুনর্বহালের দাবি জানালেন অপসারিত কাউন্সিলররা
  • দ্বিমতের বিষয় নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে: জোনায়েদ সাকি
  • বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের ভিত্তিকে অস্বীকার করা হয়েছে: জোনায়েদ সাকি 
  • আমরা জুলুম করে রাজনীতি করতে চাই না : নাহিদ ইসলামের বাবা 
  • বিএনপি-আওয়ামী লীগ এ দেশে সুশাসন দিতে পারেনি: মজিবুর রহমান
  • ‘সিন্ধু দিয়ে হয় আমাদের পানি, নয় তাদের রক্ত বইবে’, ভারতকে বিলাওয়ালের হুঁশিয়ারি
  • সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
  • অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালান ৩ চেয়ারম্যান