জিম্বাবুয়ের অনুশীলনে ‘হ্যাভ এ রিল্যাক্স মুড’
Published: 27th, April 2025 GMT
হ্যাভ এ রিল্যাক্স…!
বাক্যটা হারিয়েই গেল। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দোষ বা গুণ তো এটাই। আজ আছে তো কাল নেই। আসলে আজকালের বিষষও নয়। এখন আছে, একটু পরই নেই; এটা বলাই ভালো। তাই এক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ‘হ্যাভ এ রিল্যাক্স’ শব্দবন্ধ এখন বলতে গেলে হারিয়েই গেছে, এসেছে নতুন কিছু!
খুব আরামে থাকলে বা চাপমুক্ত থাকলে একসময় বাক্যটি ব্যবহার করা হতো। ইংরেজি এই বাক্য হারিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি তো আর হারাতে পারে না। কেউ না কেউ তো ফুরফুরে মেজাজে, আরামে থাকেই। এই জিম্বাবুয়ে দলটার কথাই ধরুন না!
কী ফুরফুরে, চাপমুক্ত একটা দলের দেখাই না মিলল আজ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে! যেন এক সুখী পরিবার, যেখানে কোনো টেনশন নেই, নেই কোনো চাপটাপ বলে কিছু! সুখী তো বটেই।
জিম্বাবুয়েরে এই দলটার বাংলাদেশ সিরিজে প্রত্যাশা কী ছিল? সিরিজ জয়টয়ের কথা তো মুখেও আনেনি। টানা ১০ টেস্টে হারা দলটির এই সিরিজে একটা টেস্ট জয়ই অনেক বড় অর্জন। আর সেটা তারা সিলেটেই পেয়ে গেছে।
২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি তাদের হারার আর কোনো সুযোগই নেই। বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে জিতলেও ট্রফি হবে ভাগাভাগি। জিম্বাবুয়ের আর টেনশন কিসের! এসবের ছাপই দেখা গেছে দলটির আজকের অনুশীলনে।
বাঁহাতি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা যেন জিম্বাবুয়ের সুখী পরিবারের সবচেয়ে সুখী মানুষ। প্রথম টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়া এই স্পিনারকে আজ নতুন এক রূপেই দেখা গেছে।
এত দিন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, আজ কেন যেন তাঁর উড়ন্ত মনের ইচ্ছা জাগল সাক্ষাৎকার নেওয়ার! তাই তো বনে গিয়েছিলেন টিভি সাংবাদিক। সাক্ষাৎকার নিলেন সতীর্থ লেগ স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসার।
কিন্তু টিভি সাংবাদিকের তো হাতে একটা বুম অন্তত লাগবে! সেই বুম তিনি কোথায় পাবেন? ওই যে একটা কথা আছে না—ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়! আর এটা যেহেতু মনের আনন্দে সাজানো সাংবাদিকতা, তাই প্রয়োজনটাও মাসাকাদজা মিটিয়েছেন মিছেমিছি বুম দিয়ে।
হাতের ব্যাটটাকে উল্টোভাবে ধরে ব্যাটের হ্যান্ডলকেই বানালেন বুম। প্রয়োজনের তো শেষ নেই! এখন লাগবে ক্যামেরাম্যান…সেই ভূমিকায় ছিলেন দলটির মিডিয়া ম্যানেজার ডার্লিংটন। তিনি মোবাইল দিয়েই ভিডিও করার কাজটা সেরেছেন।
অনুশীলন দেখতে দেখতে চোখ গেল প্রথম টেস্টের ম্যাচসেরা ব্লেসিং মুজারাবানির দিকে। তিনি তো এদিন ছিলেন আরও রিল্যাক্স মুডে। পুরো দিনে একটা বলও পুরো রানআপ নিয়ে করেছেন কি না, সন্দেহ! জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত ঘুরিয়ে কিছু বল করেছেন। ভাবখানা যেন এ রকম—অনুশীলন করে কাজ কী! তাঁরও আজ এক অন্য পরিচয়ের দেখা মিলেছে।
প্রথম টেস্টে ৯ উইকেট নেওয়া মুজারাবানি যেন হয়ে গিয়েছিলেন বোলিং কোচ। বাংলাদেশের নেট বোলারদের অনেকক্ষণ পরামর্শ দিয়েছেন ফ্রিতেই। অভিজ্ঞতা তো তাঁর কম হয়নি! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ২০০ উইকেটের মালিক। সর্বশেষ ৩ টেস্টের প্রতিটিতেই কোনো না কোনো ইনিংসে ৫টির বেশি উইকেট পেয়েছেন। পিএসএল, সিপিএল, ভাইটালিটি ব্লাস্ট—খেলেছেন সবখানে। চট্টগ্রামে নেট বোলারদের মাঝে হয়তো সেসব অভিজ্ঞতাই শেয়ার করেছেন মুজারাবানি।
বাংলাদেশের অনুশীলনের চেহারা ছিল একেবারেই উল্টো। ম্যাচের আগের দিন কিসের ঢিলেঢালা ভাব, দলের সবাই আজ ছিলেন বড্ড সিরিয়াস। নাজমুলের দলের বাড়তি গুরুত্ব দেখেও আবার জিম্বাবুয়ের অনুশীলনের আবহকে একটু বেশি হালকা লাগতে পারে!
সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। আজ চট্টগ্রামে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ইতালির রাজধানী রোম ত্যাগ করেন। সোমবার ভোর ৩টায় তাঁকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে।
শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেন। এর আগে শুক্রবার তিনি কাতারের দোহা থেকে রোমে যান।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে শনিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তারা ড. ইউনূসের কাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ড. ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসের ভ্যাটিকানের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
এর আগে বিকেলে ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল কুভাকাড রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে কার্ডিনাল হওয়া কুভাকাড জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা অংশ নেবেন।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে অব্যাহত সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি এবং জাতি, ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে রোমে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর তাদের এই সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।