বরগুনায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে জোড়া খুনের মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড
Published: 27th, April 2025 GMT
বরগুনায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে নারীকে জখম ও দুই শিশুকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে মো. ইলিয়াস পহলান নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার সকালে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ইলিয়াস বরগুনা সদর উপজেলার আয়লাপাতাকাটা ইউনিয়নের পূর্ব কেওরাবুনিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন পহলানের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রঞ্জুয়ারা সিপু।
আদালত ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ফুলকুড়ি ইউনিয়নের এক গৃহবধূ তাঁর তিন বছর বয়সী শিশুসন্তান তাইফাকে নিয়ে নিজেদের বসতঘরে বসবাস করেন। হাফিজুল (১০) নামের এক শিশু তার ঘরে থাকত। রাতের আঁধারে কে বা কারা হাফিজুলকে কুপিয়ে হত্যা করে। এতে গুরুতর আহত হন ওই গৃহবধূ ও তাঁর শিশুসন্তান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি ইলিয়াস ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করতে তাঁর ঘরে ঢোকেন। এ সময় গৃহবধূর ডাক-চিৎকারে হাফিজুল এগিয়ে গেলে আসামি ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তিনজনকে জখম করেন। এতে গৃহবধূ গুরুতর আহত হন এবং অন্য দুই শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় তদন্ত করে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আদালত তিনটি ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে আসামিকে সাজা দিয়েছেন। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, ইলিয়াস ভুক্তভোগী গৃহবধূকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে বাধা পেয়ে তিনজনকে এলোপাতাড়ি কোপান। এতে দুই শিশু মারা যায়। আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত।
বিশেষ পিপি রঞ্জুয়ারা সিপু বলেন, ‘এই রায়ে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।’ আসামির আইনজীবী না থাকায় আইনজীবী এম মজিবুল হককে ইলিয়াসের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেন আদালত। তিনি বলেন, ‘আমি সাধ্যমতো মামলা পরিচালনা করেছি। আসামি জেলকোড অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ইতালির রাজধানী রোম ত্যাগ করেন। সোমবার ভোর ৩টায় তাঁকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে।
শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেন। এর আগে শুক্রবার তিনি কাতারের দোহা থেকে রোমে যান।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে শনিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তারা ড. ইউনূসের কাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ড. ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসের ভ্যাটিকানের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
এর আগে বিকেলে ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল কুভাকাড রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে কার্ডিনাল হওয়া কুভাকাড জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা অংশ নেবেন।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে অব্যাহত সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি এবং জাতি, ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে রোমে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর তাদের এই সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।