এল ক্লাসিকো মানেই উত্তেজনা, কিন্তু এবার সেটা ছাড়িয়েছে সীমারেখা। কোপা দেল রে’র ফাইনালে রেফারির দিকে বরফ ছুড়ে বড় বিতর্কে জড়ালেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্ডার অ্যান্তোনিও রুডিগার। এখন তাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বড়সড় শাস্তির রায়ের জন্য।

দে লা কার্তুহার মাঠে অনুষ্ঠিত এই হাইভোল্টেজ ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এমবাপ্পের একটি ফ্রি-কিক না পাওয়ায় রেফারির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন রুডিগার। স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ডাগআউট থেকে রেফারির দিকে বরফের টুকরা ছুড়ে মেরেছেন রুডিগার। মাঠে তখন রীতিমতো বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। রুডিগারকে শান্ত করতে রিয়ালের পাঁচজন স্টাফ সদস্য, বিকল্প গোলরক্ষক আন্দ্রেই লুনিন এবং কোচ লুইস ইয়োপিসকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। শেষ পর্যন্ত লাল কার্ড দেখলেও সহজে মাঠ ছাড়তে চাননি এই জার্মান ডিফেন্ডার।

রুডিগারের এমন আগ্রাসী আচরণের জন্য বড় ধরনের শাস্তি অপেক্ষা করছে বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলো। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের ডিসিপ্লিনারি কমিটি ইতিমধ্যেই বিষয়টি তদন্ত করছে। নিয়ম অনুযায়ী রেফারিকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করলে সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা হতে পারে। তবে যদি তার আচরণকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে শাস্তির মেয়াদ আরও দীর্ঘ হতে পারে।

কয়েক দিনের মধ্যেই রুডিগারের ভাগ্য নির্ধারণ করবে ফেডারেশন। আপাতত, অন্তত ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সুযোগ খুবই কম বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেই বদলি হয়ে যাওয়া ভাসকেজ এ ঘটনার সময় উত্তেজিত হয়ে মাঠে ঢুকে যাওয়ায় তাকেও লাল কার্ড দেখানো হয়। ম্যাচ শেষে জানা যায়, রিয়ালের ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহামও রেফারির দিকে ‘আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে’ এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাকেও পরে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৩-২ গোলে জিতে রেকর্ড ৩২তম বারের মতো কোপা দেল রের শিরোপা জেতে বার্সেলোনা। ম্যাচের পর রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির সংবাদ সম্মেলনেও এসেছে রুডিগারের প্রসঙ্গ। তবে আনচেলত্তি এ ঘটনা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি, ‘আমি জানি না কী হয়েছে, আমাদের (ভিডিও) দেখতে হবে। তবে রুডিগার অসাধারণ খেলেছে। ক্লান্ত হওয়ার আগপর্যন্ত চেষ্টা করে গেছে। আমি শুধু তার চেষ্টার প্রশংসা করতে পারি।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের প্রভাব পুরো দেশে। ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে কাঠফাটা রোদ। গরমে অস্বস্তিতে মানুষ। ঠিক উল্টো চিত্র উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায়। বৃষ্টি আর কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙে বন্ধ হয়েছে রাস্তাঘাট। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। ঝড়বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন তিনজন।
আবহাওয়াবিদরা কোথাও বৃষ্টি, কোথাও গরমকে আবহাওয়ার ‘হেঁয়ালি আচরণ’ হিসেবে দেখেছেন। তারা বলছেন, কোথাও বৃষ্টি, কোথাও খরা। গরমের সময় হঠাৎ বৃষ্টি। আবার শীতকালে নামছেই না পারদ। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অশনিসংকেত।

কালবৈশাখীতে রংপুরের কয়েকটি উপজেলার বেশ কিছু এলাকার বাড়িঘর-ফসল তছনছ হয়ে গেছে। গাছ উপড়ে ও ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে এ ঝড় শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিটের এই ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তারাগঞ্জ, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলায়। এ ছাড়া রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখীতে ৯টি ইউনিয়নের কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা। খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। নষ্ট হয়েছে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।

কালবৈশাখীতে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া এই ঝড় প্রায় আধা ঘণ্টা সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে তাণ্ডব চালায়। স্থানীয়রা জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, ভুট্টা, আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পর জেলার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়কের ওপর গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা গাছ সরিয়ে যান চলাচল সচল করেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে কালবৈশাখীতে বড়ভিটা বাজারের ১৪ দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের। 
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে বলা যাবে।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় শনিবার রাতে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আধা ঘণ্টা ধরে চলা শিলাবৃষ্টিতে টিনের চাল ফুটো হয়ে যায় এবং অসংখ্য কাঁচা ঘর ভেঙে পড়ে। ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঝড়ে বহু বাড়ির চাল উড়ে গেছে। অনেক ঘর সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। আশ্রয়ের অভাবে বহু পরিবার রাত কাটিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
রোববার সকালে বরগুনার আমতলীতে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে রিপন হাওলাদার নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এদিন দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরফলকন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে শাহানাজ বেগম কনা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নোয়াখালী সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আবুল কালাম কালা নামে এক দিনমজুর প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার জালিয়াল গ্রামের দালাল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার ঝড়ে ফসল, বিশেষ করে ভুট্টা, বোরো ধান এবং শাকসবজি তছনছ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এলাকার বেশ কিছু টিনের ঘর এবং কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে পড়ে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকালের সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধিরা]
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ