আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাই না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 27th, April 2025 GMT
মধ্যস্থতা বা দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা, যেভাবেই হোক, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হোক, সেটা বাংলাদেশ চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতার কোনো ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।’
আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা জানি যে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চাই। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাতময় সম্পর্কের মধ্যে আছে। আমরা চাই না যে এখানে বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।’
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাইব যে তারা আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। আমরা দেখেছি, এরই মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দু–একটা দেশের কাছ থেকে এসেছে। মধ্যস্থতা বা দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা, যেভাবেই হোক, আমরা চাইব যে উত্তেজনা প্রশমিত হোক, শান্তি বজায় থাকুক।’
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় বাংলাদেশ যাবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতার কোনো ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আমরা চাইব যে তারা নিজেরা নিজেরা এ সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। তারা যদি আমাদের সহায়তা চায় যে আপনারা মধ্যস্থতা করুন, তাহলে হয়তো আমরা যাব। তার আগে আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে দেশটিতে প্রায় এক হাজার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে শুধু পত্র–পত্রিকায় দেখেছি। এর বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু দেওয়া হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি দেওয়া হলে দেখতে হবে, তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক কি না। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, তাহলে অবশ্যই তাঁদের ফেরত নেব। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক কি না, সেটাও প্রমাণ সাপেক্ষ। কারণ, আমরা জানি যে ভারতেও প্রচুর বাংলাভাষী মানুষ আছেন। কাজেই বাংলায় কথা বললেই যে বাংলাদেশের মানুষ, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ইতালির রাজধানী রোম ত্যাগ করেন। সোমবার ভোর ৩টায় তাঁকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে।
শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেন। এর আগে শুক্রবার তিনি কাতারের দোহা থেকে রোমে যান।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে শনিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তারা ড. ইউনূসের কাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ড. ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসের ভ্যাটিকানের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
এর আগে বিকেলে ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল কুভাকাড রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে কার্ডিনাল হওয়া কুভাকাড জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা অংশ নেবেন।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে অব্যাহত সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি এবং জাতি, ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে রোমে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর তাদের এই সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।