রূপগঞ্জে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা রায়হান এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বাড়ি ফিরেছেন ওই ব্যবসায়ী।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম মহিউদ্দিন বাবলু। তিনি উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের নাগেরবাগ এলাকায় ইট, বালুর ব্যবসা করে আসছেন। গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে নাগেরবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

অভিযুক্ত রায়হান উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ ক্রীড়া সম্পাদক ও বর্তমানে তিনি স্থানীয় বিএনপির শুটার রিয়াজ বাহিনীর হয়ে কাজ করছেন। 

এদিকে এ ঘটনায় ব্যবসায়ীর বড় ভাই সালাউদ্দিন বাদল বাদি হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন। 

সালাউদ্দিন বাদল বলেন, আমার ভাই মহিউদ্দিন বাবলু গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের নাগেরবাগ এলাকায় ইট, বালুর ব্যবসা করে আসছেন। বেশ কিছুদিন যাবত একই এলাকার রায়হান ছোট ভাইয়ের কাছে থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে আসছিল। 

দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে গত শনিবার দুপুরে রায়হানসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন মিলে ৬ টা মোটরসাইকেল করে আমার ভাইকে অজ্ঞাতস্থানে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরে তাদের লোকের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে আমার ভাই মহিউদ্দিন বাবলুকে ফেরত দিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রায়হানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ব যবস য় ন র য়ণগঞ জ অপহরণ ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড়ে স্বস্তি এসেছে, শান্তিও আসুক

অপহরণের সাত দিন পর পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি পাওয়া আনন্দের খবরই বটে।

অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক অপহরণের ঘটনা ঘটলেও এই প্রথম শিক্ষার্থীরা এর লক্ষ্যবস্তু হলেন। অপহরণের শিকার পাঁচজনই ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবে অংশ নিতে তঁারা গিয়েছিলেন রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে। 

পাঁচ শিক্ষার্থীর অপহরণে তাঁদের সহপাঠী–স্বজনেরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। উদ্বিগ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। এমন একটি সময়ে এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়, যখন পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ বৈসাবি উৎসবে ব্যস্ত। 

পাঁচ শিক্ষার্থীর অপহরণের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন করেছেন তিন পার্বত্য জেলার সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি ঢাকায়ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মানববন্ধন করেছে। 

অনেক উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার পর বুধবারই জানা গেল অপহরণকারীরা সাত দিনের মাথায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের একজন নেতার সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, পিসিপি সদস্য রিশন চাকমাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ একবার তাঁদের ছাড়েননি। তাঁরা মা–বাবার কাছে এখন সুস্থ আছেন। তবে ট্রমা কাটেনি।

 সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিজু উৎসব উদ্‌যাপন শেষে ফেরার পথে ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাঁদের বহন করা অটোরিকশার চালককে অজ্ঞাতনামা স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ওই সময় ছেড়ে দিয়েছিলেন।

পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে জেএসএস–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। যদিও ইউপিডিএফ অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। 

এর আগে গত বছর ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করেছিল কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এএনএফ) নামের একটি সংগঠন। ২০২২ সালে বম জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গঠিত এই সংগঠনের কার্যক্রম বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি এলাকায় সীমিত। 

কেএনএফের সশস্ত্র দল রাতে ব্যাংকে হামলা চালায় এবং ব্যাংকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জিম্মি করে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে দুটি সাবমেশিনগানসহ (এসএমজি) ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করেন কেএনএফের সদস্যরা। তাঁর মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। ওই ঘটনার পর কেএনএফ অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এর সঙ্গে ভূরাজনীতির সম্পর্কও থাকতে পারে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে বিদেশি নাগরিক ও বিভিন্ন দেশি–বিদেশি সংস্থার কর্মীদের অপহরণের ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচার হয়েছে। তাঁদের উদ্ধারে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃতরা ছাড়াও পেয়েছেন। এবার কারা অপহরণ করেছে, কত টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে, পরিষ্কার নয়। তবে ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। 

২০০১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির নানিয়ারচরে অপহৃত হন ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার তিন কর্মকর্তা। ১৯৮৪ সালে শেলের ছয় কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি এলাকা থেকে। ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি টেলিটকের পাঁচ কর্মী অপহৃত হয়েছিলেন। এসব ঘটনায় অপহৃতরা ফেরত এলেও ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অপহৃত কল্পনা চাকমা আর ফেরত আসেননি।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সই হওয়ার আগপর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র আঞ্চলিক দল ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি—সংক্ষেপে জেএসএস। কিন্তু ১৯৯৮ সালে চুক্তির বিরোধিতা করে নতুন সংগঠন গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামে। পরে জেএসএস ও ইউপিডিএফ দুটোই ভাগ হয়ে যায়। জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস মনে করে, পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিভক্তির পেছনে ‘অদৃশ্য শক্তির’ হাত আছে। যারা সেখানে অস্থিতিশীল অবস্থা জিইয়ে রাখতে চায়, তারাই চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না এবং একের পর এক অঘটন ঘটাচ্ছে।  

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেপ্টেম্বরে পাহাড়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। ওই সময় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং তিন পাহাড়ি মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের চারজন উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনো ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি। এ নিয়ে পাহাড়িদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। 

জেএসএস নেতাদের দাবি, পার্বত্য চুক্তির মূল কথা ছিল, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকবে। চুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়। তিন জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। কিন্তু গত ২৮ বছরেও কোনো নির্বাচন হয়নি।

পার্বত্য চুক্তির বার্ষিকীতে আমরা দুই পক্ষের বিপরীতমুখী বক্তব্য শুনি। সরকারের দাবি পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৫টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু জনসংহতি সমিতির দাবি, ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৮টি ধারার আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। 

পাহাড়ের অন্যতম সমস্যা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০০১ সালে গঠন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন। এ পর্যন্ত ছয়বার কমিশনের চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও ভূমি বিরোধ সমস্যা সমাধানে কোনো সফলতা আসেনি। তিন পার্বত্য জেলা থেকে ভূমি বিরোধ নিয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় ২২ হাজার দরখাস্ত জমা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব আবেদনের সুরাহা করা হয়নি। এমনকি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি বৈঠকও করতে পারেনি স্থানীয় কিছু বাঙালি সংগঠনের বিরোধিতার কারণে। 

গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরও সক্রিয় ভূমিকা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, সেখানকার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সেটি নেওয়া হয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি গ্রাফিতিতে ‘আদিবাসী’ কথা লেখা ছিল। পরে সেটি পাঠ্যবইয়েও স্থান পায়। কিন্তু বই প্রকাশের কয়েক দিন পর অজ্ঞাত কারণে সেই গ্রাফিতি তুলে নেওয়া হয়।  

পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাময়িক স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু সেই স্বস্তি স্থায়ী শান্তিতে রূপ নিতে পারে তখনই, যখন পার্বত্য চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। সেখানে ভূমি ও পাহাড় দখল বন্ধ হবে। পাহাড়িরাও দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো সম–অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে সেই চাওয়া কি অন্যায্য হবে? 

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে দুই নেতার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল
  • সিদ্ধিরগঞ্জে মিশুকসহ চালক অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি : ৪ দিনেও মিলেনি সন্ধান
  • সাজার বিরুদ্ধে শফিক রেহমানের আপিল শুনানি শেষ, রায় ১২ মে 
  • যশোর থেকে অপহরণের একমাস পর সাতক্ষীরায় বাগানে মিলল ব্যবসায়ীর লাশ
  • নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ১১ বছর আজ: কনডেমড সেলে তারেক সাঈদ, বরাদ্দ সাধারণ বন্দীর খাবার 
  • ঢাকায় অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার বাসার নিরাপত্তাকর্মী, পরে উদ্ধার স্কুলছাত্রী
  • পাহাড়ে স্বস্তি এসেছে, শান্তিও আসুক
  • অপহরণের পরদিন ভিকারুননিসার ছাত্রী উদ্ধার, বাড়ির সাবেক নিরাপত্তাকর্মী গ্রেপ্তার
  • অপহরণের পরদিন ভিকারুননিসার ছাত্রী উদ্ধার, গ্রেপ্তার বাড়ির সাবেক নিরাপত্তাকর্মী