ক্যাথলিক চার্চের সদর দপ্তর ভ্যাটিকান। এটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের আছে নিজস্ব পত্রিকা, লাতিন ভাষায় জাতীয় সংগীত ও একজন সর্বোচ্চ নেতা—পোপ।

প্রাচীন প্রাচীরঘেরা এই রাষ্ট্রে বাস করেন প্রায় ৯০০ মানুষ। তাঁদের মধ্যে আছেন পোপ নিজে। আরও আছেন লাল টুপি পরিহিত কার্ডিনাল, সন্ন্যাসিনী, যাজক, কূটনীতিক, মালি, রাঁধুনি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো সাধারণ মানুষ।

ভ্যাটিকানের ফটকে পাহারা দেন সুইস গার্ডস। তাঁরা বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সেনাবাহিনীর সদস্য। নীল, লাল ও হলুদ রঙের ডোরাকাটা পোশাক পরে থাকেন তাঁরা। পাশাপাশি পাহারায় থাকেন ভ্যাটিকানের নিজস্ব পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

এই রাষ্ট্রের কেন্দ্রে আছেন পোপ। তিনি সাদা পোশাকের এক রাজসিক ব্যক্তি। রাষ্ট্রের প্রধান ও বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের নেতা হিসেবে তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধারণ করেন।

ভ্যাটিকান একসময় কথিত পোপ রাজ্যগুলোর (পাপাল স্টেটস) অংশ ছিল। এগুলো ইতালির এমন কিছু অঞ্চল ছিল, যা শত শত বছর ধরে পোপের শাসনের অধীন ছিল। উনিশ শতকে ইতালির একীকরণের সময় সেগুলো দখল করা হয়।

১৮৭০ সালে রোম দখল করা হয়। পরে ইতালির রাজধানী হয়ে ওঠে রোম। তখন পোপ নবম পায়াস নিজেকে ‘ভ্যাটিকানের বন্দী’ ঘোষণা করেন। ইতালির সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার আগপর্যন্ত অন্য পোপরাও এ দাবি বজায় রাখেন।

১৯২৯ সালে পোপ একাদশ পায়াস ও ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির মধ্যে ল্যাটেরান চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ভূখণ্ডের ওপর পোপের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয় ইতালি।

ভ্যাটিকান সিটির ৪৪ হেক্টর (১০৯ একর) আয়তনের এই নগররাষ্ট্রের সর্বময় শাসক পোপ। এই নগররাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশই উদ্যান।

‘হোলি সি’ হলো ক্যাথলিক চার্চ ও ভ্যাটিকান সিটির কেন্দ্রীয় শাসন কর্তৃপক্ষ। এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীন একটি সার্বভৌম আইনগত সত্তা।

রোমান কুরিয়া হলো হোলি সির প্রশাসনিক সংস্থা। এটি সেই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে পোপ ক্যাথলিক চার্চ পরিচালনা করেন।

রাষ্ট্র সচিবালয়, ১৬টি মন্ত্রণালয়, ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি একাডেমি ও সংস্থার সমন্বয়ে রোমান কুরিয়া গঠিত।

ভ্যাটিকানে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় ‘জুস অফিসি’ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ বিষয়টি বসবাস ও কর্মসংস্থানের ওপর নির্ভর করে।

এখানকার আইনব্যবস্থা ইতালির মতো। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করা হয় রাষ্ট্রের ছোট আদালতে। বিচার-সংক্রান্ত খবরাখবর ভ্যাটিকানের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া প্রায় ৪০টি ভাষায় পরিচালিত ‘ভ্যাটিকান মিডিয়া’ এসব খবর প্রকাশ করে।

আরও পড়ুনপ্রেমিকাকে না পেয়ে যেভাবে পোপ হয়েছিলেন ফ্রান্সিস ২১ এপ্রিল ২০২৫

এখানকার কর্মীরা করমুক্ত বেতন পান। তাঁরা বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা উপভোগ করেন। তবে তাঁরা কোনো শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন বা তাতে যোগ দিতে পারেন না। তাঁরা ভ্যাটিকানের সুপারমার্কেট, ডাকঘর ও ফার্মেসি ব্যবহার করতে পারেন। তাঁরা ভ্যাটিকানের ছোট্ট রেলপথও (বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জাতীয় রেলপথ) ব্যবহার করতে পারেন।

ভ্যাটিকান সিটির লোকজন ইনস্টিটিউট ফর রিলিজিয়াস ওয়ার্কসে (আইওআর) অর্থ জমা রাখেন। এটি মূলত ভ্যাটিকান ব্যাংক নামে বেশি পরিচিত।

ভ্যাটিকানের জাতীয় সংগীতের নাম ‘পন্টিফিক্যাল মার্চ’। এটি বিশ্বের একমাত্র জাতীয় সংগীত, যা লাতিন ভাষায় গাওয়া হয়। ভ্যাটিকানের পতাকায় হলুদ ও সাদা রঙের দুটি অংশ আছে। পতাকায় খচিত রয়েছে সেন্ট পিটারের চাবি—স্বর্গের চাবি।

আরও পড়ুনপ্রথা ভেঙে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত পোপ ফ্রান্সিস১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভ্যাটিকান: পোপের শক্তিকেন্দ্র, বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র

ক্যাথলিক চার্চের সদর দপ্তর ভ্যাটিকান। এটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের আছে নিজস্ব পত্রিকা, লাতিন ভাষায় জাতীয় সংগীত ও একজন সর্বোচ্চ নেতা—পোপ।

প্রাচীন প্রাচীরঘেরা এই রাষ্ট্রে বাস করেন প্রায় ৯০০ মানুষ। তাঁদের মধ্যে আছেন পোপ নিজে। আরও আছেন লাল টুপি পরিহিত কার্ডিনাল, সন্ন্যাসিনী, যাজক, কূটনীতিক, মালি, রাঁধুনি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো সাধারণ মানুষ।

ভ্যাটিকানের ফটকে পাহারা দেন সুইস গার্ডস। তাঁরা বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সেনাবাহিনীর সদস্য। নীল, লাল ও হলুদ রঙের ডোরাকাটা পোশাক পরে থাকেন তাঁরা। পাশাপাশি পাহারায় থাকেন ভ্যাটিকানের নিজস্ব পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

এই রাষ্ট্রের কেন্দ্রে আছেন পোপ। তিনি সাদা পোশাকের এক রাজসিক ব্যক্তি। রাষ্ট্রের প্রধান ও বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের নেতা হিসেবে তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধারণ করেন।

ভ্যাটিকান একসময় কথিত পোপ রাজ্যগুলোর (পাপাল স্টেটস) অংশ ছিল। এগুলো ইতালির এমন কিছু অঞ্চল ছিল, যা শত শত বছর ধরে পোপের শাসনের অধীন ছিল। উনিশ শতকে ইতালির একীকরণের সময় সেগুলো দখল করা হয়।

১৮৭০ সালে রোম দখল করা হয়। পরে ইতালির রাজধানী হয়ে ওঠে রোম। তখন পোপ নবম পায়াস নিজেকে ‘ভ্যাটিকানের বন্দী’ ঘোষণা করেন। ইতালির সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার আগপর্যন্ত অন্য পোপরাও এ দাবি বজায় রাখেন।

১৯২৯ সালে পোপ একাদশ পায়াস ও ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির মধ্যে ল্যাটেরান চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ভূখণ্ডের ওপর পোপের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয় ইতালি।

ভ্যাটিকান সিটির ৪৪ হেক্টর (১০৯ একর) আয়তনের এই নগররাষ্ট্রের সর্বময় শাসক পোপ। এই নগররাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশই উদ্যান।

‘হোলি সি’ হলো ক্যাথলিক চার্চ ও ভ্যাটিকান সিটির কেন্দ্রীয় শাসন কর্তৃপক্ষ। এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীন একটি সার্বভৌম আইনগত সত্তা।

রোমান কুরিয়া হলো হোলি সির প্রশাসনিক সংস্থা। এটি সেই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে পোপ ক্যাথলিক চার্চ পরিচালনা করেন।

রাষ্ট্র সচিবালয়, ১৬টি মন্ত্রণালয়, ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি একাডেমি ও সংস্থার সমন্বয়ে রোমান কুরিয়া গঠিত।

ভ্যাটিকানে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় ‘জুস অফিসি’ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ বিষয়টি বসবাস ও কর্মসংস্থানের ওপর নির্ভর করে।

এখানকার আইনব্যবস্থা ইতালির মতো। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করা হয় রাষ্ট্রের ছোট আদালতে। বিচার-সংক্রান্ত খবরাখবর ভ্যাটিকানের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া প্রায় ৪০টি ভাষায় পরিচালিত ‘ভ্যাটিকান মিডিয়া’ এসব খবর প্রকাশ করে।

আরও পড়ুনপ্রেমিকাকে না পেয়ে যেভাবে পোপ হয়েছিলেন ফ্রান্সিস ২১ এপ্রিল ২০২৫

এখানকার কর্মীরা করমুক্ত বেতন পান। তাঁরা বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা উপভোগ করেন। তবে তাঁরা কোনো শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন বা তাতে যোগ দিতে পারেন না। তাঁরা ভ্যাটিকানের সুপারমার্কেট, ডাকঘর ও ফার্মেসি ব্যবহার করতে পারেন। তাঁরা ভ্যাটিকানের ছোট্ট রেলপথও (বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জাতীয় রেলপথ) ব্যবহার করতে পারেন।

ভ্যাটিকান সিটির লোকজন ইনস্টিটিউট ফর রিলিজিয়াস ওয়ার্কসে (আইওআর) অর্থ জমা রাখেন। এটি মূলত ভ্যাটিকান ব্যাংক নামে বেশি পরিচিত।

ভ্যাটিকানের জাতীয় সংগীতের নাম ‘পন্টিফিক্যাল মার্চ’। এটি বিশ্বের একমাত্র জাতীয় সংগীত, যা লাতিন ভাষায় গাওয়া হয়। ভ্যাটিকানের পতাকায় হলুদ ও সাদা রঙের দুটি অংশ আছে। পতাকায় খচিত রয়েছে সেন্ট পিটারের চাবি—স্বর্গের চাবি।

আরও পড়ুনপ্রথা ভেঙে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত পোপ ফ্রান্সিস১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ