২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ছড়িয়ে পড়া কথিত এক ফোনালাপের জেরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

আজ রোববার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ রায় ঘোষণা করেন। খালাস পাওয়া অপর আসামিরা হলেন- ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমী, মো.

রফিকুল ইসলাম নয়ন, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ও রবিউল ইসলাম রবি।

এদিন রায় ঘোষণার আগে আদালতে হাজির হন আমির খসরু। সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বাসচাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হন। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমির খসরুর একটি কথিত ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন ডিবির তৎকালীন পল্লবী জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. শামীম আহমেদ। মামলায় আমির খসরু ও ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

এলজিইডির প্রকৌশলী রাশেদুলের ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাট, কলেজ শিক্ষক স্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ

ঢাকার অভিজাত একটি আবাসিক এলাকায় প্লট কিনেছেন। কিনেছেন ফ্ল্যাট। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন চার কোটি টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে সোয়া কোটি টাকার। দুদক বলছে, তাঁর স্ত্রীর নামেও রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। বিপুল এই সম্পদ করা হয়েছে ঘুষের টাকায়।

তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম। তাঁর স্ত্রী অপর্ণা রানী দাস একটি কলেজের শিক্ষক। এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।

রাশেদুল ও অপর্ণার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদন ধরে অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ ২২ কোটি ৮০ লাখ ৫৭ হাজার ৭০৭ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছেন দুদকের সহকারী কমিশনার মো. সাজিদ-উর-রোমান।

এই দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাঁর (রাশেদুল) প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জড়িত। দুদককে এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

দুদকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন প্রকৌশলী রাশেদুল। গত বছরের মে মাসে ছুটি নিয়ে বিদেশে পড়তে গেছেন। এখন পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ডে আছেন।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশেদুলের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি এফডিআর হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে সোনালী ব্যাংকের হিসাবে তাঁর বেতনের টাকা জমা হয়। বাকি ব্যাংক হিসাবগুলোতে তিনি ঘুষের টাকা লেনদেন করেছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশেদুলের নামে শেল্‌টেক্‌ ব্রোকারেজ লিমিটেডে একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রয়েছে। এই বিও হিসাবের মাধ্যমে রাশেদুলের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।

দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনুসন্ধানকালে রাশেদুল ও অপর্ণার নামে ব্যাংক হিসাবে থাকা সব টাকা অবরুদ্ধ এবং আবাসিক এলাকার প্লট ও রাশেদুলের নিজ এলাকা কুমিল্লার হোমনায় থাকা একটি জমি জব্দ করা হয়েছে।

রাশেদুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশেদুলের নামে শেল্‌টেক্‌ ব্রোকারেজ লিমিটেডে একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রয়েছে। এই বিও হিসাবের মাধ্যমে রাশেদুলের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।দেড় লাখ টাকার ঘড়ি

রাশেদুলের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ এলজিইডি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিলাসী জীবন কাটাতেন। দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন। নিয়মিত যেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। অনুসন্ধানে এসব হোটেলে লাখ লাখ টাকা বিল দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকার অভিজাত একটি বিপণিবিতান থেকে ২০১৮ সালে চারটি দামি ঘড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত রাশেদুল বেতন পেয়েছেন ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৯ টাকা। সঞ্চয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া করমুক্ত আয় ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৬১ টাকা, মায়ের কাছ থেকে উপহার ৪ লাখ টাকা, বাবা ও দাদির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকার জমি পেয়েছেন, নিকটাত্মীয়র কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকার। পাশাপাশি জিপিএফ (সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল) সুদ ও অন্যান্য আয় ৩ লাখ ২৭ হাজার ১৩৮ টাকা এবং রেমিট্যান্স থেকে ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন রাশেদুল।

দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনুসন্ধানকালে রাশেদুল ও অপর্ণার নামে ব্যাংক হিসাবে থাকা সব টাকা অবরুদ্ধ এবং আবাসিক এলাকার প্লট ও রাশেদুলের নিজ এলাকা কুমিল্লার হোমনায় থাকা একটি জমি জব্দ করা হয়েছে।স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদ

রাশেদুলের স্ত্রী অপর্ণা কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষক। দুদক সূত্র বলছে, অপর্ণার নামে ৯১ লাখ ৯১ হাজার ৮৪২ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকে (কিশোরগঞ্জ শাখা) রয়েছে ৬০ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৮ টাকা। নগদ রয়েছে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অপর্ণা ২০১৭ সালে বিসিএসে (শিক্ষা ক্যাডার) উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৬ টাকা সঞ্চয় করেছেন তিনি। বেতন-ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ১০ হাজার ৮১০ টাকা। আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৮ টাকা।

অনুসন্ধানে দুদক অপর্ণার বৈধ আয় পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৪ টাকা। এর বাইরে তাঁর নামে থাকা সব সম্পদই অবৈধ।

রাশেদুলের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ এলজিইডি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিলাসী জীবন কাটাতেন। দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন। নিয়মিত যেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। অনুসন্ধানে এসব হোটেলে লাখ লাখ টাকা বিল দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।জড়িত সবার জবাবদিহি প্রয়োজন

অনুসন্ধানে দুদক রাশেদুল আলমের বিপুল অর্থসম্পদের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস পায়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাশেদুলের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। পরে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদুল যে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন, সেটা বৈধভাবে সম্ভব নয়। তিনি দুর্নীতির মাধ্যমেই এই বিপুল সম্পদ করেছেন।

গত ১৫ বছরে দুর্নীতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জড়িত। দুদককে এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ষড়যন্ত্রের পরও মাজারে হামলা বন্ধের দাবিতে ‘সমাবেশ সফল’
  • জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামের ভেন্যুও
  • বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালাস পেলেন আমীর খসরু
  • এলজিইডির প্রকৌশলী রাশেদুলের ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাট, কলেজ শিক্ষক স্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ