ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কুমার নদ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই মাটির সন্তান, কুমার নদ রক্ষা করা আমার অধিকার। আমি আমাদের সব নেতাকর্মীকে বলব, কুমার নদ থেকে যারা বালু উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ-প্রশাসনকে জানাবেন, যারা এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পরে এত তাজা প্রাণের বিনিময়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে আত্মাহুতির পরে যখন আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের দিকে এগোতে চাচ্ছি, তখন ফ্যাসিবাদের দোসররা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে এখনও অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে হবে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও আছে। আমি শুনেছি কুমার নদের বালি উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত আছে, তারা ফরিদপুর জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে খাতির করে আবার কুমার নদের বালি উত্তোলনের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, ফরিদপুরে যতদিন শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা জীবিত আছেন, ততদিন সালথা-নগরকান্দার মাটিতে আর কেউ বালু উত্তোলন ও অবৈধ কাজ কেউ করতে পারবে না। এসব কাজে যদি বিএনপির কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাদেরকেও ছাড় দেওয়া হবে না।’

শনিবার সকাল ১১টার দিকে নিজ নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বড়দিয়া বাজারে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

শামা ওবায়েদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনো অন্যায় ও অবৈধ কাজের প্রশ্রয় দেন না। আমিও কোনো অন্যায় ও অবৈধ কাজের সঙ্গে থাকব না। অতএব, কুমার নদ থেকে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কুমার নদ আমাদের সম্পদ। এটাকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে যদি পত্রিকায় প্রতিবেদন না হতো, তাহলে বিষয়টি আমরা জানতাম না। প্রশাসনিক অভিযানের পরেও নাকি বালু উত্তোলন করা হয়। আমি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই। আমি জানি না কাদের ছাত্রছায়ায় কুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিছু কিছু নাম পত্রিকায় উঠে এসেছে। তারা নাকি সবাই ম্যানেজ করে কুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন করছেন। কাদেরকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, এটা আমি দেখব।

সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান তালুকদারের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

আনিছুর রহমান বালী, সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল জুয়েল মুন্সি সুমন, সালথা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আসাদ মাতুব্বর, শিক্ষক নেতা মো. জাহিদ হোসেন।

সালথা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শাহিন মাতুব্বর, গট্টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বিল্লাল মাতুব্বর, যুবদল নেতা হাসান আশরাফ, এনায়েত হোসেন, কামরুল ইসলাম, বালাম হোসেন, শাফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান খান, চৌধুরী মামুন, মিরান হোসাইন, ছাত্রদল নেতা আনিছুর রহমান তাজুল, রেজাউল ইসলাম রাজ, সাইফুল আলম,  মেহেদী হাসান সোহাগ প্রমুখ।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য গত তিন মাসে ১৫টি স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিল সমকালে ‘অভিযানের বন্ধ, চলে গেলেই চালু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর কুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ম র নদ থ ক ব এনপ র ক ব এনপ র স ও অব ধ ক অব ধ ক জ র রহম ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ইতালির রাজধানী রোম ত্যাগ করেন। সোমবার ভোর ৩টায় তাঁকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে।

শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেন। এর আগে শুক্রবার তিনি কাতারের দোহা থেকে রোমে যান।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে শনিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তারা ড. ইউনূসের কাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ড. ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসের ভ্যাটিকানের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

এর আগে বিকেলে ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল কুভাকাড রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে কার্ডিনাল হওয়া কুভাকাড জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা অংশ নেবেন।

ড. ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে অব্যাহত সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি এবং জাতি, ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

এদিকে শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে রোমে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর তাদের এই সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ