দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস ও পিও এবং এক সমন্বয়কের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু দুদকের
Published: 27th, April 2025 GMT
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন ও সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক পিও তুহিন ফারাবি ও সমন্বয়ক গাজী সালাহ উদ্দিন ফারাবির দুর্নীতি অনুসন্ধানে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাজী সালাউদ্দিন তানভিরের বিরুদ্ধে ডিসি নিয়োগ ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির তদবীর করে অনৈতিক অর্থ উপার্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওই কথা বলেন দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো.
তিনি বলেন, দুদক আইন অনুযায়ী তাদের দুর্নীতির অভিযোগের প্রথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। শিগগির এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না রাখা দুঃখজনক
গত ১৯ বছরে ডিএনএ পরীক্ষার ৬৫ শতাংশই হয়েছে ধর্ষণের ঘটনায়। ধর্ষণের মামলায় অপরাধীর বিষয়ে সঠিকভাবে জানা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক। তবে নতুন অধ্যাদেশে ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না রাখার বিষয়টি দুঃখজনক। ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ডিএনএ দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথাগুলো উঠে আসে।
সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার: নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত’ শিরোনামে সভার আয়োজন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ডিএনএ পরীক্ষাকে আরও দ্রুত করতে দক্ষ জনবল নিয়োগ, ডিএনএ ল্যাবরেটরির কারিগরি মান উন্নয়ন, বর্তমানে কর্মরত প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কর্মী বাহিনীকে আত্তীকরণ, রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা, পুলিশের পাশাপাশি ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের ডিএনএ প্রতিবেদন পাঠানোর ওপর জোর দেন বক্তারা।
সভায় জানানো হয়, যৌন নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের মাধ্যমে নারীর অধিকার রক্ষা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বৈদেশিক মিশনগুলোকে সহায়তা দেওয়া, সাক্ষ্য–প্রমাণের অভাবে অমীমাংসিত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা, অবৈধ অভিবাসী প্রতিরোধ, শিশু ও নারী পাচার রোধ এবং বিচারব্যবস্থায় ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তির মুক্তি নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন এনে ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। গত ২৫ মার্চ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে। এ অধ্যাদেশে ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক থাকার বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়। ৩২ ক ধারায় বলা হয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় প্রয়োজন মনে করলে বিচারকের অনুমতি নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করতে পারবেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমরা চাই প্রকৃত অপরাধী যেন ধরা পড়ে, নিরপরাধ ব্যক্তি যেন অভিযুক্ত না হন। এভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক। মান উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠানে আরও বেশিসংখ্যক দক্ষ ও পেশাগত মানুষের আসা প্রয়োজন।’
মুক্ত আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হুট করে কোনো প্রকল্প রাজস্ব খাতে নিচ্ছে না। এটা রাজনৈতিক সরকার এসে করবে। তত দিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংবেদনশীল আচরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় জানানো হয়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ২০০৬ সালে দেশে ঢাকায় প্রথম ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি (এনএফডিপিএল) প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি (চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ) রয়েছে। ২০২০ সালের ৯ আগস্ট ‘ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ স্থাপিত হয়। এনএফডিপিএল ২০০৬ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৪৫টি মামলার প্রায় ৩৫ হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য পেয়েছে। এর মধ্যে ২৩ হাজারের বেশি মামলার নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনায়, ২১ শতাংশ মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব পরীক্ষা, ১০ শতাংশ অঙ্গ প্রতিস্থাপন–সংক্রান্ত কাজে (যেমন কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক নির্ধারণ)। আর বাকি ৪ শতাংশ পরীক্ষা করা হয়েছে মৃত বা অজ্ঞাত ব্যক্তি শনাক্তকরণ, অভিবাসন–সংক্রান্ত কাজে ও হত্যার ঘটনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (আইন ও বিচার বিভাগ) শেখ আবু তাহের বলেন, উন্নত বিশ্বে বিচার কাঠামোয় ডিএনএ কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথাসময়ে উপযুক্ত সাক্ষ্য–প্রমাণের অভাবে মামলা দীর্ঘায়িত হয়। দেশে ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দেড় লাখের মতো মামলা বিচারাধীন। যত দ্রুত মেডিকেল ও ডিএনএ পরীক্ষা হবে, তত দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘এ সরকার মনে করেছে, ডিএনএ পরীক্ষার কারণে মামলাজট তৈরি হয়েছে। মামলার চাপ কমাতে ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রাখার দরকার নেই বলে মনে করেছে। আমি মনে করি, এটা দুঃখজনক। বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা ঐচ্ছিক করে দেওয়ার ফলে বিজ্ঞানের কাছ থেকে সমস্যা সমাধানে সহায়তা নেওয়া হবে না।’
সভায় শিরোনামের বিষয়ের ওপর মূল আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম নুরুন নবী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূল কাঠামোর সঙ্গে এনএফডিপিএলকে একীভূত করা, এটিকে অস্থায়ী বা প্রকল্পভিত্তিক স্থাপনা নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের পরিকাঠামো হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা, বর্তমানে কর্মরত প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কর্মী বাহিনীকে আত্তীকরণ ও রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।
আরেক আলোচক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ আরা বলেন, দক্ষ লোকের ঘাটতি থাকায় ভুক্তভোগীর বিশেষ করে ধর্ষণের মামলার ভুক্তভোগীদের নমুনা সংগ্রহ চ্যালেঞ্জে পড়ে। ফলে ফরেনসিক বিভাগের ওপর চাপ বাড়ে। ডিএনএ পরীক্ষার ওপর চিকিৎসকের মতামত দেওয়ার বিষয়টি আরও দ্রুত করতে তিনি পুলিশের পাশাপাশি চিকিৎসকের কাছেও প্রতিবেদনের কপি পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন সভার সভাপতি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া খানম।