Risingbd:
2025-04-27@22:29:07 GMT

গণমাধ্যম চলবে কার নির্দেশনায়?

Published: 27th, April 2025 GMT

গণমাধ্যম চলবে কার নির্দেশনায়?

পশ্চিমা বিশ্বের সাংবাদিকতার মতো আমাদের সাংবাদিকতা কেন আরও বেশি জনমুখী, দায়িত্বশীল ও পেশাদারী হয়ে উঠলো না? এই প্রশ্নের উত্তর তালাশে ব্যক্তিক অবস্থান থেকে আমার একটা অবলোকন রয়েছে। এবং এই অবলোকনের সঙ্গে অমর্ত্য সেনের দৃষ্টিভঙ্গির সাযুজ্য রয়েছে। বলতেই হবে তার সেই তত্ত্বীয় ভাবনায় আমার অবলোকনকে করেছে দৃঢ় ও সংহত। 

অমর্ত্য সেন মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে থাকার মূল কারণ হলো, এখানকার গণমাধ্যমগুলো যথাযথভাবে ফাংশন বা কাজ করে না। অর্থাৎ গণমাধ্যমের যে প্রধান স্টেকহোল্ডার বা অংশীদার রয়েছে তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে যথাযথভাবে কাজ করে না কিংবা করতে পারে না।

এখানে অংশীদার বলতে বোঝানো হয়েছে, যারা সংবাদ উৎপাদন বা রচনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। এরা হলো এক.

মালিকপক্ষ, দুই. সম্পাদক, তিন. সাংবাদিক। পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমসমূহে এই তিনপক্ষই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। এবং প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব ঠিক ততটাই করেন। ফলে, এই তিনপক্ষের পৃথক অংশগ্রহণের যৌথ ক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেসব দেশের গণমাধ্যম শক্ত ও সংহত এক জায়গা করে নিয়েছে। যা গণমাধ্যমের জন্য বিশেষ এক গৌরবের জায়গা।

আরো পড়ুন:

যুগপূর্তি সংখ্যা
গণমাধ্যমের কর্কট রোগ

বর্ণিল আয়োজনে রাইজিংবিডির যুগপূর্তি উদযাপন

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় এই তিনপক্ষ পৃথকভাবে ফাংশন বা কাজ করে না। আমাদের দেশের উদাহরণ দিয়ে আমরা বিষয়টা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারি। এখানকার গণমাধ্যমে তিনটা পক্ষ, অর্থাৎ মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক বাস্তবে থাকলেও এরা আসলে একটা পক্ষ হয়ে কাজ করে, আর সেই পক্ষের নাম মালিকপক্ষ। বাকি দুটো পক্ষ কেবল নামে, পদ-পদবিতেই ক্রিয়াশীল। তারা কখনো নিজের জায়গায় শক্ত অবস্থান নেন না, দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেন না। দুই-একটা গণমাধ্যম হয়তো ব্যতিক্রম এবং সেই কারণেই তারা গণমাধ্যম হিসেবে নিজেদের শক্তির জায়গাটাকে অনেকটাই সফল ও সার্থকভাবে হাজির করতে পেরেছেন।

মূল আলোচনায় আসি, এবং বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বোঝার চেষ্টা করি। যে কোনো গণমাধ্যমের মালিক হিসেবে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি কিংবা মালিকের অবশ্যই শক্ত একটা জায়গা রয়েছে। এই জায়গা থেকে তার কিছু চাওয়া-পাওয়া, লাভ-লোকসানের বিষয়টাকে আমলে নিয়েই প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণমাধ্যমকে তার কাজ চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি প্রাণপ্রবাহ গতিশীল রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে অন্যথা হওয়ার সুযোগ কম। প্রশ্ন হলো, তিনি যা বলবেন, যা করতে নির্দেশনা দেবেন তার সবটাই কি করতে হবে? উত্তর না। কেনো না, সেটা বলছি একটু পর। এখন বাকি দুটো পক্ষের বিষয়টা একটু খোলাসা করে নেওয়া যাক।

সংবাদপত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হলো সম্পাদক। তিনিই আসলে প্রতিষ্ঠান-গণমাধ্যমের প্রধান ব্যক্তি। সম্পাদক বাকি দুটো পক্ষের সমন্বয়ক এবং প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে ও টেকসই রাখার নেপথ্যের কারিগর। এখানে সম্পাদকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মূলত তার ওপরই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের বাঁচা-মরা, লাভ-লোকসান, মান-সম্মান, শক্তি ও সামর্থ্য। ফলে, সম্পাদককে হতে হয় প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে বর্ণিত দেবী দুর্গার মতো। তাকে  দৃশ্যত দুই হাতের অধিকারী মনে হলেও অদৃশ্যত দশ হাতের অধিকারী হতে হয়। এবং একাই দশদিক সামলানোর মতো প্রজ্ঞা রাখতে হয়। মালিক ও সম্পাদকের বাইরে গণমাধ্যমের আরও একটা অংশীজন বা পক্ষ হলো সাংবাদিক পক্ষ। এরাই মূলত গণমাধ্যম নামক প্রতিষ্ঠানের প্রাণ, অক্সিজেন বিশেষ। কারণ এদের উৎপাদিত বা রচিত সংবাদই হাজির হয় পাঠকের দরবারে। আমরা আলোচনায় একটা বিষয় নিশ্চয় পরিষ্কার করতে পেরেছি যে, গণমাধ্যমের তিনটি পক্ষ মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক। গণমাধ্যমের জন্য এই তিনটা পক্ষই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এবং এখানেই গণমাধ্যমের সৌন্দর্য্য ও শক্তি নিহিত। 

পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমের সাফল্য ও সার্থকতার পেছনের প্রধানতম কারণ হলো, সেখানকার গণমাধ্যমসমূহে মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক এই তিনপক্ষই সমানভাবে কাজ করে। অর্থাৎ তাদের যে দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের সবটাই তারা যথাযথভাবে পালন করে। ফলে তিনপক্ষের স্বতন্ত্র ক্রিয়ার যে ফল তা একীভূত হয়ে গণমাধ্যম নামক প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী ও সংহত করে তোলে। ফলে, সেখানে দ্বিশতবর্ষ বয়সী গণমাধ্যমকেও আমরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির হতে দেখি।

আমাদের জন্য অসীম বেদনার জায়গা হলো, আমরা গণমাধ্যমের তিনটি পক্ষকে স্বতন্ত্রভাবে ক্রিয়া করার সুযোগ দেইনি। ফলে, এখানকার গণমাধ্যম তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে ভূমিকা পালন করার কথা সেটা করে উঠতে পারেনি। হয়তো দুই একটা ব্যতিক্রমী সংবাদমাধ্যম আমরা পেয়েছি। কিন্তু সেটা প্রতিষ্ঠান বলতে সামগ্রিক অর্থে যা বোঝায় সেই নিরিখে কতোটা হয়ে উঠেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সম্পাদকের যে ভূমিকা পালন করার কথা; সম্পাদক বলতে যা বোঝায়, সম্পাদকের কাছে যে দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব প্রত্যাশিত তার কোনোটাই যথাযথভাবে পাওয়া যায় না। একই কথা সাংবাদিকের ক্ষেত্রেও। একজন সাংবাদিকের কাছে, কিংবা একটা গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে যে ভূমিকা প্রত্যাশিত, যে দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব আকাক্সিক্ষত সেটা সেভাবে পাওয়া যায় না।
তা হলে দেখা যাচ্ছে যে, সম্পাদক ও সাংবাদিক কেউই তার অংশীদারিত্বের জায়গায় যে ভূমিকা পালন করার কথা সেটা যথাযথভাবে করছেন না। নিজ নিজ পক্ষের যে দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব সেটা না করে তারা কী করছেন? এই প্রশ্নের উত্তর বেদনার হলেও তা সত্য ও বাস্তব। তারা আসলে মালিকপক্ষের ভূমিকা পালন করছেন। আমাদের মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক এরা সবাই মিলে হয়ে গেছে একটা পক্ষ। সেই পক্ষেরই নাম মালিকপক্ষ। 

দেখা যাচ্ছে, এখানে সম্পাদক সম্পাদকের ভূমিকা পালন না করে, মালিকের ভূমিকা পালন করছেন। সাংবাদিক সাংবাদিকের ভূমিকা পালন না করে মালিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। ফলে, আমাদের সংবাদপত্রের পক্ষ বা অংশীজন যাই-ই বলি না কেন, তা মূলত একটা। যার নাম মালিক। মালিকপক্ষের প্রকাশ্য চাওয়াকে যেমন এখানে ‘বেদবাক্য’ মনে করা হয়, অপ্রকাশ্য চাওয়াকেও ঠিক তাই। অপ্রকাশ্য চাওয়ার নামে এখানে প্রতিমুহূর্তে চলে সেলফ সেন্সরশিপ। এ কারণে আর যাই হোক, সাংবাদিকতাটা ঠিক হয়ে ওঠে না। গড়ে ওঠে না গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বলতে যা বোঝায় প্রকৃতপক্ষে সেরকম প্রতিনিধিত্বকারী কোনো প্রতিষ্ঠান।

পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমসমূহ এই ব্যাধি মুক্ত হতে পেরেছেন বলে তাদের গণমাধ্যমসমূহ যথার্থ অর্থে প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পেরেছে। কিন্তু আমরা সেই জায়গায় পিছিয়ে রয়েছি। ফলে, আমাদের গণমাধ্যম এখনও প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেনি। এই সহজ বিষয়টা আমাদের গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টজনেরা কেন বুঝতে ব্যর্থ হলো, তা মস্তো বড়ো রহস্য বৈকি! এটা তো সত্যি এবং যে কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব যে, যে কোনো কিছুর অংশীজনরা যদি যার যার জায়গায় যথাযথভাবে ক্রিয়া না করে তা হলে সেটা চলমান রাখা সম্ভব নয়। যদিও সম্ভব হয়, তা হলে সেটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। আমাদের গণমাধ্যমগুলো আসলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অথচ অংশীজনরা যদি প্রত্যেকের দায়িত্বটা পালন করতো, তা হলে পৃথক দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে যে যৌথ ক্রিয়া সম্পাদিত হতো তার মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠতো প্রত্যাশিত ও আকাক্সিক্ষত মাত্রার প্রতিষ্ঠান। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সেসকল প্রতিষ্ঠানই হয়ে উঠতো লাভজনক, মানসম্পন্ন, জনপ্রিয় ও টেকসই প্রতিষ্ঠানের এক-একটা রোল মডেল বিশেষ।

এই যে, সম্পাদক ও সাংবাদিক মিলে মালিকপক্ষ হয়ে উঠলো, তাতে কিন্তু মালিকের লাভ না হয়ে লোকসানই হলো। তিনি একটা রুগ্ন প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী হয়ে উঠলেন কেবল। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো গণমাধ্যমনামক প্রতিষ্ঠানের। এ দেশে এমন একটা ধারণা অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত যে, গণমাধ্যমনামক প্রতিষ্ঠান মাত্রই লোকসানের কারবারি। এটা ভুর্তকি দিয়ে পরিচালনা করতে হয়। রুগ্ন প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা যেন গণমাধ্যমকেই বুঝছি এবং সেটা নিশ্চিতভাবেই। অথচ গণমাধ্যমে যদি সত্যিকারভাবে মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকের ভূমিকা পালিত হতো তা হলে এই কলঙ্কতিলক তার ভাগ্যে পড়ত না। এখন যে কেউ এই প্রশ্ন হাজির করতে পারেন যে, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা যদি নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে তা হলে মালিকপক্ষ গোস্বা করবেন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবেন। এই ভাবনা অমূলক। এটা কখনো হওয়ার নয়। এটা হয়তো দু’একজন মালিক করলেও করতে পারেন। কিন্তু সবাই নন। বরং মালিক যখন দেখবেন তারা যা বলছেন প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় রেখে বলছেন, তখন তিনিও বিষয়গুলো আমলে নেবেন। এবং এ ধারা চর্চিত হলে ব্যতিক্রমভাবে একটা দুটো প্রতিষ্ঠান নয়, একাধিক কিংবা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। এখানে মনে রাখা বিশেষভাবে প্রয়োজন যে, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সফল ও সার্থক হয়ে ওঠে কোনো মালিকই সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন না। সম্পাদক ও সাংবাদিকরা যখন ব্যর্থ হন, একটা গণমাধ্যমকে মানসম্পন্ন, জনপ্রিয়, লাভজনক ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে, তখনই মালিকপক্ষ সেখানে হস্তক্ষেপ করেন। মালিকপক্ষের মতকেই একমাত্র মত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

গণমাধ্যম একটা সমবায়ী প্রতিষ্ঠান। এই সমবায়ে মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা নিজ নিজ ভূমিকা পালনের কোনো বিকল্প নেই। সম্পাদকের কাজ হলো এই সমবায়ী ভূমিকাকে পরিচালনা করা। এই পরিচালনে তিনি নৌকার মাঝি বিশেষ। মাঝিকে যেমন বায়ু ও জলের ভাষা বুঝতে হয় এবং ওই দুই ভাষার সঙ্গে নিজের ভাষা যোগ করে তরী তীরে ভেড়াতে হয়, সম্পাদককেও ঠিক তাই রতে হয়। তিনি নিজের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে মালিক ও সাংবাদিকের প্রত্যয় ও প্রত্যাশা যুক্ত করবেন। মিলিবে ও মেলাবে এই নীতিতে তিনি এগোবেন। এবং এভাবে এগোলেই তার নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যমটি হয়ে উঠবে একটা আদর্শ ও মডেল প্রতিষ্ঠান। 

আমাদের সংবাদপত্রের ইতিহাস বলছে, বিভিন্ন সময়ে এই প্রশ্ন হাজির হয়েছে যে, সংবাদপত্র কার নির্দেশনায় চলবে? এই বিষয়টাকে আমাদের বিদ্যায়তনিক ও পেশাদারিত্বের জায়গায় খুব যে শক্তভাবে পরিচালন করা হয়েছে তেমনটা নয়। গত শতাব্দীর চারের দশকে আবুল মনসুর আহমদ একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে বিষয়টি সামনে এনেছিলেন, তবে সেটা ব্যক্তির জায়গা থেকে। তিনি এই সিদ্ধান্তে হাজির হয়েছিলেন যে, সংবাদপত্র চলবে মালিকের ইচ্ছায়। এরপরও এ সম্পর্কিত দু’একটা লেখায় দেখা যাচ্ছে যে মালিকপক্ষের প্রতি পক্ষপাত প্রবল। 
ব্যক্তিগতভাবে আমি এর সঙ্গে সহমত নই। আমি মনে করি, গণমাধ্যম পরিচালিত হবে মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক এই তিন পক্ষের বা অংশীজনের সমবায়ী নির্দেশনায়। তবে এ কথাও স্মরণে রাখতে হবে যে, গণমাধ্যমের প্রাণ সাংবাদিকরা হলেও, এর মুখ কিন্তু খোদ সম্পাদক। সম্পাদক সমবায়ীনীতিতে গণমাধ্যম পরিচালন করবেন ঠিকই কিন্তু তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন একক জায়গা থেকে। অর্থাৎ এর পরিচালনের মধ্যে থাকবে সমবায়ীনীতি, কিন্তু সিদ্ধান্ত হবে একক। সেই এককের নাম সম্পাদক। 

আমাদের অবলোকনের শেষাশেষিতে বলতে চাই, গণমাধ্যম পরিচালিত হবে সম্পাদকের নির্দেশনায়। মালিক ও সাংবাদিকের কাজ হলো সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা, যথাযথভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। গণমাধ্যম মূলত এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে সম্পাদকীয় ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি একটু বর্তমানে এবং অতীতে তাকাই, কিংবা দেশের বাইরের দিকে নজর দিই, তা হলে দেখব সেসব গণমাধ্যমই প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যরে পরিচয়কে হাজির করতে পেরেছে, যাদের সম্পাদকীয় জায়গাটা শক্ত ও সংহত। 

মালিক ও সাংবাদিকের ভূমিকা ও গুরুত্ব আমলে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত আমাদের যে, সম্পাদকীয় জায়গা উচ্চকিত করেই গণমাধ্যমকে এগোতে হবে। এ ক্ষেত্রে মালিক ও সাংবাদিক তাদের রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সম্পাদকীয় জায়গাকে শক্তিশালী ও অর্থবহ করে তুলতে যা কিছু করার সেসব করতে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবেন। গণমাধ্যম যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা ফোর্থ পিলার হিসেবে স্বীকৃত। ঠিক তেমনি সম্পাদকীয় জায়গা হলো গণমাধ্যমনামক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও একটি প্রতিষ্ঠান যাকে নিশ্চিত করেই বলা যায় ফার্স্ট পিলার। এই পিলারই আসলে অন্যসব পিলারকে ধরে রাখে, ক্রিয়াশীল করে তোলে। এ কারণে আমাদের অবলোকনের সিদ্ধান্ত হলো, গণমাধ্যমনামক সমবায়ী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে সম্পাদকের নির্দেশনায়। 

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক 
 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ল কপক ষ র গণম ধ যমক স ব দপত র ব দ কত এই ত ন ক জ কর পর চ ল অ শ জন ব দ কর করছ ন করব ন র করত ব ষয়ট সমব য়

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ইতালির রাজধানী রোম ত্যাগ করেন। সোমবার ভোর ৩টায় তাঁকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে।

শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেন। এর আগে শুক্রবার তিনি কাতারের দোহা থেকে রোমে যান।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে শনিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তারা ড. ইউনূসের কাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ড. ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসের ভ্যাটিকানের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

এর আগে বিকেলে ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল কুভাকাড রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে কার্ডিনাল হওয়া কুভাকাড জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা অংশ নেবেন।

ড. ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে অব্যাহত সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি এবং জাতি, ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

এদিকে শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে রোমে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর তাদের এই সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ